বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে মারা গেছেন উল্লেখ করে খুলনা বিএনপি নেতৃবৃন্দ বলেছেন, আরাফাত রহমান কোকো রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হয়েও, রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে তার মৃত্যুবরণের সবচেয়ে বড় কারণ ছিল রাজনৈতিক প্রতিহিংসা।
বুধবার (২৪ জানুয়ারি) বিকাল ৪টায় কেডি ঘোষ রোডস্থ বিএনপি কার্যালয়ে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক সফল প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর ৯ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। তারা বলেন, এ দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কময় ১/১১ এর পর আরাফাত রহমান কোকোকে গ্রেপ্তার করা হয় মিথ্যা মামলায়। মিথ্যা অজুহাতে পরে তাকে নির্বাসিত করা হয়। বিদেশের মাটিতে ভালো চিকিৎসা না পেয়ে তাকে চলে যেতে হয়েছে। আরাফাত রহমান কোকো একজন অসাধারণ ক্রীড়া সংগঠক ছিলেন। তিনি নিজে খেলাধুলা করতেন এবং খেলাধুলার সঙ্গে যুক্ত থাকতেন। বাংলাদেশের ক্রিকেট আজ যে জায়গায় এসেছে এর প্রধান নায়ক ছিলেন আরাফাত রহমান কোকো। তিনি ক্রিকেটকে সংগঠিত করতে, প্রতিষ্ঠিত করতে, মানোন্নয়ন করতে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে তিনি অবদান রেখেছেন। তিনি এদেশে একজন ক্রীড়ামোদী হিসেবে ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে এ দেশের মানুষের কাছে স্মরণীয় হয়ে আছেন।
মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক স ম আব্দুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং কাজী মিজানুর রহমানের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন, বেগম রেহেনা ঈসা, অ্যাড. নুরুল হাসান রুবা, কাজী মাহমুদ আলী, শাহিনুল ইসলাম পাখি, আহসান উল্লাহ বুলবুল, মিজানুর রহমান মিলটন, এড, কানিজ ফাতেমা আমিন, সাঈদ হাসান লাভলু, মাঈদুল হক টুকু, মো. আসাদুজ্জামান, আ. হালিম শেখ, শাকিরুল্লাহ তুহিন, শেখ সোহেল, গোলাম মোস্তফা ভুট্টো, জাহাঙ্গীর হোসেন, এড. এস এম মারুফ হোসেন, সাইফুল ইসলাম মল্লিক, শাহনাজ সরোয়ার, কাওসারী জাহান মঞ্জু, পারভিন বেগম, লাকি আজমী, সোনিয়া খান, হোসনে আরা চাদনী, মোল্লা নুরু ইসলাম, সায়েব আলী, ইসলাম বিশ^াস, হাবিবুর রহমান বিপুল, মাসুদ খান প্রমূখ। আলোচনা শেষে মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর বিদেহী আত্মর শান্তি কামনায় বিশেষ দোয়া করা হয়।
উল্লেখ্য, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠপুত্র আরাফাত রহমান কোকোর জন্ম ১৯৬৯ সালে ঢাকায়। শিক্ষাজীবনে ঢাকার বি এফ শাহীন কলেজে লেখাপড়া করেন তিনি। ১৯৬৯ সালে জিয়াউর রহমান সপরিবারে ঢাকায় চলে এলে কিছুদিন জয়দেবপুরে থাকার পর বাবার চাকরির সুবাদে চট্টগ্রামের ষোলশহর এলাকায় বাস করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে মায়ের সঙ্গে কিছুদিন আত্মগোপন করে থাকার পর ১৬মে নৌপথে পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় চলে আসেন তিনি। এরপর বড় খালা খুরশিদ জাহানের বাসায় ১৭ জুন পর্যন্ত থাকেন পরিবারের সবাই। ২ জুলাই সিদ্ধেশ্বরীতে এস আব্দুল্লাহর বাসা থেকে পাকিস্তানি সেনারা মা খালেদা জিয়া ও বড় ভাই তারেক রহমানসহ আরাফাত রহমান কোকোকে বন্দি করে। তাঁরা ১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে বন্দি ছিলেন। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলে মা-ভাইসহ আরাফাত রহমান কোকো মুক্তি পান। ব্যক্তি জীবন: আরাফাত রহমান কোকোর বাবা জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতি, মা খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী এবং বড় ভাই তারেক রহমান বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হলেও আরাফাত রহমান কোকো ছিলেন অনেকটা পর্দার আড়ালে। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এড়িয়ে খেলাধুলা, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সামাজিক কর্মকাণ্ডেই সময় ব্যয় করতেন তিনি। পারিবারিক জীবন: আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলী রহমান। তাঁদের জাফিয়া রহমান ও জাহিয়া রহমান নামের দুই কন্যাসন্তান রয়েছে। ক্রীড়াঙ্গনে আরাফাত রহমান কোকো: ২০০৩ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন আরাফাত রহমান কোকো। এ ছাড়া ওল্ড ডিওএইচএস ক্লাবের চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। জেল-জুলুম, প্রবাসজীবন গ্রহণ: ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির মাধ্যমে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসে। ওই বছরের ৩ সেপ্টেম্বর ভোরে সেনানিবাসের বাড়ি থেকে মা খালেদা জিয়ার সঙ্গে গ্রেপ্তার হন আরাফাত রহমান কোকো। ২০০৮ সালের ১৮ জুলাই চিকিৎসার জন্য সপরিবারে ব্যাংকক যান তিনি। এরপর চিকিৎসা শেষে মালয়েশিয়া চলে যান এবং সেখানেই সপরিবারে বসবাস করে আসছিলেন মৃত্যুর আগপর্যন্ত। ২০১২ সালে খালেদা জিয়া সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা করাতে গেলে সেখানে আরাফাত রহমান কোকোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। ২০১৩ সালের জুনে যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময়ে খালেদা জিয়া ব্যাংককে যাত্রাবিরতি দিয়ে ছোট ছেলেকে দেখতে গিয়েছিলেন। সেটাই ছিল মায়ের সঙ্গে আরাফাত রহমান কোকোর শেষ সাক্ষাৎ। সবশেষ ২০১৪ সালে সৌদি আরবে জিয়া পরিবার একত্রিত হলেও আসতে পারেননি আরাফাত রহমান কোকো।