চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃমহাসড়কে মৃত্যুর মিছিল কোনো ভাবেই থামছে না। গত দু’দিনে বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা ও যশোরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রান গেছে ৭ জনের। এর মধ্যে মোংলা-খুলনা মহাসড়কে দু’টি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে চালক হেলপারসহ ৩ জন নিহত ও আহত হয়েছে ১ জন। মোল্লাহাটে পাইপ বোঝাই পিকআপ প্রাণ কেড়ে নিয়েছে স্কুলছাত্রের, আহত হয়েছে দুই জন। এদিকে চুকনগরে আবারো বাসের ধাক্কায় যুবক ইমরান ও শ্যামনগরে যুবলীগ কর্মী কর্মী নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে ২ জন। এছাড়া যশোরে মোটরসাইকেল চালানো শিখতে গিয়ে এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ।
মোংলা : মোংলা-খুলনা মহাসড়কের পাশে তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র সড়কে পাথর বোঝাই ট্রাকের ধাক্কায় দাঁড়িয়ে থাকা ইটের ট্রাকের চালক ও পাথর বোঝাই ট্রাকের হেলপারসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছে আরও এক ড্রাইভার। গত মঙ্গলবার দুপুরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের দু’জন ট্রাকের হেলপার ও একজন চালক। নিহতরা হচ্ছেন পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ার উপজেলার জুলিয়া গ্রামের নাসির হাওলাদারের ছেলে ইকবাল হাওলাদার (২৩), সাতক্ষীরার নগরঘাট এলাকার ইসরাইল আনছারীর ছেলে ইয়াসিন হোসেন আনছারী (২২) ও খুলনার হরিনটানা কৈয়া বাজার এলাকার আশ্রাব হোসেনের ছেলে মোঃ রাকিব হোসেন (২৫)। এছাড়া ট্রাক চালক হরিণটানা হোগলাডাঙ্গা এলাকার তোফাজ্জেল হোসেনের ছেলে মোঃ শাহিন (২৭) আহত হয়েছে।
রামপাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ তুহিন হাওলাদার জানান, তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র সড়কে পাংচার হওয়া একটি ইট বোঝাই ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। ওই ট্রাকের নিচে ঢ়ুকে চালক চাকা মেরামতের কাজ করছিল। এ সময় অপরদিক থেকে আসা পাথর বোঝাই একটি ট্রাক ধাক্কা দিলে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের চালক ঘটনাস্থলে নিহত হন। এ সময় পাথর বোঝাই ট্রাকের ২ হেলপার ছিটকে পড়ে পাথর ও ইট বোঝাই ট্রাকের সাথে আঘাত লেগে ঘটনাস্থালেই মারা যান। পাথর বোঝাই ট্রাকের চালক শাহিন রক্তাক্ত জখম হন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি পাঠায়। বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক মাসুদ সরদার জানান, আমাদের উদ্ধার টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার কাজ চালিয়েছেন। পাশাপাশি গাড়ি চলাচলের জন তাপ বিদ্যুৎ সড়কের দুর্ঘটনা কবলিত ট্রাক দুইটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে এবং সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। আহত শাহিনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে বলেও জানান রামপাল থানার অফিসার ইনর্চাজ মোঃ তুহিন হাওলাদার।
বাগেরহাট : জেলার মোল্লাহাট উপজেলার চৌরঙ্গী মোড় এলাকায় পাইপ বোঝাই পিকআপের সাথে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে মোহাম্মদ আলী (১৪) নামে এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় জোবায়ের ও বাপ্পি নামের আরও দুই শিক্ষার্থী আহত হন। গতকাল বুধবার দুপুরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। আহতদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহত মোহাম্মদ আলী উপজেলার উদয়পুর গ্রামের জাকির সরদারের ছেলে ও ওয়াজেদ মেমোরিয়াল মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্র। আহত অপর দুই জন একই বিদ্যালয়ের ছাত্র।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জগন্নাথ চন্দ্র বলেন, তিন বন্ধু ফুটবল খেলা শেষে মোটরসাইকেল যোগে বাড়ি ফেরার পথে উপজেলা সদরের চৌরাঙ্গী মোড়ে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে তারা গুরুতর আহত হয়। আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠায় স্থানীয়রা। এ সময় চিকিৎসক মোহাম্মদ আলীকে মৃত ঘোষণা করে। অপর দুই জনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ ও গোপালগঞ্জ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
চুকনগর : আবারো বাসের ধাক্কায় ইমরান হোসেন (২০) নামে এক যুবক ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছে। সে চুকনগর সদরের মিজানুর রহমান মোড়লের একমাত্র পুত্র এবং ইলেকট্রিশিয়ান। গতকাল বুধবার বেলা ১১টায় খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের চুকনগর আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের সামনে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতের পরিবার ও প্রত্যেক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, ইমরান সকালে মোটরসাইকেল নিয়ে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের সামনে মহাসড়কের উপর বাম পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। এ সময় খুলনা থেকে ছেড়ে আসা (খুলনা মেট্রো-জ-১১-০০৩৯) বেপরোয়া গতির বাসটি ইমরানকে সাজরে ধাক্কা দেয়। এ সময় সে ছিটকে রাস্তার উপর পড়ে গেলে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় বিক্ষ্ব্ধু এলাকাবাসী বেপরোয়া গাড়ি চালানোর প্রতিবাদ ও মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্প্রিড ব্রেকার স্থাপনের দাবিতে ঘন্টাব্যাপী সড়ক অবরোধ করে যানচলাচল বন্ধ রাখে। ইমরানের অকাল মৃত্যুতে স্বজনদের আহাজারিতে গোটা এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। একমাত্র পুত্রকে হারিয়ে পিতা-মাতা সঙ্গাহীন হয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ডুমুরিয়া থানা অফিসার ইনচার্জ আমিনুল ইসলাম বিপ্লব এবং চুকনগর হাইওয়ে ফাঁড়ির পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে এনে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। ঘাতক চালক পালিয়ে গেলেও বাসটি আটক করেছে চুকনগর হাইওয়ে ফাঁড়ি পুলিশ। এদিকে শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জানাতে ওই বাড়িতে ছুটে যান সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শেখ বদরুজ্জামান তসলিম, আটলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান এড. প্রতাপ রায়, সরদার দৌলত হোসেনসহ স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ।
সাতক্ষীরা : জেলার শ্যামনগরে মোটরসাইকেল ও ইঞ্জিনভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে নুরনগর ইউনিয়ন যুবলীগ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান (২৪) ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় মারাত্মক আহত হয়েছেন আরো দুইজন। গত মঙ্গলবার রাতে উপজেলার চালতেঘাটা ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত মোস্তাফিজুর রহমান উপজেলার নুরনগর ইউনিয়নের সৈয়দালীপুর গ্রামের আবু মুসার ছেলে। আহতরা হলেন সৈয়দালীপুর গ্রামের কাদের গাজী ছেলে কবির ও মৃত আব্দুল গফুরের ছেলে হাফিজুর। পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক মনোয়ার হোসেন অনু জানান, গত মঙ্গলবার বিকেলে কালিগঞ্জে যুবলীগের সম্মেলন ছিল। সম্মেলন শেষে একটি মোটরসাইকেলে মোস্তাফিজসহ তিনজন বাড়ি ফিরছিলেন। পথিমধ্যে চালতেঘাটা ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা ইঞ্জিনভ্যানের সাথে তাদের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে তারা তিনজন মারাত্মক আহত হলে তাদের শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে আহত মোস্তাফিজুর রহমানকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। আহত অপর দু’জনকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল হুদা বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, পুলিশ দুর্ঘটনা কবলিত মোটরসাইকেল ও ইঞ্জিনভ্যান জব্দ করেছে।
যশোর : মোটরসাইকেল চালানো শিখতে গিয়ে জীবন গেল চাল ব্যবসায়ী মফিজুল ইসলামের (৩৮)। গত মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। তার বাড়ি সদর উপজেলার কচুয়া গ্রামে। নিহতের চাচতো ভাই ইকবাল হোসেন জানান, মফিজুল ইসলাম দেড় মাস আগে একটি হিরো হোন্ডা মোটরসাইকেল কেনেন। সেই মোটরসাইকেল নিয়ে এদিন রাত ৯টার দিকে গ্রামের রাস্তায় চালানো শিখছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের একটি গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে মাথায় প্রচন্ড আঘাত পান। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে রাত ১০টার দিকে ভর্তি করে। এখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আধাঘন্টা পর ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের ডাক্তার সুব্রত দেবনাথ জানান, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে।