চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ সন্ত্রাসী মুন্নাফের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে বটিয়াঘাটা উপজেলার সুরখালি ইউনিয়নের গাওগরা গ্রামের মানুষ। খুন-ডাকাতি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা, জমি দখলসহ নানা অভিযোগ এই দস্যু মুন্নাফের বিরুদ্ধে। মুন্নাফের আওয়ামী লীগের কোন দলীয় পদে না থেকেই শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ সমর্থক এই পরিচয়েই বেপোরোয়া সে। তবে এই পরিচয়ের আগেই রয়েছে তার ভিন্নরুপ। এক সময়ের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও দস্যু হিসেবে এলাকায় অধিক পরিচিতি তার। সরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অস্ত্র জমা দিলেও এখন ভিন্ন কৌশলে তান্ডব চলে এই দস্যু মুন্নাফের।
গাওগরা গ্রামের মৃত. আব্দুল গফুর বিশ্বাসের ছেলে মুন্নাফ বিশ্বাস (৪৫) এবার দশম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে বেপোরোয়া মারপিটসহ শ্লীলতহানির ঘটনা ঘটিয়েছে। ভাংচুর করেছে ওই স্কুলছাত্রীর বাবার দোকানঘরটিও। মারপিট করে দোকানঘর তছনছ করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয় ওই স্কুলছাত্রীর পরিবারকে। গত মঙ্গলবার দুপুরে গাওগরা বাজারে এ ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে ওই দিন রাতে বটিয়াঘাটা থানা পুলিশ স্কুলছাত্রীর পরিবারকে বাড়িতে তুলে দেয়। এ ঘটনায় বটিয়াঘাটা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করে করেন ওই স্কুলছাত্রীর মা মরিয়ম বেগম।
মরিয়ম বেগম জানান, গাওগরা বাজারে আমাদের দোকানটি সন্ত্রাসী মুন্নাফ জোর পূর্বক দখল করতে চাই। আমরা দখলে বাঁধা দেই মূলত এই নিয়েই আমাদের সঙ্গে তার শত্রুতা। মঙ্গলবার দুপুরে স্কুলছাত্রী মেয়ে রুকইয়া খাতুন প্রাইভেট পড়ে আমাদের দোকানে আসে। দূর থেকে মুন্নাফ অশ্লীলভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। গালিগালাজ করতে নিষেধ করায় আমার মেয়েকে মারপিট করতে শুরু করে। মেয়ে দৌড়ে দোকানে ভিরতে প্রবেশের পর দোকানে ঢুকেও মারপিট ও দোকানের মালপত্র ভাংচুর চালায় মুন্নাফ।
তিনি আরও জানান, আমি বাঁধা দিতে গেলে আমাকেও মারপিট করে। দোকানের পেছনেই আমাদের বাড়ি। এরপর আমাদের দোকান ও বাড়ি থেকে বের করে দেয় মুন্নাফ। পরবর্তীতে মেয়েকে ডুমুরিয়া হাসপাতালে ভর্তি করে থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ রাতে আমাদের বাড়িতে তুলে দিয়ে যায়। সন্ত্রাসী মুন্নাফকে পুলিশ খুঁজেও পায়নি। সন্ত্রাসী মুন্নাফের ভয়ে আমার স্বামী হালিম বিশ্বাস ও ছেলে পলাশ বিশ্বাস দীর্ঘদিন বাড়ি ছাড়া অবস্থায় রয়েছে। শুধু আমার পরিবার নয় এই গ্রামের এমন অনেক পরিবার রয়েছে তাদের সহায় সম্বল কেড়ে নিয়েছে সন্ত্রাসী মুন্নাফ।
ঘটনার বিষয়ে স্থানীয় সুরখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাদী সরদার বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। তবে এখানে আমার কিছু করার নেই। এছাড়া মুন্নাফসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। কিছু বলতে গেলেই দোষ হবে। চুপ থাকাই ভালো। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতেও ভয় পায় এলাকার মানুষ।
ক্রসফায়ারে নিহত খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী লিটুর অন্যতম সহযোগী মুন্নাফ। এক সময়ে সুন্দরবনসহ দক্ষিণাঞ্চলে সন্ত্রাসের রাজত্ব চালিয়েছে মুন্নাফ বিশ্বাস। ২০০০ সালে সরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বেশ কয়েকটি অস্ত্র জমা দেয় মুন্নাফ। তবে কিছু অস্ত্র জমা দিলেও বৃহত অংশ থেকে যায় তার তত্বাবধায়নে। কিছুদিন যেতে না যেতেই আবারও শুরু করে দখলবাজি আর চাঁদাবাজি। এসব ঘটনায় তৎকালীন সুরখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ জাহান আলী প্রতিবাদ করায় তাকে খুন হতে হয়। এই হত্যা মামলায়ও প্রধান আসামী দস্যূ মুন্নাফ। মুন্নাফের আপন ভাই মাসুদ বিশ্বাস ও মারুফ বিশ্বাসও এই হত্যার সহযোগীর ভূমিকা পালন করে। মামলার স্বাক্ষীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে এই হত্যা মামলা থেকে রেহাই পেয়ে যায় এই সন্ত্রাসী।
চাঁদাবাজি দখলবাজি আর সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে গাওগরা বাজারে প্রায় সবটুকুই এই সন্ত্রাসী মুন্নাফের দখলে। রয়েছে নিজস্ব প্রাইভেটকার, দুই কোটি টাকা ব্যয়ে আলীসান বাড়ি। সম্প্রতি গাওঘরা বাজারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সরকারি রাস্তা দখল করে ইট ও বালুসহ বিভিন্ন পণ্যের ব্যবসা করাসহ বাজারের মজিদ শেখ, জব্বার গোলদার ও সাহেব আলী গাজীসহ আরও অনেকের জমিও দখল করে নিয়েছে দস্যু মুন্নাফ। এই ঘটনায় স্থানীয় সাংবাদিক এসএম ফরিদ রানা একটি সংবাদ করায় তাকেও হত্যার হুমকি দেয় এই মুন্নাফ। এ ঘটনায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন ওই সাংবাদিক।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে মুন্নাফ বিশ্বাসের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
অন্যদিকে, মুন্নাফের সন্ত্রাসী কর্মকা-ের বিষয়ে বটিয়াঘাটা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রবিউল কবির জানান, মুন্নাফের সন্ত্রাসী কর্মকা- বা দখলবাজির বিষয়ে কেউ থানায় অভিযোগ দেয় না। অভিযোগ পেলে সে যেই হোক না কেন তার বিরুদ্ধেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, স্কুলছাত্রী মেয়েকে মারপিটের অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়া হয়েছিল তবে স্থানীয়রা কেউ ঘটনাটি স্বীকার করেনি।