চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃঅপারেশনাল, প্রশিক্ষণ ও লজিষ্টিক্স কাজে অনন্য সহায়তা প্রদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ গুরুত্বপূর্ণ নৌঘাঁটি বানৌজা তিতুমীর’কে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান করেছেন রাষ্ট্রপতি মােঃ আবদুল হামিদ।বুধবার (০২ অক্টোবর) খুলনায় আনুষ্ঠানিকভাবে বানৌজা তিতুমীর’কে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়।ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি তার বক্তব্যে, মহান মুক্তিযুদ্ধে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসামান্য অবদানের কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং ভূ-রাজনৈতিক বিবেচনায় একটি আধুনিক নৌবাহিনী গড়ে তুলতে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে বদ্ধ পরিকর। নৌবাহিনীকে আধুনিক, ত্রিমাত্রিক ও যুগােপযােগী বাহিনী হিসেবে গড়ে তােলার জন্য বর্তমান সরকার বিভিন্ন বাস্তবমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। দেশের অপার সমুদ্র সম্পদ আর সার্বভৌমত্ব রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব পালনে ফোর্সেস গােল-২০৩০ এর আলােকে নৌবাহিনীতে যুক্ত হয়েছে আধুনিক সারফেস ফ্লিট, সাবমেরিন, নেভাল এভিয়েশন ও নৌ কমান্ডাে সােয়াডস। একইসাথে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মােকাবেলায় ভিশন- ২০৪১ এর প্রণয়ন কাজ এগিয়ে চলছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ভারত ও মায়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ভূ-খন্ডের প্রায় সমপরিমাণ সমুদ্রসীমা আমরা অর্জন করেছি। আমাদের এই বিশাল সমুদ্র এলাকা প্রাকৃতিক সম্পদ এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনায় ভরপুর। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে ব্ল-ইকোনমির বিভিন্ন সম্ভাবনা বাস্তবায়নে দেশের এই প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ এবং এর সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বহিঃর্বিশ্বের সাথে দেশের মােট বাণিজ্যের ৯০ ভাগেরও বেশি সমুদ্রপথেই পরিচালিত হয়ে থাকে এবং দেশের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষভাবে এই সমুদ্রের উপর নির্ভরশীল। তাই সমুদ্র সীমানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত প্রয়ােজন। আর আমাদের নৌসদস্যরা বিভিন্ন প্রতিকূলতা মােকাবেলা করে সার্বক্ষণিক এই সমুদ্র এলাকার নিরাপত্তা বিধান নিশ্চিত করে চলেছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশের বিশাল সমুদ্রসীমার সার্বভৌমত্ব রক্ষাসহ সমুদ্রে নৌবহরের প্রশিক্ষণ ও লজিস্টিকস সহায়তা প্রদান করছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান নৌঘাটি বানৌজা তিতুমীর। দীর্ঘ ৪৪ বছর যাবৎ প্রশাসনিক, লজিস্টিকস সহযােগিতাসহ নৌসদস্যদের পেশাগত দক্ষতা অর্জনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এই ঘাটি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নবীন নাবিক সৃষ্টির দক্ষ সূতিকাগার হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করেছে এই ঘাটি। এর অধীনে পরিচালিত নবীন নাবিক প্রশিক্ষণ বিদ্যালয় এবং নেভাল প্রভােস্ট এন্ড রেগুলেটিং স্কুল নাবিকদের যুগােপযােগী প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। এর পাশাপাশি সরবরাহ শাখার কর্মকর্তা ও নাবিকদের মৌলিক প্রশিক্ষণ প্রদান করছে স্কুল অব লজিস্টিকস এন্ড ম্যানেজম্যান্ট (সােলাম)। তাছাড়া খুলনা নৌ অঞ্চলে অবস্থিত অন্যান্য ঘাটি ও জাহাজের প্রয়ােজনে সর্বদা অপারেশনাল, প্রশাসনিক এবং লজিস্টিকস সহায়তা প্রদান করছে বানৌজা তিতুমীর।
উল্লেখ্য, ব্রিটিশ বিরােধী আন্দোলনের অন্যতম বিল্পবী ছিলেন সৈয়দ মীর নিসার আলী তিতুমীর । ১৮৩১ সালে সশস্ত্র প্রতিরােধ গড়ে তুলতে তিনি বাশের কেল্লা নির্মাণ করেন এবং সেখানেই তার মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এই ঘাটির নামকরণ করা হয় ‘বানৌজা তিতুমীর’। ১৯৭৪ সালের ১০ই ডিসেম্বর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তিতুমীর এর নামে এই ঘাটি কমিশন করেন এবং ‘নেভাল এনসাইন’ প্রদান করেন। যাত্রা শুরুর পর থেকে এই ঘাটি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রশিক্ষণ, অপারেশনাল ও লজিষ্টিকস কাজে অনন্য সহায়তা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।
এর আগে সকালে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে যােগ দিতে রাষ্ট্রপতি খুলনাস্থ বানৌজা তিতুমীর ঘাটিতে এসে পৌছালে নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী তাকে স্বাগত জানান। এছাড়া অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্যরা, সেনা ও বিমান বাহিনী প্রধান, নৌ সদর দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, নৌবাহিনীর সকল নৌ প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ, মুক্তিযুদ্ধের নৌ কমান্ডােসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, দেশী-বিদেশী কূটনীতিকরা ও উর্ধ্বতন সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তারা, খুলনার আঞ্চলিক সংবাদপত্রের সম্পাদকবৃন্দ ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।