নিজস্ব প্রতিবেদক
গ্রামের ভেতর সুন্দর ও ঝকঝকে একটি মাইক্রোবাস দেখে কৌতূহলবশত ছবি তুলেছিলেন ওই গ্রামের এক বাসিন্দা। সেই ছবির সূত্র ধরেই হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার পাট্টাশরীফ গ্রামের বাসিন্দা মো. দুলা মিয়া (৪৫) হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করে পুলিশ। বেরিয়ে আসে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে র্যাব সদস্য সাদেক মিয়া জড়িত থাকার বিষয়টিও। সাদেককে পুলিশ গতকাল বুধবার ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে।
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার পাট্টাশরীফ গ্রামের বাসিন্দা মো. দুলা মিয়া হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন বিষয়ে বুধবার দুপুরে হবিগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা বলেন, ঘটনার ২৮ দিনের মাথায় তাঁরা মো. দুলা মিয়া হত্যার সব রহস্য উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হয়েছেন। প্রধান আসামি সাদেক মিয়াসহ ছয়জন আসামিকে তাঁরা গ্রেপ্তার করতে পেরেছেন।
পুলিশ সুপার বলেন, কৃষক দুলা মিয়ার সঙ্গে তিন শতক জায়গা কেনা নিয়ে তাঁর প্রতিবেশী ও সম্পর্কে ভাতিজা সাদেক মিয়ার বিরোধ ছিল। সাদেক বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) একজন ল্যান্সনায়েক, তিনি বর্তমানে প্রেষণে ঢাকায় র্যাব-২-এ কর্মরত।
পুলিশ সুপার বলেন, এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সাত–আটজনের মধ্যে পেশাদার খুনিও ছিল, তাদের ভাড়া করেন সাদেক মিয়া।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, হত্যাকাণ্ডের পরপরই পুলিশ যখন তদন্তে গ্রামে যায়, তখন গ্রামের এক বাসিন্দা পুলিশকে গোপনে জানান, তিনি মাইক্রোবাসটির ছবি মুঠোফোনে তুলেছেন। গ্রামের ভেতরে চকচকে একটি মাইক্রোবাস অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তিনি ছবিটি তোলেন।
কৃষক দুলা মিয়ার সঙ্গে তিন শতক জায়গা কেনা নিয়ে তাঁর প্রতিবেশী ও সম্পর্কে ভাতিজা র্যাব সদস্য সাদেক মিয়ার বিরোধ ছিল।
ওই ছবির সূত্র ধরে পুলিশ ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভৈরব টোল প্লাজার সিসি ক্যামেরা থেকে শনাক্ত করে গাড়ির নম্বর, ওই নম্বর ধরেই গ্রেপ্তার হন মাইক্রোবাসটির চালক ইউসুফ সর্দার। তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গ্রেপ্তার করা হয় গাড়ি ভাড়া নেওয়া মামুন মিয়াকে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এ ঘটনায় সাদেকসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যরা হলেন আফরোজ মিয়া, জসিম উদ্দিন (৩১) ও শামীম
সরদার (৩৬)।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম ফজলুল হক, সেলিমুজ্জামান, রাজু আহমেদ, হবিগঞ্জ সদর থানার ওসি মো. মাসুক আলী ও চুনারুঘাট থানার ওসি নাজমুল হক।
গতকাল নিহত ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় বাড়ির লোকজন প্রিয় মানুষটিকে হারিয়ে কান্নাকাটি করছেন। তাঁরা লাশের অপেক্ষায়। নিহত ব্যক্তির ভাই জিতু মিয়া বলেন, এ পর্যন্ত সাদেক তাঁর ভাইয়ের ওপর তিনটি মিথ্যা মামলা দিয়েছেন, জেল খাটিয়েছেন।
চুনারুঘাট থানার ওসি নাজমুল হক বলেন, ঢাকার হাজারীবাগ থানায় লাশের সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। মরদেহ হবিগঞ্জে পৌঁছালে পরিবারে কাছে হস্তান্তর করা হবে।