ওজোপাডিকো পিচরেট শ্রমিক কল্যাণ সমিতি আয়োজিত মানব বন্ধনে খুলনার নাগরিক নেতারা বলেছেন, ওয়েষ্ট জোন পাওয়ার ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানীতে ২০/২৫ বছর ধরে চাকরী করেও স্থায়ী হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না শ্রমিকরা। এটি চরম এক মানবাধিকার লংঘন। এ অনৈতিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে খুলনার মানুষ ওজোপাডিকোতে কর্মরত পিচরেট শ্রমিকদের পাশে এসে দাঁড়াবে। এটি তাদের নৈতিক দায়িত্ব। একইসাথে নাগরিক নেতারা ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালককে একজন স্বাধীনতা বিরোধী লোক আখ্যা দিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে নানা অসৎ কর্মকান্ড করছেন বলেও উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে খুলনার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।
মঙ্গলবার সকালে নগরীর পিচকার প্যালেস মোড়ে ওজোপাডিকোতে অস্থায়ীভাবে কর্মরত পিচরেট শ্রমিকদের স্থায়ীকরণের দাবিতে এ মানব বন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
সমিতির সভাপতি আলতাফ হোসেনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক তৈয়েবুর রহমান রাসেলের পরিচালনায় এসময় প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন, খুলনা সদর থানা আওয়ামীলীগ সভাপতি এড. সাইফুল ইসলাম।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, সোমবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে ওজোপাডিকো কর্তৃপক্ষ সংবাদ সম্মেলন করে তাদের অনিয়ম-দুর্নীতির কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। সুতরাং তিনি ওজোপাডিকো এমডির উদ্দেশ্যে বলেন, মানুষের ভোগান্তি না বাড়িয়ে, জনগনের সাথে প্রতারণা না করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রি-পেইড মিটার ভোগান্তির অবসান করুন। পিচরেট শ্রমিকদের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন চাকরী করেও আজ ওজোপাডিকোর এসব অসহায় শ্রমিকদের মানবেতর জীবন কাটাতে হচ্ছে। তাদের সন্তানদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। দিন কাটছে না খেয়ে, অর্ধাহারে-অনাহারে। তিনি বলেন, আমরা শুনতে চাইনা ওজোপাডিকোর কোন শ্রমিকের সন্তানের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে, শুনতে চাইনা কারও চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গেছে, শুনতে চাইনা কেউ না খেয়ে রয়েছেন, আমরা শুনতে চাই কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে, চাকরী পেয়েছে যে যার যোগ্যতা অনুযায়ী।
খুলনা নাগরিক সমাজের আহবায়ক এড. আফম মহসীন বলেন, এদেশ স্বাধীন হয়েছিল শ্রমিকদের মুক্তির জন্য। আজ এদেশের শ্রমিকরা শোষিত। ওজোপাডিকোতে যেটি চলছে তা অত্যন্ত অমানবিক। ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিজের চাকরীর মেয়াদ ৬৫ বছর করলেও, একাধিকবার চুক্তির মেয়াদ বাড়ালেও, সুবিধাজনকভাবে চাকরীবিধি তৈরি করলেও দীর্ঘদিন কর্মরত থাকা পিচরেট শ্রমিকদের স্থায়ীকরণের ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। বরং কেউ দাবি-দাওয়ার কথা বললে শোকজ করা হয়, চাকরীচ্যুৎ করা হয়। এটি চলতে পারে না, চলতে দেয়া যায় না। তিনি ভারত, চীন, জাপানসহ উন্নত দেশগুলোতে যেহেতু প্রি-পেইড মিটার নেই সেহেতু বাংলাদেশ থেকেও প্রি নামক যন্ত্রদানবের অবসান দাবি করেন। পাশাপাশি তিনি ওজোপাডিকোর পিচরেট শ্রমিকদের স্থায়ীকরণের দাবি জানান।
খুলনা মহানগর শ্রমিক লীগের সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, ওজোপাডিকোর এমডি একজন স্বাধীনতা বিরোধী লোক। এজন্য ভেতরে ভেতরে সব সরকারবিরোধী কর্মকান্ড করছেন। বিশেষ করে জনগন যাতে সরকারের বিরুদ্ধে যায় সে ধরনের কর্মকান্ড পরিচালনা করছেন। কোটি কোটি টাকা ঘুষ খেয়ে এমডি সাধারণ শ্রমিকদের বিতারিত করতে চায়। সিবিএ থাকলে শ্রমিকদের পক্ষে কথা বলবে এবং শ্রমিক কর্মচারীদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবেনা বলেই সু-চতুর এমডি প্রথমে একটি ট্রেড ইউনিয়নের নির্বাচিত নেতাসহ অনেককে ইতোমধ্যে তিনি চাকরীচ্যুৎ করেছেন । শুধু মাত্র নিজের ও সচিবের অনৈতিক কর্মকান্ড ধামাচাপা দিতে । ওজোপাডিকোর শ্রমিক-কর্মচারীরা স্বাধীন দেশে পরাধিনতার অধিন চাকরী করছেন । এমডি ও সচিবের কারনে ২১ জেলা নিয়ে গঠিত ওয়েষ্ট জোন পাওয়ার ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানী(ওজোপাডিকো)র শ্রমিক-কর্মচারীরা পরাধিনতার শৃংখলে বন্দি । এমডি ও সচিবের স্বার্থ সংশ্লিষ্ঠ বিষয়ে কথা বললে চাকরী নেই । এটা কোন নিয়মের মধ্যে পরেনা । অবিলন্বে বর্তমান সরকারের সাফল্য বিনষ্টকারী এমডি ও সচিবকে ওজোপাডিকোকে থেকে প্রত্যাহার ও তাদের দুর্ণীতির তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যাবস্থা নেওয়ার দাবী জানাচ্ছি ।তিনি আরো বলেন পিচরেট শ্রমিকরা যতক্ষণ পর্যন্ত স্থায়ী না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন চলবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সব আন্দোলনের সাথে তারা থাকবেন।
মানব বন্ধনে নগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক রনোজিত কুমার রনো, খুলনা টিইউসির সভাপতি এইচ এম শাহাদাৎ, শ্রমিক লীগ নেতা বাবুল হোসেন, নাজু, মো: মোতালেব মিয়াসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।