খুলনার পাউবোর শোলমারী নদীর পলি অপসারণে বিল ডাকাতিয়ার পানি নামা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে বিল ডাকাতিয়ার প্রায় দুই ফুট পানি নেমেছে। পাউবোর প্রায় দেড় মাসের প্রচেষ্টায় জরুরী পদক্ষেপে বিল ডাকাতিয়ার জলাবদ্ধতা অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। ফলে বিল ডাকাতিয়াসহ ২০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দী থেকে মুক্তি পাচ্ছে। খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার শোলমারী নদীর মুখে ১০ ভেন্ট সুইচ গেটের সামনে ব্যাপক পলি জমে থাকায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। নদীর তলদেশ উচু হওয়ায় সুইচ গেটের সামনে ব্যাপক পলি জমে থাকা এবং চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে টানা ৩ দিনের ভারি বর্ষনের ফলে পানি বন্দি হয়ে পড়ে বিল ডাকাতিয়ার প্রায় ২০টি গ্রাম। পলির কারনে বিলের ভিতরে জমানো পানি বের হতে না পারায় বৃহত্তর বিল ডাকাতিয়া ও তৎসংলগ্ন ২০টিরও অধিক গ্রামে সৃষ্টি হয় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। দীর্ঘদিনের এ সমস্যায় কৃষিকাজ করতে না পারায় বিপাকে পড়েছেন এলাকার শত শত কৃষক। বিল ডাকাতিয়ার জলাবদ্ধতা নিরসনে চলতি বছরের আগষ্ট থেকে জরুরী কাজ শুরু করে খুলনা পাউবো-১। সুইচ গেটের মুখে জমে থাকা পলি অপসারণের পাউবো এসকেভেটর, ড্রেজার এবং ভাসমান এসকেভেটর দিয়ে পলি তোলায় পানি কমতে থাকে। আর বিল ডাকাতিয়ার জলাবদ্ধতা নিরসনে শোলমারী নদীতে খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ড সার্বক্ষনিক ড্রেজার চলমান রাখবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৪ সালে তৎকালীন সরকার জলাবদ্ধতা নিরসনে ৬৮ কোটি টাকার প্রকল্প নিলেও জলাবদ্ধতা নিরসনে ব্যর্থ হয়। এরপর পানি উন্নয়ন বোর্ড ইমার্জেন্সি অ্যাকশন প্ল্যানের আলোকে ১৯৯২-৯৩ সালে খুলনা-যশোর নিষ্কাশন পুনর্বাসন প্রকল্প (কেজেডিআরপি) নামে ২২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে আরেকটি প্রকল্প হাতে নেয়। ওই প্রকল্পের আওতায় ৩০ কিলোমিটার নদী খনন, ৫৫৫ কিলোমিটার খাল খনন, ১১১ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন, ৩৮টি কালভার্ট ও ৩০টি সেতু নির্মাণ করা হয়। পাশাপাশি আরও কিছু স্থাপনা নির্মাণ করা হয়। এ ছাড়া ২০১৪ সাল থেকে ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ১০৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ব্লু-গোল্ড নামে একটি প্রকল্পের কাজ করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি খুলনা-যশোর নিষ্কাশন পুনর্বাসন প্রকল্প (কেজেডিআরপি) নামে এত টাকার কাজ করা হলেও জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী সমাধান হয়নি। ডুমুরিয়ার শোলমারী নদীর মুখে বাঁধ দিয়ে সেখানে ১০ ভেল্টের সুইচ গেট নির্মান করা হয়। তার ফলে বিল ডাকাতিয়া সংলগ্ন মানুষরা ২২-২৩ বছর ধরে জলাবদ্ধতা মুক্ত হওয়ায় ব্যাপক হারে মিষ্টি পানির চিংড়ি ঘের ও ঘেরের আইলে সবজি চাষ করে আর্থিক ভাবে ঘুরে দাঁড়ান। এভাবে বেশ কয়েক বছর যাবৎ ভালই চলছিলো। কিন্ত সম্প্রতি ওই সুইচ গেটের সামনে পলি পড়তে পড়তে পানির প্রবাহ এক প্রকার বন্ধ হয়ে পড়ে। চলতি বছর মার্চ মাস থেকে ডাকাতিয়া বিলে আবার নতুন করে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। তাছাড়া চলতি মৌসুমে ভারী বর্ষায় জলাবদ্ধ পরিস্থিতি মারাত্মক রুপ ধারণ করে। অধিকাংশ চিংড়ি ঘেরের আইল পর্যন্ত পানি উঠে যাওয়ায় মানুষ নিরুপায় হয়ে উচ্চ মূল্যে নেট কিনে মাছ রক্ষার চেষ্টা করতে থাকে। স্থানীয় বাসিন্দা সুরেন মন্ডল বলেন, গেটের সামনে থেকে যে পলি তুলা হচ্ছে, পরে জোয়ারের পলিতে তা অনেকাংশে আবার ভরাট হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া গেটের ভেতরের পাশেও পলি পড়ে নদীর নাব্যতা হারিয়ে মাত্র ১ থেকে দেড় ফুট গভীরতা আছে। আর আমাদের বিল ডাকাতিয়ার মধ্যে পানি আছে ৫ থেকে ৬ ফুট। পলি জমা ও ভারী বর্ষনে আমরা পানিবন্দী হয়ে পড়ি। এখন পানি কমতে থাকায় আমরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করছি। পাউবো ড্রেজিংর কাজ অব্যাহত রাখলে আমরা জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবো এবং কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারবো।
উপজেলার রংপুর ইউনিয়নের ভুক্তভোগী জনপ্রতিনিধি অধ্যক্ষ সমরেশ মন্ডল বলেন, এতোদিনে চেষ্টার পরও যে অবস্থা, আর আমাদের ডাকাতিয়া বিলে পানির গভীরতা ও শোলমারী নদীর উচ্চতার ও যা অবস্থা তাতে মনে হচ্ছে, ভবদহ গেটের মতো বড় ধরণের বেশ কয়েকটি ইলেকট্রনিক পাম্প মেশিন বসাতে পারলে, হয়তো আমরা এই জলাবদ্ধতা থেকে বাঁচতে পারবো।
এ বিষয়ে পলি অপসারণ কাজে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সার্বক্ষণিক তদারককারী উপ-সহকারী প্রকৌশলী তরিকুল ইসলাম বলেন, বৃহত্তর বিল ডাকাতিয়া বিলের পানি নিষ্কাশনে এসকেভেটর, ড্রেজার এবং ভাসমান এসকেভেটর দিয়ে পলি তোলায় পানি নামা শুরু হয়েছে। গত ২৫ আগষ্ট থেকে পানি নামা শুরু হয়েছে। সুইচ গেটের পলি অপসারণের কাজ চলমান থাকা অবস্থায় কয়েক দিনের ভারি বর্ষনে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সম্মস্যা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে । ইতোমধ্যে প্রায় ২ থেকে ৩ ফুট পানি নেমেছে। গেটের ভেতরের পাশ থেকে সামনে শোলমারী নদীর তলদেশ উচু হওয়ায় আশানুরুপ পানি নামছে না। তবে পলি অপসারণে ঠিকাদার যেভাবে কাজ শুরু করেছে তাতে শিগ্রই বিলের পানি নিষ্কাশন হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যাক্ত করেন।
উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদ বলেন, এলাকার জলাবদ্ধতা মুক্তির লক্ষ্যে আমাদের এমপি নারায়ণ চন্দ্র চন্দ স্যার পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের নিয়ে সার্বক্ষণিক তদারকী করছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তা ও ঠিকাদারও এসকেভেটর, ড্রেজার এবং ভাসমান এসকেভেটর দিয়ে পলি তোলায় পানি কিছুটা নেমেছে । তবে জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থয়ী সমাধানের জন্য বড় পরিকল্পনা নিতে হবে পাউবোর।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনা-১ নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রহমান তাযকিয়া বলেন, শোলমারী নদীর মুখে ১০ ভেন্ট সুইচ গেটের সামনে পলি অপসারণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নানামূখি পদক্ষেপ গ্রহনে কোথাও ২ ফুট কোথাও ৩ ফুট পানি নেমেছে। পলি অপসারণে সার্বক্ষনিক ড্রেজিং অব্যাহত থাকবে।