সব কিছু
facebook channelkhulna.tv
খুলনা সোমবার , ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
চিকিৎসকের অবহেলায় সাংবাদিক পত্নীর মৃত্যু | চ্যানেল খুলনা

চিকিৎসকের অবহেলায় সাংবাদিক পত্নীর মৃত্যু

নগরীর গরীব নেওয়াজ ক্লিনিক থেকে খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সর্বশেষ শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে যেভাবে মৃত্যু হলো রূপসা উপজেলার শোলপুর গ্রামের গৃহবধু শায়লা শারমিনের। শায়লা (৩০) দৈনিক জন্মভূমি পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার মামুন খানের সহধর্মিনী। গত ১২ মার্চ তিনি পেটে ব্যাথা অনুভব করেন। ১৩ মার্চ তাকে গাইনী চিকিৎসক ডাঃ সানজিদা হুদা সুইটির কাছে গরীব নেওয়াজ ক্লিনিকে নেয়া হয়। তিনি বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরিক্ষার রিপোর্ট দেখে ওভারিয়ান ছিস্টে আক্রান্ত বলে রোগীকে শনাক্ত করেন। পরামর্শ দেন-দ্রুত অপারেশন করতে হবে, নতুবা সিস্ট ফেটে ইনফেকশন হয়ে বড় দুর্ঘটনার শঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, এটি খুবই সাধারণ অপারেশন। ২০-২৫ মিনিট সময় লাগতে পারে।
১৪ মার্চ রোগীর পেটে ভীষন ভাবে ব্যাথা শুরু হলে তাকে খুলনা সদর থানাধীন গরীব নেওয়াজ ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সেখানে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক তাকে অপারেশনের আগের প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরিক্ষার ব্যবস্থাপত্র দেন এবং ১৫ মার্চ দুপুর দেড়টায় ওটির সময় নির্ধারণ করেন। দুপুর একটার পর ওয়ার্ড বয় এবং আয়ারা শায়লাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান। সেখানে ভিকটিমের স্বামী মামুন তাকে সান্তনা এবং কথা বলে সাহস যোগাবার একপর্যায়ে এ্যানেসথেসিয়া ডাঃ দিলিপ কুন্ডু তাকে তুমি বলে সম্বোধন করে ওটি থেকে বের করে দেন। তখন রোগীর দুই হাত সেলাইনের পাইপ দিয়ে বাধা ছিল। ছবি তোলার কোনো চেষ্টা না করা স্বত্তেও ডাঃ দিলিপ স্ব প্রণোদিত হয়ে তাকে ছবি কিংবা ভিডিও করা হতে বিরত থাকতে আদেশ দেন। ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
খুলনা জেনারেল হাসপাতালের একজন এনেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ দৈনিক জন্মভূমিকে বলেন, এনেসথেসিয়া দুই ভাবে দেয়া হয়। একটি জেনারেল, এতে রোগীকে দফায়-দফায় ওষুধ প্রয়োগ করে পুরো শরীর অজ্ঞান করা হয়। আরেকটি স্পাইনাল এনেসথেসিয়া। এতে রোগীর শরীরের অর্ধাংশ অবশ করা হয়। এ কাজে বুপিভিং নামের এক ধরণের ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয়। ওভারিয়ান ছিস্টের ধরণ সিম্পল হলে অবশ করে অপারেশন করা হয়। দু’ ঘন্টার মধ্যে তার সংজ্ঞা ফেরৎ আসে। শায়লা শারমিনের টিবিএস আলট্রাস্নো পরীক্ষার রিপোর্টে ছিস্টের ধরণ ছিল সিম্পল। যদিও চিকিৎসক ডাঃ দিলিপ তাকে জেনারেল এনেসথেসিয়া দিয়েছিলেন।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এনেসথেসিয়া বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ দিলিপ কুমার কুন্ডু (যিনি নিহত নারীর এনেসথেসিয়া করেছিলেন) দৈনিক জন্মভূমিকে বলেন, রোগীর হার্টসহ শরীর অন্যান্য অঙ্গের নিরাপত্তায় তাকে জেনারেল এনেসথেসিয়া দেয়া হয়েছিল। এ কাজে প্রপোকল নামের ইনজেকশন একাধিকবার ব্যবহার করা হয়। এমনকি তাকে খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অপারেশনের আগেও এনসথেসিয়া দেয়া হয়েছিল। ল্যাপারস্কপিক অপারেশনের জন্য তাকে অবস করা স্পাইনাল এনেসথেসিয়া না দিয়ে জেনারেল এনেসথেসিয়া দেয়া হয়েছিল।
ওটি রুমে এনেসথেসিয়ার আগে কেন রোগীর দুই হাত বেডের স্ট্যান্ডের সাথে স্যালাইনের পাইপ দিয়ে বাধা ছিল? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ওটি রুমে যাওয়ার আগেই ওয়ার্ড বয়েরা তার হাত বেধে রেখেছিল। অজ্ঞান হওয়ার পর হাত নিচে ঝুলে পড়তে পারে এ শঙ্কায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত ১৫ মার্চ দুপুর দুই টা ১০-১২ মিনিটের দিকে ডাঃ সুইটি অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশ করেন। সেখান থেকে ঝড়ো গতিতে বেরিয়েই তিনি বলেন, মে বি রোগীর কার্ডিয়াক এ্যারেস্ট হয়েছে। তাকে বাঁচানোর জন্য দ্রুত রক্তের ব্যবস্থা করতে হবে, অন্তত পাঁচ ব্যাগ। আগে রক্তের কথা বলেন নি কেন? রোগীর স্বামীর এ প্রশ্নের জবাবে তিনি একজন ওয়ার্ড বয়কে ধমক দেন। ভিকটিমের স্বজনেরা রক্তের ব্যবস্থা করতে-করতে অন্তত ৪০ মিনিট কেটে যায়। তখন রোগীকে রক্তের ব্যাক-আপ হিসেবে ডাঃ দুইটি ইনজেকশধন পুশ করেন। ওটির জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছিল-সেখানে অবস্থানরতরা কোক খাচ্ছেন। হাসি-ঠাট্টা করছেন। দুই জন তার মুখে এ্যামরোব্যাগ মেশিনের দ্বারা পাম্প দিচ্ছেন। তখন তার পেট ফুলে ওঠে। এরপর ডাঃ সুইটি বলেন, তার ছিস্ট লিক করেছে। ব্লিডিং হচ্ছে। আইসিইউ ব্যাক-আপ আছে এমন চিকিৎসালয়ে নিয়ে অপারেশন করতে হবে। এরপর তিনি, ডাঃ দিলিপসহ ক্লিনিকের লোকেরা তাকে সিটি মেডিকেলে নিয়ে অপারেশন করেন এবং সেখানকার আইসিইউতে রেখে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
রোগীকে অপারেশনকারী ডাঃ সানজিদা হুদা সুইটি দৈনিক জন্মভূমিকে বলেন, এনেস্থিসিয়া দেয়ার সময় সংশ্লিস্ট ডাক্তার থাকার প্রয়োজন আছে। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে এনেস্থিসিয়া দেয়ার পরেও ডাক্তার এলে অসুবিধা হয় না। তিনি বলেন, এনেস্থিসিয়া দেয়ার পরেই রোগীর কার্ডিয়াক এ্যারেস্ট হয়। পরে সেটা রিকভারি করে। রোগীর ভিতরে বড় ধরণের কোন সমস্যা থাকলে সাধারণত এমন হয়। সব কিছুই এত দ্রুত পরীক্ষা করা সম্ভাবও হয় না। তার ইসিজিসহ অন্যান্য পরীক্ষায় কোন সমস্যা ধরা পড়েনি। রোগীকে ঠিকমত অক্্িরজেন প্রয়োগের জন্য এ্যামরোব্যাগ দিয়ে পাম্প করা হয়। টিউমার ছিদ্্্র হয়ে যাওয়ায় ব্লিডিংএর কারণে তার পেট ফুলে ওঠে। ধারণা ছিল রোগী ভালো হয়ে যাবে। তাই গরীব নেওয়াজে ঝুঁকি না নিয়ে খুলনা সিটি মেডিকেলে নিয়ে যাই। টিউমার অপারেশনের পর আইসিইউতে রাখা হয়। পরে রোগী রিসপন্ড করলেও আর ফেরেনি।
সিটি মেডিকেল কলেজের আইসিইউ নাম্বার ৬ তে তিনি আট দিন লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। সেখানে তার চিকিৎসায় যুক্ত হয়েছিলেন-গাইনি ডাঃ সুইটি, এনেসথেসিয়া ডাঃ দিলিপ এবং ডাঃ ফরিদ, নিউরোলজি বিশেষজ্ঞ ডাঃ হালিম সরদার এবং হার্টের চিকিৎসক ডাঃ বিধান চন্দ্র গোস্বামি। লাইফ সাপোর্টের তিন দিনের মাথায় আইসিইউ’র দায়িত্বরতরা রোগীর অভিভাবকদের বন্ড দিয়ে এমআরআই ও সিটি স্ক্যান করার জন্য বলছিলেন। কিন্তু রোগীর স্বজনেরা বলেছিলেন-নিউরোলজী সার্জন দেখবেন এবং তার পর সিদ্ধান্ত জানানো হবে। ওই রাতে ডাঃ হালিম সরদার রোগী দেখে বলেছিলেন-তার জীবনের জন্য এমআরআই খুবই ঝুকিপূর্ণ। পরের দিনও তারা সিটি স্ক্যান করার কথা বললে একই চিকিৎসক বলেছিলেন- সিটি স্ক্যান এখনই নয়, প্রয়োজন হলে বলব।
এরপর শহীদ শেখ আবু নাসের হাসপাতালের আইসিইউতে থাকাকালীন সেখানকার ইনচার্জ ডাঃ বেলাল রোগীর অভিভাবককে বলেছিলেন, রোগীর খিচুনি আছে। খিচুনি কমলে লাইফ সাপোর্ট খুলে দেয়া হবে। হায়াত-ময়ুত আল্লার হাতে। মেডিকেল সাইন্সে যা আছে সর্বোচ্চ করা হবে। পরদিন ২৬ মার্চ সকালে তার মৃত্যু হয়।
এদিকে, খুলনা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গত ২৭ মার্চ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন, সেখানে লেখা ছিল-‘ডাঃ সানজিদা হুদা সুইটির সার্জারিতে সাংবাদিক মামুন খানের স্ত্রীসহ গত দুই মাসের মধ্যে তিন জনের মৃত্যু, অপচিকিৎসার অভিযোগ’। ওই পোস্টে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে নিয়ে ৭৪ জন বিভিন্ন ভাবে বিরূপ মন্তব্য করেছেন। পোস্টটি সঠিক এবং দুঃক্ষজনক রিএ্যাক্ট করেছেন-১শ’৩৩ জন।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার খুলনা জেলা সমন্বয়ক এডভোকেট মোমিনুল ইসলাম দৈনিক জন্মভূমিকে বলেন, অপারদর্শী ডাক্তারের এ ধরণের ভুল চিকিৎসায় অকাল মৃত্যু কোনো ভাবেই মেনে নেয়া যায়না। তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষের কাছে দোষিদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য অনুরোধ করেছেন।

https://channelkhulna.tv/

আইন ও অপরাধ আরও সংবাদ

তালায় কপোতাক্ষ নদ থেকে বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার!

নিশ্চিত মৃত্যু যেনেও ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে বায়ুপথে ইয়াবা বহন আটক এক

ফকিরহাট স্ত্রী হত্যার অভিযোগ, স্বামী পলাতক

ফকিরহাটে মাদক কারবারীকে কারাদন্ড ও জরিমানা

আয়নাঘরের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক ছিল না: জিয়াউল আহসান

চোরাই গরু বহনকারী পিকআপসহ আটক ৩

চ্যানেল খুলনা মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
DMCA.com Protection Status
সম্পাদক: মো. হাসানুর রহমান তানজির
It’s An Sister Concern of Channel Khulna Media
© ২০১৮ - ২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | চ্যানেল খুলনা.বাংলা, channelkhulna.com.bd
যোগাযোগঃ কেডিএ এপ্রোচ রোড (টেক্সটাইল মিল মোড়), নিউ মার্কেট, খুলনা।
প্রধান কার্যালয়ঃ ৫২/১, রোড- ২১৭, খালিশপুর, খুলনা।
ফোন- 09696-408030, 01704-408030, ই-মেইল: channelkhulnatv@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য অধিদফতরে অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিবন্ধনের জন্য আবেদিত।