উপকূলীয় এলাকায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে এক হাজার ১৭২ কোটি ৩২ লাখ টাকার ‘খুলনা জেলার পোল্ডার নং- ১৪/১ পুনর্বাসন’ প্রকল্প একনেকে পাস হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত একনেক সভায় প্রকল্পটি পাস হয়। প্রকল্পটি পাস হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন উপকূলীয় জনপ্রতিনিধি ও নাগরিক সমাজ। তারা দ্রুত প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শুরুর তাগিদ দিয়েছেন।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, একনেক বৈঠকে পাস হওয়া ‘খুলনা জেলার পোল্ডার নং-১৪/১ পুনর্বাসন’ শীর্ষক প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে, এক হাজার ১৭২ কোটি ৩২ লাখ টাকা। যা খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ও উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নে বাস্তবায়ন করা হবে। চলতি বছরেই প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাজ শুরু করবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। যা ২০২৪ সালের জুনে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় দক্ষিণ বেতকাশি ইউনিয়ন ও উত্তর বেতকাশির (আংশিক) ৩১ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার বাঁধ পুনর্র্নিমাণ করা হবে। এর মধ্যে বিধ্বস্ত ১৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ মাটি, জিওব্যাগ দিয়ে নতুনভাবে নির্মাণ করা হবে। ১০ কিলোমিটার বাঁধে ব্লক ডাম্পিং, বাঁধের ঢালে ব্লক স্থাপন ও পুরান কিছু ব্লকের সংস্কার কাজ করা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
প্রকল্পটি অনুমোদন হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন উপকূলীয় জনপ্রতিনিধি ও নাগরিক ফোরামের আহ্বায়ক মীর মোস্তাক আহমেদ রবি এমপি, যুগ্ম আহ্বায়ক আক্তারুজ্জামান বাবু এমপি ও গ্লেরিয়া ঝর্ণা সরকার এমপি এবং সদস্য সচিব সচিব নিখিল চন্দ্র ভদ্র। আজ বুধবার এক বিবৃতিতে তারা বলেছেন, জনগণের আকাঙ্খাকে গুরুত্ব দিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার টেকসই বেড়িবাঁধ সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা আশা করছি, চলতি শীত মৌসুমে প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শুরু হবে। উপকূলের টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও জীবন-জীবিকা রক্ষায় সরকারের নেওয়া অন্যান্য প্রকল্পগুলো দ্রুত অনুমোদনের আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
অনুরুপ বিবৃতি দিয়েছে, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন, সমাজ কল্যাণ ও উন্নয়ন সংস্থা (স্কাস), ফেইথ ইন একশন, লিডার্স এবং সচেতন সংস্থাসহ বিভিন্ন সংগঠন। বিবৃতিতে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তন ও ঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ নানা কারণে উপকূলীয় বাঁধগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পোল্ডারিংয়ের কার্যকারিতা বিলোপ হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে পোল্ডার এলাকাকে রক্ষা করতে হলে স্থায়ী বাঁধ তৈরি অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা দীর্ঘ দিন কথা বলছি, দেন-দরবার করছি। যার অংশ হিসেবে এই প্রকল্পটি পাস হয়েছে। জনগণের দাবি অনুযায়ী, পর্যায়ক্রমে পুরো উপকূলীয় এলাকাকে টেকসই বেড়িবাঁধের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয় বিবৃতিতে।
উল্লেখ্য, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি বা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব বিবেচনা করে ‘খুলনা জেলার পোল্ডার নং- ১৪/১ পুনর্বাসন’ শীর্ষক প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়। কারণ উপকূলে ঝুঁকিপূর্ণ জনপদ খুলনার কয়রার দক্ষিণ বেতকাশী ইউনিয়ন। ঘূর্ণিঝড় আইলা-আম্ফান-ইয়াসে বাঁধ ভেঙে এ অঞ্চলের আংটিহারা, মেদের চর, হরিহরপুর শাকবাড়িয়া, পদ্মপুকুর জোড় শিং, চোরামুখসহ বিস্তীর্ণ এলাকা লবণপানিতে তলিয়ে যায়। কৃষিজমি ও চিংড়ি ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি জীবন-জীবিকা হুমকিতে পড়েছে। দুর্যোগপূর্ণ এ অঞ্চলে মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল টেকসই বেড়িবাঁধ।