চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ পাটখাতে প্রয়োজনী অর্থবরাদ্দ, বকেয়া মজুরী ও বেতন পরিশোধ সহ ১১ দফা বাস্তবায়নের দাবীতে খুলনা-যশোর অঞ্চলের ৯ রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকলে বিক্ষোভ ও প্রতিকী অনশন কর্মসূচী পালন করেছে শ্রমিকরা। রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল সিবিএ- নন সিবিএ সংগ্রম পরিষদের ডাকে ২য় পর্যায়ে কর্মসূচীর সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) দ্বিতীয় দিনে অব্যাহত রয়েছে। খালিশপুর, আটরা ও নওয়াপাড়া শিল্প এলাকায় রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকলে বিক্ষোভ ও অনশন কর্মসূচী পালন করছে প্রায় অর্ধলাখ শ্রমিক-কর্মচারী।
এ কর্মসূচীতে অংশ নেয়া ১৫ জন শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তারা প্লাটিনাম, ষ্টার ও ক্রিসেন্ট জুট মিলের শ্রমিক। রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯টায় অনশনে অংশ নেয়া খালিশপুর জুট মিলের পাট বিভাগের সরদার আঃ গনিকে (৫৫) খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এছাড়াও অনশন পালনরত শতাধিক শ্রমিককে স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে।
পাটখাতে প্রয়োজনীয় অর্থবরাদ্দ, বকেয়া মজুরী- বেতন পরিশোধ, জাতীয় মজুরী ও উৎপাদনশীলতা কমিশনের রোয়েদাদ ২০১৫ কার্যকর, অবসর প্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের পিএফ ও গ্র্যাচুইটির অর্থ পরিশোধ, চাকুরীচ্যুত শ্রমিক-কর্মচারীদের পূর্নবহাল সহ ১১ দফা দাবিতে গত ১৭ নভেম্বর ৬ দিনের কর্মসূচীর ডাক দেয় রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদ। এ কর্মসূচীর অংশ হিসাবে ১০ ডিসেম্বর থেকে অনশন কর্মসূচী পালন করে শ্রমিকরা। অনশনের চতুর্থ দিন ১৩ ডিসেম্বর রাতে শ্রম প্রতিমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতিতে কর্মসূচী ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করেছিল আন্দোলনকারীরা। পরবর্তীতে ১৫ ডিসেম্বর বিজেএমসিতে ও ২৬ ডিসেম্বর শ্রম মন্ত্রনালয়ে শ্রমিক নেতাদের সাথে বৈঠকে দাবির ব্যাপারে কোন সমাধান না হওয়ায় আবারও অনশন কর্মসূচীর ডাক দেয় সংগ্রাম পরিষদের নেতারা। ২৮ ডিসেস্বের খুলনা-যশোর অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকলে শ্রমিক সভার মাধ্যমে অনির্দিষ্ট কালের জন্য অনশন কর্মসূচীর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেন সংগ্রাম পরিষদের নেতারা।
খালিশপুর শিল্প এলাকার বিআইডিসি রোডে ক্রিসেন্ট, প্লাাটিনাম, খালিশপুর, দিঘলিয়ার ষ্টার, খালিশপুর, দৌলতপুর আটরা শিল্প এলাকার আলীম, ইষ্টার্ন এবং নওয়াপাড়া শিল্প এলাকার কার্টেং ও জেজেআই মিলের শ্রমিকরা স্ব স্ব মিল গেটে সারা রাত খোলা আকাশের নীচে অবস্থান নিয়ে সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) দ্বিতীয় দিনে অনশন কর্মসূচী পালন করছে। কর্মসূচী চলাকালে খালিশপুর, আটরা ও রাজঘাট এলাকায় দফায় দফায় শ্রমিক সমাবেশ ও বিক্ষোভ করে পাটকল শ্রমিকরা। “দুনিয়ার মজদুর একহও, ১১ দফার ভিক্তিতে লড়তে হবে একসাথে, আমাদের দাবি আমাদের দবি, মানতে হবে মেনে নাও! “শ্রমিকদের এই বুক ফাটা শ্লোগানে ভারী হয়ে ওঠে গোটা শিল্পাঞ্চল সহ আশ-পাশ এলাকা।
শ্রমিক সমাবেশে বক্তব্য দেন- রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল সিবিএ ননসিবিএ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক মোঃ মুরাদ হোসেন, মোঃ সোহরাব হোসেন, শাহানা শারমিন, হুমায়ুন কবির খান, আবু দাউদ দ্বীন মোহাম্মদ, শ্রমিক নেতা কাওসার আলী মৃধা, মোঃ খলিলুর রহমান, সেলিম আকন, সেলিম শিকদার,মনিরুল ইসলাম শিকদার, মোঃ আবু হানিফ, সাহাজান সিরাজ মোঃ তরিকুল ইসলাম, মিজানুর রহমান ও মিন্টু মিয়া, ষ্টার জুট মিলের আবু হানিফ, তবিবর রহমান, আলমগীর হোসেন, সিরাজুল ইসলাম লিয়াকত হোসেন । সমাবেশে বক্তারা অবিলম্বে শ্রমিকদের ১১ দফা বাস্তবায়নের জন্য বিজেএমসি কর্তৃপক্ষের কাছে জোড় আহবান জানান।
সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক মো. মুরাদ হোসেন জানান, খালিশপুর শিল্পাঞ্চলের চারটি জুট মিলের শ্রমিকরা ক্রিসেন্ট গেটে অনশন মঞ্চে আসেন এবং অনশনে যোগ দেন। কাঁথা-বালিশ, লেপ, কম্বল নিয়ে অনশন পালনকারী শ্রমিকরা রাত যাপন করেছে রাস্তায়। শ্রমিকরা বলেন, আমরা দীর্ঘদিন থেকে বকেয়া মজুরি পরিশোধ ও মজুরি কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের সিদ্ধান্ত বাতিল ও অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের পিএফ ও গ্র্যাচুইটির টাকা দেওয়াসহ ১১ দফার দাবি জানিয়ে আসছি। দীর্ঘদিন আন্দোলন চললেও এ পর্যন্ত শ্রমিকদের দাবি দাওয়া পূরণ হয়নি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমরণ অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাব।
প্লাটিনাম জুট মিলের সিবিএ’র সভাপতি শাহানা শারমিন বলেন, ‘পাটকলের মালিক পরিষদের কতিপয় ষড়যন্ত্রকারীর চক্রান্তের শিকার রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল। যে কারণে পিছিয়ে পড়ছি আমরা। শ্রমিকরা যার যা কাঁথা-কম্বল নিয়ে অনশনে নেমেছে। সমস্যার সমাধান করতে যদি মরতে হয় তবুও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন কর্মসূচি চলবে।