বাগেরহাট প্রতিনিধিঃ করোনা পরিস্থিতিতে দেশ যখন লক ডাউনের ফাঁদে ঠিক তখনই সুন্দরবনের মায়াবী চিত্রল হরিন নিধনে মেতে উঠেছে চোরা শিকারী চক্র। তারা ফাঁদ পেতে হরিন শিকার করে গোপনে মাংশ বিক্রি করছে।কখনো বা জীবিত হরিন পাচার করে দেয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। করোনার কারনে বন বিভাগের নজরদারী অনেকটা শিথিল থাকার সুযোগ নিচ্ছে শিকারীরা। গত এক মাসের ব্যাবধানে শরণখোলা রেঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাচার হওয়ার ২৪টি, মায়াবী চিত্রল হরিন, একমনের অধিক মাংস সহ প্রায় চার হাজার ফুট ফাঁদ উদ্ধার করেছে বন বিভাগ।
অনুসন্ধানে-জানাগেছে ,পৃথিবীর একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেষ্টে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ মায়াবী চিত্রল হরিণ।কিন্তু তা শিকারে যেন এক প্রকার প্রতিযোগীতা শুরু হয়েছে সুন্দরবনে। থামছেনা চোরা শিকারী চক্রের অপতৎপরতা।বিভিন্ন ভাবে শিকারীদের কবলে পড়ে সম্প্রতি মারা পড়ছে বনের অনেক হরিণ।বনের সম্পদ ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় বন বিভাগ তৎপর থাকলেও শিকারিরা নানা কৌশলে বনে প্রবেশ করে ফাঁদ পাতা সহ বিভিন্ন কায়দায় হরিণ শিকার করে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাচার করছে। মাঝে মধ্যে বন বিভাগ,কোস্টগার্ড সহ পুলিশের হাতে দু -একটি চালান সহ চক্রের ২/৪ জন সদস্য ধরা পড়লেও মুল হোতারা থাকছেন অধরা। শিকারীদের হাতে মারা পড়া ছাড়াও বছরে বাঘের হামলায়ও প্রাণ হারায় এ বনের অনেক হরিণ।সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়োতন ৬০১৭ বর্গ কিঃ মিটার।বনের ৭০ ভাগ অংশে রয়েছে সুন্দরী,পশুর, কেওড়া,গেওয়া হেন্তাল,গরান, গোলপাতা এবং বাকি ৩০ ভাগ নদী-ও খালবিল বেষ্ঠিত।
এছাড়া বনের শরণখোলা রেঞ্জের পর্যটক স্পট হিসাবে খ্যাত বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী কটকা, কচিখালী এবং দুবলার চর,আলোর কোল,হিরণ পয়েন্ট সহ বিভিন্ন এলাকা।বিশেষ করে শীত মৌসুমে মায়াবী চিত্রল হরিণের পাল দেখা যায় ওই সকল স্থানে।যা প্রতি বছর প্রায় অর্ধলাখ দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আকৃষ্ট করে।
১৯৯৫ সালের এক পশু শুমারী অনুযায়ী সুন্দরবনে হরিণের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ২০ হাজার। ১৯৯৬-৯৭ সালের জরিপে ছিল এক লাখ থেকে দেড় লাখ।২০০১ সালের জরিপে ছিল একই।বর্তমানে বনে হরিনের সংখ্যা বাড়লেও শিকার প্রতিযোগতিায় তা কমতে বসেছে।
শিকারী চক্র ছাড়াও মাছ বা কাঁকড়া আহরনের অনুমতি নিয়ে বনে ঢুকে এক শ্রেনীর অসাধু বনজীবিরাও ফাঁদ,বিষটোপ,কলার মধ্যে বরশি ,খাবারের সাথে চেতনা নাশক ঔষধ সহ জাল পেতে বিপুল পরিমান হরিণ নিধন করে থাকেন।ওই সব হরিণের মাংস,চামড়া পাচার হচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকা ও শহরের এক শ্রেণির উচ্চবিলাসী সমাজ পতিদের বাসায়। আবার হরিণের মাংসের ব্যাবহার করে চাকুরী সহ নানা কাজের তদবীরও চলে।সুত্র জানায়, বনরক্ষীরা গত ২৯ মার্চ বন সংলগ্ন খুরিয়াখালী এবং পার্শ^বর্তী উপজেলা মঠবাড়িয়ায় অভিযান চালিয়ে দুটি জীবিত হরিন উদ্ধার করেন।এছাড়া ৩১মার্চ,উপজেলার সোনাতলা গ্রাম থেকে পরিত্যাক্ত অবস্থায় থাকা ১৫ কেজি মাংস উদ্ধার করেন এবং ১৭,এপ্রিল বনের চান্দেশ্বর এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ৭শ ফুট ফাঁদ উদ্ধার করেন বনরক্ষীরা।১মে,ডিমের চর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১৫শ ফুট ফাঁদ সহ দুই শিকারী ২৮,মার্চ বনের চরখালী এলাকা থেকে ৫শ ফুট ফাঁদ ও দুই শিকারী ২ এপ্রিল কচিখালী থেকে ৫শ ফুট ফাঁদ ও দুই শিকারি, এবং সর্বশেষ গত ৪ মে রাতে শরণখোলা রেঞ্জের টিয়ার চর এলাকায় অভিযান চালিয়ে হরিন শিকারের ফাঁদ ৭শ, ফুট ৩ চোরা শিকারী, ৩০কেজি মাংস এবং ২২টি জীবিত উদ্ধার করে বনরক্ষীরা।
পুর্ব সুন্দরবনের শরনখোলা রেঞ্জের সহকারি বন সংরক্ষক মোঃ জয়নাল আবেদীন বলেন, হরিণ শিকার ও পাঁচার রোধে বনবিভাগ সব সময়ই কঠোর অবস্থানে আছে।তবে, হরিণ শিকার বন্ধে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।