সাগরদী ধান গবেষণা এলাকার হামিদ খান সড়কের বাসিন্দা ছিলেন রেজাউল করিম রেজা। পরবর্তীতে তিনি পুলিশের নির্যাতনে মারা যান।
একই এলাকায় বসবাস এসআই মহিউদ্দিনের। সেখানকার বাসিন্দাদের কাছে আতঙ্ক ছিলেন তিনি।
প্রথমে কোতোয়ালি মডেল থানা এবং পরবর্তীতে ডিবি পুলিশে কর্মরত অবস্থায় এলাকায় আতঙ্কের রাজত্ব গড়ে তোলেন তিনি। যখন যাকে খুশি গ্রেফতার, মিথ্যা অভিযোগে মামলা, অর্থ আদায়, নির্যাতন- এসবই ছিল তার নৈমিত্তিক ঘটনা। বরিশালে ডিবি পুলিশের নির্যাতনে শিক্ষানবীশ আইনজীবী রেজাউল করিম রেজার মৃত্যুর পর বিষয়টি উঠে আসে।
শের-ই-বাংলা সড়কের বাসিন্দা মো. কামাল যুগান্তরকে বলেন, ‘২০১৮ সালের ২৮ নভেম্বর বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি অভিযোগের সাক্ষী দিতে গিয়েছিলাম। অভিযোগটি ছিল কোতোয়ালি থানার তৎকালীন এসআই শামীমের ঘুষ দাবির বিষয়ে। থানায় ডেকে নিয়ে গুপ্তচরবৃত্তি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতারের পর তদন্তভার দেয়া হয় এসআই মহিউদ্দিনকে।
তিনি বলেন, কোনো তদন্ত না করে তিনি আমাকে হয়রানি করে চলছেন। কিছুদিন আগেও হুমকি দিয়ে গেছেন যে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলে আমাকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।’
রূপাতলী গ্যাসটারবাইন এলাকার বাসিন্দা রিপন মৃধা, রিপন আকন ও আফজাল হোসেন মিলে বিভিন্ন এলাকায় জমির ব্যবসা করে। একদিন তাদেরকে ডেকে নেন কোতোয়ালি থানার তৎকালীন এসআই মহিউদ্দিন। দাবি করেন ৩ লাখ টাকা। না দিলে দেন ক্রসফায়ারের হুমকি।
রিপন মৃধা বলেন, টাকা না দেয়ায় ২০১৬ সালের ১৯ অক্টোবর আফজাল হোসেন ও ২৭ অক্টোবর রিপন আকনকে মিথ্যা মামলা দিয়ে থানায় নিয়ে সিলিংয়ে ঝুলিয়ে মারধর করা হয়। এমন কি নাকে-মুখে গরম পানি ঢেলে শেখানো স্বীকারোক্তি আদালতে দিতে বাধ্য করা হয় তাদের।
রূপাতলী ২৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মাহাবুব মোল্লাকেও ক্রসফায়ারের হুমকি দিয়েছিল মহিউদ্দিন।
মাহাবুব মোল্লার স্বজনরা জানিয়েছেন, ‘২০১৬ সালের শেষের দিকে উকিল বাড়ি সড়কের একটি জমি নিয়ে দ্বন্দ্বে মাহাবুব মোল্লাকে প্রকাশ্যে ক্রসফায়ারের হুমকি দিয়েছিল মহিউদ্দিন।
হয়রানি থেকে রেহাই পায়নি ২৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শরীফ মো. আনিছুর রহমানও। যুগান্তরকে তিনি বলেন, ‘যেখানেই জমি ক্রয়-বিক্রয় হতো, সেখানেই নাক গলাতো মহিউদ্দিন। ২০২০ সালের মাঝামাঝি আমার ওয়ার্ডের একটি জমির বিরোধ নিয়ে সালিশ করতে গিয়ে টাকা দাবি করেন মহিউদ্দিন। সেখানে অস্ত্রের ভয় দেখান তিনি। এমনকি ক্রসফায়ারেরও হুমকি দেন।
রূপাতলী চান্দু মার্কেট শের-ই-বাংলা সড়কের বাসিন্দা হারিছুল ইসলাম জানান, শের-ই-বাংলা সড়কে আমার পৈত্রিকসূত্রে প্রাপ্ত জমিতে নজর পরে মহিউদ্দিনের। ২০১৯ সালের ২২ জুলাই রাত সাড়ে ১০টায় আমাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে অস্ত্র দেখিয়ে বলে, তুই ওই জমির কাছে যাবি না। গেলে এনকাউন্টার দিয়ে দেব। মহিউদ্দিনের আক্রমণাত্মক আচরণে আমি ভয় পেয়ে যাই। নিরুপায় হয়ে চিৎকার দিলে লোকজন বাইরে বেরিয়ে আসলে আমি বেঁচে যাই। তার কথামত সম্পত্তি ছেড়ে না দেয়ায় আমাকে অন্যের পুরাতন একটি ইয়াবা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে চালান দিয়ে দেয়।
হারিছুল বলেন, এই নিয়ে পুলিশ কমিশনার বরাবর গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাইনি।
এলাকাবাসী জানান, শের-ই-বাংলা সড়কের বাইতুল আমান মসজিদের সভাপতি সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা জালাল হোসেন ও আব্দুল জলিলকে একবার বিনা কারণে মসজিদের সামনেই অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এসআই মহিউদ্দিন। মহিউদ্দিনকে ওই মসজিদ কমিটির সভাপতি না করায় এভাবে অপদস্থ করা হয়েছে বলে জানান মুসল্লিরা।
এছাড়া চান্দু মার্কেট এলাকার রুবেল নামে এক দোকানির কাছে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন এই মহিউদ্দিন। রুবেল বলেন, ‘তার ভয়ে দোকান নিয়ে ৯ নং রোডে চলে এসেছি।’
২৫ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা রফিক মীরা, মুনসুর মীরা, মনির মিরাকে ২০১৯ সালে কোতোয়ালি থানায় আটকে নির্যাতন করে তাদের জমি দখল করে নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে।
এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য এসআই মহিউদ্দিনের মোবাইল নম্বরে বেশ কয়েকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি তা ধরেননি।
বরিশালের পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান যুগান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কাছে যেসব অভিযোগ এসেছে তার সবগুলোরই তদন্ত চলছে। ইতোমধ্যে তাকে পুলিশ লাইনসে ক্লোজ করা হয়েছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’