চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ নির্বাচনের দিন রাজধানীর গেন্ডারিয়ায় দুই সাংবাদিকের মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে তাদের আটক রাখাসহ ভয়ভীতি প্রদর্শনকারী ছাত্রলীগ নেতা শহিদুল ইসলাম খান রিয়াদের অপরাধ অপকর্মের নানা কাহিনী বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। শিবির ক্যাডার হিসেবে একদা শিবিরের মেসগুলো দেখভালের দায়িত্ব পালনকারী রিয়াদ ক্ষমতাসীন দলের এমপিপুত্রের হাত ধরে ছাত্রলীগে পুনর্বাসিত হয়েই বিশাল দাপুটে হয়ে উঠে।
অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা পরিচালনার মাধ্যমে মাত্র পাঁচ বছরে অর্থবিত্তে প্রতাপশালী হয়ে ওঠা রিয়াদরাই এখন স্থানীয় রাজনীতির নেপথ্য নিয়ন্ত্রক। ভারতীয় ক্ষুদে অস্ত্র চোরাচালানের মাধ্যমে আমদানি করে তা কিস্তিতে বাজারজাত করছে রিয়াদের সিন্ডিকেট। এ রমরমা বাণিজ্য বহাল রাখতে সে ওয়ারী জোনের দুই এসি, চার ওসিসহ অন্তত ১০ পুলিশ কর্মকর্তাকে মাসোহারা দেয়, আজ্ঞাবহ রাখে। তার অস্ত্র ব্যবসার আদ্যোপান্ত জেনে ২০১৭ সাল থেকেই ডিবি পিছু লাগে। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে অদ্যাবধি বহাল তবিয়তে রয়েছে রিয়াদ।
গেন্ডারিয়া থানা ছাত্রলীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম খান ওরফে রিয়াদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ব্যবসার অভিযোগে পুলিশের বাদী হওয়া একটি মামলারও সন্ধান পাওয়া গেছে মতিঝিল থানা থেকে। ২০১৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পিস্তল, গুলিসহ কমলাপুর বাজার রোডে দুই যুবককে আটকের সূত্র ধরে রিয়াদের অস্ত্র ব্যবসায় জড়িত থাকার তথ্য পায় পুলিশ। পরদিন আটক দুই যুবকসহ রিয়াদকেও আসামি করে মতিঝিল থানায় মামলাটি রুজু হয়। মামলা সূত্রে জানা যায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে ২১ ফেব্রুয়ারি কমলাপুর বাজার রোডের আনার বেকারির পশ্চিম পাশে অস্ত্র কেনা-বেচা হবে। সে অনুযায়ী দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ ওই এলাকায় গেলে দুই যুবক পালানোর চেষ্টা করতেই পুলিশ তাদের আটক করে। আটক দুজন হলেন নাহিদুল ইসলাম (৩০) ও নাজমুল হোসেন ওরফে নোমান (২৯)। তাদের তল্লাশি করে নাহিদুল ইসলামের হাতে থাকা খাকি রঙের একটি শপিং ব্যাগে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও দুটি গুলি পাওয়া যায়। পরে তাদের দেওয়া তথ্য অনুসারে নোমানের মতিঝিলের কবি জসীমউদ্দীন রোডের ভাড়া বাসায় অভিযান চালিয়ে আরও দুটি বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন ও গুলি উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নোমান পুলিশকে জানান, স্থানীয় বড় ভাই কামরুল ইসলাম (২৯) ও রিয়াদ (২৮) বিক্রির জন্য তার কাছে অস্ত্র ও গুলিগুলো রাখতে বলেছিলেন।
২২ ফেব্রুয়ারি নাহিদুল, নোমান, কামরুল ও রিয়াদকে আসামি করে অস্ত্র আইনে মামলা হয়। মামলার এজাহারে প্রথম তিন আসামির পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা দেওয়া হলেও রিয়াদের পূর্ণাঙ্গ নাম ও ঠিকানা দেওয়া হয়নি। তবে রিয়াদের নামের সঙ্গে তার মোবাইল নম্বর দেওয়া ছিল। এই মোবাইল নম্বর ধরে খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে রিয়াদের পুরো নাম শহিদুল ইসলাম খান। তিনি গেন্ডারিয়া থানা ছাত্রলীগের সভাপতি। অপর আসামি কামরুল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাবেক সহ সম্পাদক বলে জানিয়েছিলেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মতিঝিল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলাম আকন্দ।
তিনি আরও বলেন, গ্রেফতারের পর নাহিদুল ও নোমানকে তিনদিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। দু’জনই ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে দুজন বলেছেন, অস্ত্র ও গুলিগুলো তারা কামরুল ও রিয়াদের কাছ থেকে পেয়েছেন।