২৬ আগস্ট, রাত ১১টা। ঘটনাস্থল রাজধানীর মগবাজারের পেয়ারাবাগ। দীর্ঘদিন বাসা ভাড়া দেন না চলচ্চিত্র নির্মাতা গাজী মাহবুব। মহল্লার বিভিন্ন দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাছেও দেনাগ্রস্ত তিনি। এ নিয়ে সালিস বৈঠকে বসেন বাসা মালিক আওলাদ মিয়া। পাশ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দা চলচ্চিত্র অভিনেতা কাকন মিরাজ। ওই সময় কাকতালীয় ভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছান তিনি। গাজী মাহবুবের কাছে টাকা পান তিনিও। ধার নেয়া টাকা দীর্ঘ চার বছরেরও বেশি সময় যাবত ফেরৎ না দেয়ার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। সেই টাকা চাওয়াতে ক্ষিপ্ত হয়ে আক্রমণাত্মক আচরণ করেন গাজী মাহবুব। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে বাকবিতন্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে সেখানে। স্থানীয়দের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হলে নিজ বাসায় ফিরে যান কাকন মিরাজ। ঘটনা এখানেই শেষ হলে ভালো হতো। কিন্তু না! এ ঘটনায় হাতিরঝিল থানায় সন্ত্রাসী হামলার অভিযোগ তুলে একটি মামলা দায়ের করেন গাজী মাহবুব।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শাহজাহান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। মামলার মূল আসামী কাকন মিরাজকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এ প্রসঙ্গে চলচ্চিত্র অভিনেতা কাকন মিরাজ বলেন, ‘আজ থেকে চার বছর আগে আমার কাছ থেকে টাকা ধার নেয় গাজী মাহবুব। শুধু তাই নয় আমার বাসায় যাওয়া আসার সুবাদে বিদ্যুৎ বিলের জন্য রাখা খামভর্তি নগদ টাকা চুরি করে পালাই সে। এ ঘটনার দিনগত রাতে আমি হাটতে বের হই। পেয়ারাবাগের দিকে যেতেই দেখি বেশ কয়েকজনের সঙ্গে বসে আছে মাহবুব। তার কাছে গিয়ে পাওনা টাকাটা দাবি করেছি মাত্র। আর সে উল্টা আমার সঙ্গে আক্রমণাত্মক আচরণ করে। সেখানকার লোকজনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হলে আমি বাসায় চলে আসি। পরে শুনি আমার নামে সন্ত্রাসী হামলার অভিযোগ তুলে মামলা করা হয়েছে। অথচ এমন কোন ঘটনা সেখানে ঘটেনি যেটাকে সন্ত্রাসী হামলা বলা যায়। এই মামলা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। নিজ স্বার্থে হাসিলে নিজের পরিচয় ও সংগঠনকে ব্যবহার করছে গাজী মাহবুব।’
এ প্রসঙ্গে নির্মাতা গাজী মাহবুব বলেন, ‘হামলাকারী আমার পূর্ব পরিচিত। আমার বিপদে আপদেও সে আমার পাশে দাঁড়িয়েছে। তবে তার সঙ্গে ছোট খাটো কিছু বিষয় নিয়ে দ্ব›দ্ব ছিল। আমার কাছে টাকা পাবেন বলে শুনেছি। তবে আমি চাই যে কোন অপরাধের যথাযথ বিচার হোক।’
বেশ কিছু গণমাধ্যমে ‘সন্ত্রাসী হামলার শিকার গাজী মাহবুব’ বলে শিরোনাম করা হচ্ছে। আসলেই কী এটি সন্ত্রাসী হামলা ছিল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হামলাকারী একাই ছিল এবং তার হাতে কোন অস্ত্র-সস্ত্র ছিল না। তবে হাতে হ্যান্ড গ্লাভস পরা ছিল। সে আমার মাথায় ও কান বরাবর কিল ঘুষি মারে। তাতে আমি মারাত্মক যখম হই। এমন গুরুতর আঘাতের ফলে আমার কানের পর্দা ফেটে গিয়ে আমি কিছুটা কম শুনতে পাচ্ছি।’
খবর আছে, গুণী চলচ্চিত্র নির্মাতা বদিউল আলম খোকনের সঙ্গে অসাদাচরণের অভিযোগে গাজী মাহবুবকে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটি থেকে বহিষ্কার করা হয়। গাজী মাহবুবের বিরুদ্ধে অভিযোগ, গাজী মাহবুব এফডিসিতে সিনিয়র পরিচালকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন এবং আচরণ বিধি লঙ্ঘন করে পুলিশি ঝামেলা বাঁধান। শুধু তাই নয়, হাতে ভূয়া ব্যান্ডেজ জড়িয়ে হাত ভেঙে যাওয়ার অভিনয় করেন তিনি। যেটা পরিচালক সমিতির জন্য মানহানিকর। তাই তার সদস্যপদ বাতিল করা হয়।
মগবাজার পেয়ারাবাগ এলাকায় ঘুরে জানা যায়, চলচ্চিত্র পরিচালক পরিচয়ে দীর্ঘদিন যাবত একটি ভাড়া বাসাতে থাকেন গাজী মাহবুব। সেখানে প্রায় চার মাসের বাসা ভাড়া বাকী তার। মহল্লার বিভিন্ন দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকরা তার কাছে লক্ষাধিক টাকা পান। পাওনা টাকা চাইতে গেলে হুমকী, ধামকী থেকে শুরু করে ছলেবলে কৌশলে পুলিশি ঝামেলায় ফেলেন তিনি। কেউ কেউ মারধরের অভিযোগও তুলেছেন তার বিরুদ্ধে।
উল্লেখ্য, গাজী মাহবুব জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার প্রাপ্ত নির্মাতা এবং চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সাবেক কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য। তিনি ‘প্রেমের তাজমহল’ ছবি থেকে শুরু করে ‘আমার পৃথিবী তুমি’, ‘রাজা সূর্য খাঁ’, ‘শিরী ফরহাদ’ ছবি নির্মাণ করেছেন। অপরদিকে চলচ্চিত্র অভিনেতা কাকন মিরাজ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচিত কমিটির সাবেক কার্যনির্বাহী সদস্য। তিনি ‘মুক্তির সংগ্রাম’, ‘সাবাশ বাঙালী’, ‘স্বামী নিয়ে যুদ্ধ’, ‘আদরের ভাই’, ‘ফাঁসি চাই’, ‘মনের অজান্তে’সহ ডজন খানেক ছবিতে নায়কের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এ ছাড়াও এশিয়াটিকের প্রযোজনায় আসাদুজ্জামান নূরের পরিচালনায় ‘পেপসি’র বিজ্ঞাপনে বেশ সাড়া ফেলেন তিনি।