চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ যানবাহন চালানোর সময় চালকরা এ্যালকোহল পান করেছেন কি না এমন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়েছে খুলনা অঞ্চলের সড়কগুলোতে। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে হাইওয়ে পুলিশ গত এক মাস যাবত বিভিন্ন পয়েন্টে এ্যালকোহল ডিটেক্টর মেশিনের মাধ্যমে চালকদের পরীক্ষা করছেন। একটি অত্যাধুনিক ডিভাইসের প্লাস্টিকের সাদা অংশে চালকরা মুখের হাওয়া (ফু) দিলেই মাত্র ৪ সেকেন্ডেই জানা যাচ্ছে ফলাফল। যদি কোন চালক এ্যালকোহল পান করে যানবাহন চালানোর প্রমাণ মেলে তবে তাকে আটক করে মাদক আইনে মামলা অথবা ম্যাজিস্ট্রেট থাকলে তার মাধ্যমে জেল জরিমানার বিধান রয়েছে।
চলতি মাসের শুরুতে এ কার্যক্রম শুরু হলেও এখন অবধি কোন চালক এ্যালকোহল পান করেছেন তার প্রমাণ মেলেনি। খুলনা জেলার প্রবেশদ্বারে একাধিক আঞ্চলিক ও জাতীয় মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে এ্যালকোহল ডিটেক্টর মেশিন দিয়ে বাস, ট্রাক, কার্ভার ভ্যান, মাইক্রোসহ বিভিন্ন ধরনের গাড়ির চালকদের পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হচ্ছে মাত্র ২টি মেশিন দিয়ে।
এদিকে মেশিন থাকলেও দক্ষ জনবল না থাকায় পরীক্ষা করা হচ্ছে না কোয়ে বাজার ব্রিজ থেকে চুকনগর-সাতক্ষীরার আঞ্চলিক সড়কটিতে। এমনকি খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) ট্রাফিক বিভাগে এখনও অবধি এ বিষয়ে কোন নির্দেশনা আসেনি। পাশাপাশি জেলা পুলিশের পক্ষ থেকেও এ ধরনের কার্যক্রম শুরু হয়নি।
জানা যায়, খুলনা জেলার প্রবেশদ্বারে রয়েছে ২টি জাতীয় মহাসড়ক এবং ১টি আঞ্চলিক মহাসড়ক রয়েছে। খুলনার রূপসা ব্রিজ-কাটাখালি মোংলা এবং গোপালগঞ্জ- মোল্লারহাটের একাংশের মহাসড়কটিতে গত ৪ অক্টোবর থেকে চালকদের এ্যালকোহল ডিটেক্টর মেশিনের মাধ্যমে পরীক্ষা শুরু করা হয়েছে। যানবাহন চালানোতে সন্দেহ হলে এবং হটলাইনে অভিযোগ পেলেই সঙ্গে সঙ্গে চালকদের এ পরীক্ষা করা হয়। তবে গত ২০ দিনে একজন চালককেও মাদক সেবনকারী হিসেবে সনাক্ত করা যায়নি বলে জানান কাটাখালি হাইওয়ের ওসি মোঃ রবিউল ইসলাম। এছাড়া ফুলতলা পথের বাজার-যশোর জাতীয় মহাসড়কে গত ১৩ অক্টোবর থেকে এ্যালকোহল ডিটেক্টর মেশিনের মাধ্যমে কোন চালকের মাদকসেবনের বিষয়টি নজরে আসেনি বলে জানিয়েছেন নওয়াপাড়া হাইওয়ের ওসি নজরুল ইসলাম।
এদিকে আঞ্চলিক সড়কের দায়িত্বে থাকা খর্ণিয়া হাইওয়ে ফাঁড়ির আইসি মাহমুদ আলম জানান, এ্যালকোহল ডিটেক্টর মেশিন এসেছে। একজন কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণে পাঠানো হয়েছে। তিনি ফিরলেই কার্যক্রম শুরু করা হবে
কেএমপি’র ট্রাফিক বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছেন, সিটির মধ্যে যানবাহন চালকদের মাদক সেবনের পরীক্ষা বিষয়ে এখনও কোন নির্দেশনা আসেনি। তাছাড়া যে সকল যানবাহনগুলো খুলনা সিটির বাইপাস সড়কগুলো থেকে অন্য জেলায় যাতায়াত করেন তারা কোন না কোন মহাসড়কে এ্যালকোহল ডিটেক্টর মেশিনের সম্মুখীন হন।
জেলা ট্রাফিক পুলিশের টিআই গাজী মিজানুর রহমান বলেন, এ্যালকোহল ডিটেক্টর মেশিনের বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপারের সাথে আলাপ হয়েছে। খুব দ্রুত এ কার্যক্রম শুরু হবে।
খুলনা অঞ্চলের যানবাহন চালক আমিনুল ইসলাম, ইমরান আহসান পরাগসহ কয়েকজন জানান, সরকারের এ উদ্যোগ খুবই ভাল। এতে করে এতে করে চালকরা সচেতন হবে এবং সড়ক দুর্ঘটনা কমবে।
নিরাপদ সড়ক চাই, খুলনা জেলা উপদেষ্টা এড. মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, হাইওয়ে রোডের চালকসহ সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের ডোপ টেস্ট করার উদ্যোগটা অনেক ভাল। এক্ষেত্রে কার্যক্রমগুলো সততার সাথে করতে হবে। মাদক সেবনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কোন ধরনের ছাড় দেওয়া যাবে না।
বিআরটিএ’র খুলনা সার্কেলের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) মোঃ আবুল বাশার জানান, আমরা ইতিমধ্যে সকল চালকদের মাদক সেবন থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রচারণা শুরু করেছি। এ বিষয়টি বিভিন্ন শ্রমিক ও মালিক সংগঠনকেও জানানো হচ্ছে।
খুলনা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি ও নগর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ¦ মিজানুর রহমান বলেন, ইতিমধ্যে সকল চালক এবং শ্রমিক সংগঠনদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে মাদক সেবন, এ্যালকোহল পান এবং ফিটনেসবিহীন যানবাহন কোন ভাবে চালানো যাবে না।
ফরিদপুর জোনের মাদারীপুর হাইওয়ের এএসপি কেএম আব্দুল্লাহ বলেন, ২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় সাংবাদিক সাংবাদিক মিশুক মুনীর এবং পরিচালক তারেক মাসুদ মারা যাওয়ার পর হাইকোর্ট থেকে সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন চালকদের এ্যালকোহল পরীক্ষার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কারণ জরিপে দেখা যায়, শতকরা ৭০ ভাগ চালক এ্যালকোহল পান করে যানবাহন চালায়। কিন্তু এ্যালকোহল ডিটেক্টর মেশিন আমাদের সরবরাহ ছিল না। গত তিন মাস আগে আমরা ডিভাইস পেতে শুরু করেছি। এরপর গত ১ মাস ধরে পর্যায়ক্রমে প্রত্যেক হাইওয়ে থানায় ডিভাইস দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, কোন চালক এ্যালকোহল সেবন করেছে প্রমান পেলেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।