চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃজাতীয় পার্টির (জাপা) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে রংপুর-৩ (সদর) আসনটি শূন্য ঘোষিত হয়েছে। এখন ওই আসনে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। উপ-নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন প্রসঙ্গে জাপা নেতাসহ হাফ ডজন নেতার নাম আলোচনায় রয়েছে।
এ আসনে কে প্রার্থী হচ্ছেন- তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বেশ চমক লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ‘এরশাদের মাটি জাতীয় পার্টির ঘাঁটি’- এটি বিবেচনায় এরশাদ পরিবারের চার সদস্যের পাশাপাশি দলের অন্তত তিনজন নেতা ওই আসনে নির্বাচন করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। প্রার্থী নির্বাচনে দরকষাকষিতে দেবর-ভাবি অর্থাৎ দলটির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের ও সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারছেন না। দলীয় সূত্রে এমনটি জানা গেছে। এদিকে বিএনপিও এ আসনে প্রার্থী নির্বাচনে চমক দিতে পারে। সেক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে গ্রহণযোগ্য জাপার নেতাও তাদের বিবেচনায় আছে।
বিএনপির গুলশান কার্যালয় সূত্র জানায়, রংপুর-৩ আসনে মনোনয়নের ব্যাপারে এবার বিএনপির চমক থাকবে। স্থানীয় বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জোট বা কেন্দ্রীয় বিএনপির কেউ এ আসনে বিএনপির চূড়ান্ত মনোনয়ন পেতে পারেন। যদিও এ বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয় সূত্র জানায়, শূন্য ঘোষিত রংপুর-৩ আসনে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এমদাদুল হক ভরসা, মহানগর বিএনপির সভাপতি মোজাফফর হোসেন, সহ-সভাপতি কাওসার জামান বাবলা, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মিজু, সাবেক নগর সাধারণ সম্পাদক সামসুজ্জামান সামুর নাম আলোচনায় রয়েছে।
দলের যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেলকে নিয়েও কেউ কেউ ভাবছেন এ আসনে। গত নির্বাচনে ওই আসন থেকে জোটের শরিক পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান রিটা রহমান ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এবার তার নামও শোনা যাচ্ছে। এছাড়া রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির তার দলের মধ্যে বৈরী পরিস্থিতিতে রয়েছেন। তিনি রংপুরের জনপ্রিয় নেতা, তাকে নিয়েও আলোচনা আছে নেতাকর্মীদের মধ্যে।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী সূত্র জানায়, রংপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি মোজাফফর হোসেনকে নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে বেশ আগ্রহ রয়েছে। আর্থিকভাবে তিনি বেশ সচ্ছল। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটা রহমান ওই আসনে মনোনয়ন পাওয়ায় স্থানীয় নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হন। তারা উড়ে এসে জুড়ে বসা কাউকে মানতে চান না।
এখন জোট রাজনীতির সমীকরণ ধরে রাখতে হলে শরিকদের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। বাস্তবিক অর্থে ওই আসনটি জাতীয় পার্টির ঘাঁটি। নগর জাপার সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির যদি তার দলের গ্রিন সিগন্যাল না পান সেক্ষেত্রে বিএনপির সমর্থন পেতে পারেন। আবার এরশাদের মৃত্যুতে ওই অঞ্চলে যে রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে দলের যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেলকে ওই আসন দেয়া হতে পারে।
অনেকেই মনে করেন, ঢাকা মহানগরীতে সোহেলের কোনো আসন নেই। ঢাকার রাজনীতিতে সিনিয়র নেতাদের কয়েকজন সোহেলকে চান না। কিন্তু ঢাকা মহানগর বিএনপির যেকোনো কর্মসূচিতে যতটা না বিএনপির নেতাকর্মীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় তার চেয়ে বেশি থাকেন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা। তার এমন গ্রহণযোগ্যতা রংপুরে কাজে লাগাতে চায় দলের শীর্ষ মহল। তারা মনে করেন, সোহেলের জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে জাতীয় পার্টির ঘাঁটি রংপুর-কে বিএনপির ঘাঁটিতে রূপান্তর করা সম্ভব। তবে বিষয়টি নির্ভর করছে দলীয় সিদ্ধান্তের ওপর। অর্থাৎ সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন। তাকে সেই ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
রংপুর-৩ আসনের প্রার্থী সম্পর্কে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘এত বড় দলে যোগ্য প্রার্থীদের কোনো কমতি নেই। সবকিছু বিবেচনা করে এ আসনে যোগ্য প্রার্থী দেবে বিএনপি। ’
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘এ আসনে এমন প্রার্থী দেয়া হবে, যার দলীয় ও স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয়তা আছে। কারণ, এখন দেশের বেশির ভাগ মানুষই বিএনপি ও ধানের শীষের পক্ষের লোক। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে রংপুরেও তার প্রমাণ পাওয়া যাবে।