করোনা ভাইরাস সংক্রমনের উর্দ্ধগতি রোধে মোংলায় কঠোর বিধিনিষেধ চলছে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ আকার ধারন করেছে যে, দ্বিতীয়বারের মত আরও সাত দিনের বিধি নিষেধ জারি করতে বাধ্য হয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশন কর্তৃক আগামী ২১ জুন ইউনিয়ন পরিষদের ভোট গ্রহনের তারিখ ঘোষনায় সাধারণ ভোটাররা চরম ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তারা বলছেন, করোনার ভয়াবহতার মধ্যে এখনই নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু করা হলে মহামারীর সংক্রমণ ঘরে ঘরে ছড়িয়ে যাবে।
তবে উপজেলা প্রশাসনও সাধারণ ভোটারদের সাথে মত প্রকাশ করে এই সময়ে নির্বাচন করতে নারাজ। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কমলেশ মজুমদার বলেন, “মোংলায় করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ আকারে ছড়িয়েছে। সংক্রমনটির ভাইরাস হ্রাস করতে আমরা সাধারণ মানুষদের সচেতন করতে কঠোর বিধি নিষেধ আরোপ করেছি। তাই এর মধ্যে একটা নির্বাচন হলে সেটি হবে খুবই আশংকাজনক পরিস্থিতি। তাই এই আশংকার কথাটি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি। মহামারীর মধ্যে নির্বাচন যাতে না করা হয়, খুব শিগগিরই এর একটা পজিটিভ সিদ্ধান্ত আসবে বলেও আশা করেন ইউএনও কমলেশ মজুমদার”।
ভৌগলিক আর অর্থনৈতিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ন মোংলা বন্দর। একটি পৌরসভা ও ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ উপজেলায় বসবাস প্রায় দুই লক্ষ মানুষের। ঘনবসতি পূর্ণ এ উপজেলায় ব্যবসা বানিজ্যের কারনে প্রতিনিয়ত যাতায়াত করছে দেশের বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার মানুষ। উপজেলাটি এখন করোনা হটস্পটে পরিণত হয়েছে। পরীক্ষন বিবেচনায় সর্বোচ্চ আক্রান্ত ৭৪ শতাংশে দাড়িয়েছে। করোনার সংক্রম ঠেকাতে এখানে চলছে কঠোর বিধিনিষেধ। উপজেলার বাসিন্ধারা অনেকটা ঘর বন্ধি হয়ে পড়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে আগামী ২১ জুন ভোট গ্রহনের তারিখ ঘোষনা করায় সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখো দিয়েছে।
উপজেলার চাঁদপাই ইউনিয়নের বাসিন্দা মোঃ আব্দুল মজিদ, মোঃ খোকন ও আলমগীর হোসেন বলেন, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে একদিকে কঠোর বিধি নিষেধ আবার একই সময়ে নির্বাচন! এটতো মরন ডেকে আনা। উপজেলার আরেক ইউনিয়ন চিলার বাসিন্দা কুলসুম বেগম ও জাহানারা খানম বলেন, ‘করোনার মধ্যে কিভাবে নির্বাচন হয়? এতে আরও বেশি করোনা হবে’। এই সময়ে নির্বাচনের দরকার নেই বলেও জানান তারা।
সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের মোংলা উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সাংবাদিক মোঃ নুর আলম শেখ বলেন, ইউনিয়ন নির্বাচন হচ্ছেএকটা উৎসব, এই নির্বাচনে চায়ের দোকানে, মাঠে ঘাটে সবাই গায়ে গায়ে মিশে একাকার হয়ে যাবে। করোনার সংক্রমনের উর্ধ্বগতিতে মোংলায় নির্বাচন দেয়া হলে, যে ভয়াবহ অবস্থা দেখা দিবে তা মোকাবেলা করা সরকারের পক্ষে সম্ভব হবে না বলেও জানান তিনি।
এদিকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহনের তারিখ নির্ধারনের খবরে কিছুটা প্রচার প্রচারনার প্রস্তুতি নেয় প্রার্থীরা। এরই মধ্যে তাই ১০ জুন পর্যন্ত প্রচার প্রচারনা বন্ধ রাখার নির্দেশনা জারি করা হয়। এমন তথ্য জানিয়ে মোংলার ইউএনও কমলেশ মজুমদার বলেন, করোনার এই ভয়াবহ অবস্থায় নির্বাচন স্থগিত রাখতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে তিনি চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেন।
মোংলা উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী না থাকায় আ’লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে আছেন। তাই এখানে সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের সদস্যদের মধ্যে নির্বাচন হওয়ার কথা। ইউনিয়ন ছয়টিতে নারী ও পুরুষ মিলে মোট ভোটার রয়েছেন ৭৯ হাজার ৫৪০ জন।