একজন তরুণ সংবাদকর্মীর সংবাদ সংগ্রহে এবং তা প্রকাশে থাকে নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা। যেটা তরুণরাই উপলব্ধি করে পদে পদে। স্বল্প চলার এ পথে দেখেছি, আপনি একজন সিনিয়র সাংবাদিক হয়েই ভুলে যান প্রথম জীবনের চলার পথের ইতিহাস, ভুলে যান উদীয়মান একজন সংবাদকর্মী বেড়ে ওঠার গল্প। একটা সময় এসে আপনার পথচলার পরিধি বেড়ে যায়, বাড়তে থাকে পরিচিতি। তখনি আপনি একজন মফস্বল তরুণ সংবাদকর্মীকে দেখতে শুরো করেন ছোট করে। পদে পদে তাকে অপমানিত করেন। সে যখনি আপনাকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে ফেলে তখনি আপনি শুরু করে দেন অবহেলা। যেটা একের পর এক চলতে থাকে। দেখাতে থাকেন আপনার নামেমাত্র ব্যস্ততাগুলো। একজন সিনিয়র সাংবাদিক হয়ে কখনও কি একবারের জন্য হলেও নিজের সেই সূচনালগ্নের কথা স্মরণ করেছেন? যে সময় আমার মতো অযোগ্য মেধাহীন, কুৎসিত ছেলের মতো আপনাকেও কেউ চিনতো না। পাত্তা পেতেন না কোন অনুষ্ঠানে, জায়গা পেতেন না শেষ সারির চেয়ারেও ! সবই আজ ভুলে গেছেন । আর যাওয়াটাই হয়তো স্বাভাবিক। আজ যদি একটু হলেও মনে থাকতো সেদিনের সেই সংগ্রামের কথা তাহলে আজ যারা তরুন, এ পথের নবীন মাঝি হয়ে কাজ করতে এসেছে তাদেরকে বাঁকা চোখে, বাজে মন্তব্য করে কোন কথা বলতে পারতেন না । কারন এই সৃষ্টি, নতুনত্ব ,পদার্পণ যেগুলো দেখছেন সেগুলো আপনার সময়ও ছিল। এমন একটা সময় আপনাকেও পার করে এখানে আসতে হয়েছে। আজ একজন তরুণ সংবাদকর্মীর ফোন কলে আপনি বিরক্ত হন। নামেমাত্র ব্যস্ততা দেখান। কেন মনে পড়ে না সেদিনের কথা, যেদিন আপনিও আপনার সেই সিনিয়রদের সাথে পরিচিত হওয়ার জন্য আমার মতো করে ঘুরতেন, ভাই ভাই বলে ডাকতেন, বিরক্ত করতেন ! এখন তো নিজেকে বড় মাপের সাংবাদিক বলে পরিচয় দেন। এখন আপনার ব্যক্তিত্ব হয়েছে, বড় ব্যক্তিত্ব নিয়ে চলেন আপনি। আচ্ছা, আপনারও তো আমার মতো এক নতুন জীবন ছিল ! যে জীবনে আপনিও এক দ্বার থেকে অন্যদ্বারে ঘুরেছেন নিজেকে গড়তে, নিজের পরিচিতির পরিধি বাড়াতে ! সেদিনের কথা ভুলে যান কিভাবে ? কিভাবে একজন মানুষ তার অতীতের বিষাদময় স্মৃতিগুলো এতো দ্রুত ভুলে যায় ! আজ জেলা শহরে সাংবাদিকতা করেন, অনেক সময় আঞ্চলিক পত্রিকার ডেক্সে বসেন। যে নিউজ নিজের নামে অফিসে পাঠান, ডেক্সে বসে ব্লোড অক্ষরে নিজের নাম লিখে নিউজ ছাপান সে খবর কোথা থেকে আসে? সে খবর আসে আমার মতো নিরন্তর ছুটে চলা আপনার চোখে নিম্নমানের একজন সংবাদকর্মী থেকে। কই প্রত্যন্তঅঞ্চলে ঘটে যাওয়া খবরের সন্ধানে গেলে আপনাকে তো দেখিনা ! কোথায় থাকেন তখন ! ঠিকই তো পরবর্তীতে নাম করা পত্রপত্রিকায় আপনার খবর দেখতে পায়। তাহলে কি দাঁড়ালো? শুধু কি এখানে শেষ ! ভুলে গেছেন আপনি? অফিসের অ্যসাইনমেন্ট জমা দিতে আমাকেই খুঁজে দিতে হয়েছিল সেই প্রান্তিক কৃষককে ! কষ্টে থাকা সেই জেলেকে ! হ্যাঁ আমার মতো অযোগ্য, মেধাহীন তরুণ সংবাদকর্মীরা মাঠে ঘুরে ঘুরে এসব সংবাদ তৈরীর চেষ্টা করে।যা পারে তাই লেখে, যা বোঝে তাই ফুটিয়ে তোলে তার লেখার খাতায়। আর আপনি ওখানে বসে সেই খবর নিজের নামে চালান ! আমি অমুক জেলা প্রতিনিধি, তমুক ব্যুরো। সব ভারী ভারী পদ। তাহলে কিসের এতো গল্প ? কিসের এতো দাম্ভিকতা ? কিসের এতো ব্যস্ততা আপনার? আপনাদের ভাষ্যমতে, অজপাড়া গাঁ’র স্যাঁতসেঁতে জায়গা থেকে আমরা নাকি উঠে আসি! হ্যাঁ আসলেই তাই, আপনারা সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মগ্রহন করেছিলেন। অনেক সৌভাগ্যবান আপনারা। তবে তখন কোথায় থাকে এসব ভারী ভারী কথা ! যখন আমার করা নিউজ টাইটেল পরিবর্তন করে কিছু তথ্য আগে পাছে করে লিখে, অভিজ্ঞতায় দু’কলম ভালো বাংলা দিয়ে সংবাদ সাজিয়ে হেড অফিসে পাঠান? প্রত্যন্তঅঞ্চলে ঘুরতে থাকি, খুজতে থাকি একটা সংবাদ করার আশায় ! সাইকেলের প্যাটেল চালিয়ে এ গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে চলে যায় একটা নিউজ করবো, পত্রিকায় আসবে, আমাকে সাংবাদিক বলে চিনবে এই আশায় ! কেন এ আশা আমরা করতে পারি না? আমার করা নিউজ কেন নিজস্ব প্রতিবেদকে ছাপান? আমার করা খবর কেন আপনি নিজের নামে চালান ? তখন কোথায় থাকে আপনার ব্যক্তিত্ব? কোথায় থাকে দাম্ভিকতা ? বড় হাসি পায় কখন জানেন ! এতো কিছুর পরও যখন বলেন এ খবর তুৃমি কোথা থেকে কপি করেছো ! তুমি তো এতো ভালো লেখো না ! তুমি এ ইতিহাস জানলে কিভাবে ! তখন সত্যিই আমার খুব হাসি পায় । তখন নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করি আসলেই তো তাই ! এ ইতিহাস আমি কেন জানবো? আমার কি অধিকার আছে এ ইতিহাস জানার? এতো সুন্দর একটি খবর করার ? কেন আমি বার বার ভুলে যায় আমি যে একজন নবীন, তরুণ সংবাদকর্মী !
লেখক- রিয়াদ হোসেন, সংবাদকর্মী