চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃখুলনায় অবৈধভাবে কৃষি জমিতে বালু ভরাট করে নির্মাণ করা হচ্ছে আবাসন, শিল্পপ্রতিষ্ঠান। কৃষিজমিকে আবাসন বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করে আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন জেলার অনিবন্ধিত বিভিন্ন রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী এবং কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ও কেডিএর অথরাইজড শাখা। ফলে জেলায় খাদ্য চাহিদা বাড়লেও কমছে খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্র। কৃষিজমিকে রক্ষা করতে এমন ব্যক্তি বা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করছে জেলা প্রশাসন। তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হবে আইনানুগ ব্যবস্থা।
খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ) আওতাভুক্ত এলাকায় এ ধরনের ৬৮ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধন করতে বার বার চিঠি প্রদান করে। কেডিএর আওতায় প্লট কিংবা ফ্ল্যাট ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ করা এবং এ সংক্রান্ত অবৈধ সাইনবোর্ড ও স্থাপনা নিজ উদ্যোগে অপসারণ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরে অত্র এলাকার কিছু রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান কেডিএতে নিবন্ধনের আবেদন করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেয়। এ প্রক্রিয়াটি চলমান রয়েছে। এরই মধ্যে খুলনা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে উদ্যোগ। কৃষিজমিতে অবৈধ প্লট ব্যবসায়ীদের তালিকা প্রস্তুত হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, খুলনা জেলায় এ ধরনের যতগুলো প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তার সব থেকে বেশি রয়েছে বটিয়াঘাটা এবং ডুমুরিয়া উপজেলায়। এছাড়া নগরী মোস্তর মোড়, রায়ের মহল,কৈয়া সড়ক এলাকায় বিভিন্ন নামের আবাসন প্রকল্প ও ব্যাক্তিগত উদ্যোগে বালু ভরাট করে কেডিএর নিয়ম বহিভুত আবাসন নির্মাণ করা হচ্ছে । কৃষি জমিতে নতুন বালু ভারাট ভুমিতে দিনের পর দিন গড়ে উঠছে অপরিকল্পিত আবাসিক ভবন নির্মান । আর এই নির্মান কাজ দেখ ভালো এবং তদারকির জন্য রয়েছেন কেডিএর অথরাইজড অফিসার মোঃ মজিবুর রহমান । তারসাথে রয়েছে এই সব অবৈধ আবাসন প্রকল্পের মালিকদের সাথে গভীর সখ্যতা । আলোচিত এ অথরাইজড অফিসার মোঃ মজিবুর রহমান এর ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান দিয়ে এই ভুমিতে বোয়িংর কাজের চুক্তি হলেই অনুমোদন মেলে ভুমি মালিকদের নতুন ভবনের প্লান । এর আগও কেডিএর বিভিন্ন প্রকল্পে এই অথারাইজড অফিসার মোঃ মজিবুর রহমান বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠে । শুধু অভিযোগই নয় এই কর্মকর্তা গ্রহকদের প্লান অনুমোদনে হয়রানীর স্বীকার হন । আর এই হয়রানীর বিরুদ্ধে খুলনা নাগরিক সংগঠনের পক্ষ থেকে মানব বন্ধন কর্মসুচি পালন করা হয় ।
খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা এলাকায় জমির প্লট ব্যবসায়ীদের তালিকায় রয়েছে মো. আশিকুজ্জামান আশিকের সিয়াম আবাসিক প্রকল্প, বাদশা মহিউদ্দিনের শান্তির নীড় আবাসিক প্রকল্প, মাহবুবুর রহমানের মেসার্স এম জামান এন্টারপ্রাইজ, তারা বিশ্বাসের বিশ্বাস প্রোপার্টিজ, শেখ সেলিমের বন্ধন প্রোপার্টিজ, মো. হাসানের মো. হাসান প্রকল্প, এস এম মতিয়ার রহমানের একতা আবাসন প্রকল্প, শেখ আবুল হোসেনের আকাশ এন্টারপ্রাইজ, আসলাম হোসেন তালুকদারের তালুকদার এন্টারপ্রাইজ, সুরঞ্জনের সুস্মিতা ট্রেডিং, শফিকুল ইসলাম সুমনের সুরাইয়া আবাসিক প্রকল্প, মো. ইউনুস হাওলাদারের তাহসিন আবাসন প্রকল্প, মো. আকবর শিকদারের সোনালি প্রোপার্টিজ, মো. নাসির উদ্দিন সোহেলের মোহাম্মাদিয়া আবাসিক, বাদল রায়ের রাজদ্বীপ আবাসিক প্রকল্প, মো. আসলাম শিকদারের শিকদার আবাসিক প্রকল্প, মো. রফিকুল ইসলামের সুমাইয়া আবাসিক প্রকল্প, রফিকুল ইসলাম ছোটনের ভাই ভাই আবাসিক প্রকল্প, দুলাল হাওলাদারের বিসমিল্লাহ আবাসিক প্রকল্প, মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের সূর্যমুখী আবাসিক প্রকল্প, মফিজুল ইসলামের নিকুঞ্জ আবাসিক, সুবীর বিশ্বাসের দক্ষিণা আবাসিক, মো. এনামুল মোল্লার মোল্লা আবাসিক প্রকল্প, মো. আবুল হাসান খানের খান আবাসিক প্রকল্প, শেখ মো. আবেদ আলীর গুলজান সিটি, মো. আসলাম সানার সবুজ বাংলা আবাসন প্রকল্প, রূপসা উপজেলা এলাকায় রয়েছে মো. রাসেল শেখের গ্রীণ বাংলা আবাসন প্রকল্প, জিএম নাসির উল্লাহ এবং কাজী আবদুস সোবহানের এনএস প্রোপার্টিজ, মো. সিরাজুল ইসলাম এবং আরাফাত খান জুয়েলের গোল্ডেন সিটি। এছাড়া রায়ের মহল মৌজায় কৃষিজমি বালু দ্বারা ভরাট করেছে এমন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম রয়েছে। কৈয়া সড়ক মোস্তর মোড় এলাকায় বৃহত্তর আবাসন প্রকল্প আজগর আলী তারা বিশ্বাসের মেসার্স বিশ্বাস প্রোপার্টিজ,দি সুন্দরবন আবাসিকের টুটুল নগর,সাইফুল ইসলামের বিসমিল্লাহ প্রোপার্টিজের মহানগর আবাসন প্রকল্প ,উজান আবাসন,রুপালী ব্যাংক লিমিটেড দৌলতপুর করপোরেট শাখা, শফিকুর রহমান, আবু দাউদ, মো. হারুন কাজী, মোসারত শিমুল, প্রত্যাশা আবাসিক প্রকল্প, শহিদুল হক, শেখ হাছিবুল ইসলাম ও শেখ আবদুল্লাহ। সবুজ বাংলা আবাসন প্রকল্পের মো. আসলাম সানা জানান, আমার কোনো প্রকল্প নেই। এই জমিটি প্রাইম ব্যাংকের। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নাম দিয়েছে আর আমাকে দালাল বলতে পারেন। আমি দালালি করে বিক্রি করি। প্রতি কাঠা জমি বিক্রি করে আমি পাই ১৫ হাজার টাকা। ভঅধিরাটকৃত জমির প্লটে বাড়ি নির্মান করতে মালিকদের পড়তে হবে বিরম্বনায় । কেননা অধিকাংশ আবাসন প্রকল্পেই ৮ থেকে ১০ ফুট রাস্তা রাখা হয়েছে । অথচ খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নতুন আইন অনুমোদন করেছেন ২০ ফুট রাস্তার জায়গা না হলে কোন ভবনের প্লান অনুমোদন করা যাবে না । অধিকাংশ আবাসন প্রকল্প মালিকতাদের প্রকল্পে ৮/১০ ফুট রাস্তা রেখে প্লট বিক্রি করে দিয়েছেন ।
খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক পঙ্কজ কান্তি মজুমদার জানান, আধুনিক নগরায়নের ফলে কৃষিজমি কমে যাচ্ছে। এ বিষয়ে সবারই খেয়াল রাখা প্রয়োজন। মানুষ বাড়ছে কিন্তু কৃষিজমি বাড়ছে না, বরং কমছে। বটিয়াঘাটা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, প্রধানমন্ত্রীর নিদের্শনা রয়েছে কৃষিজমিকে অকৃষি জমিতে রূপান্তরিত করা যাবে না। অনেকেই বালু ভরাট করে কৃষিজমিতে অকৃষি জমিতে রূপান্তরিত করছে। জেলা প্রশাসকের আদেশে আমরা এসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের তালিকা করে জেলায় পাঠিয়েছি।