সব কিছু
facebook channelkhulna.tv
খুলনা বুধবার , ৩১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
জলবায়ু পরিবর্তনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হুমকির মুখে শিশুরা | চ্যানেল খুলনা

জলবায়ু পরিবর্তনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হুমকির মুখে শিশুরা

সুমন সাহা :: বিশ্বের প্রতিটি দেশের মতো বাংলাদেশের স্বাভাবিক আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটায় বন্যা, টর্নেডো ঝড়ের মাত্রা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ঘটেছে পরিবেশ বিপর্যয়। এ বিপর্যয়ের ফলে মানুষের জীবন আজ হুমকির সম্মুখীন। জলবায়ু পরিবর্তনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ দুইভাবেই হুমকির মুখে শিশুরা। জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা নেই দেশের শিশুদের। তবে দেশের শিশুরাই সর্বোচ্চ মূল্য দিচ্ছে।

বিভিন্ন গবেষক ও প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় দেখা গিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট নেতিবাচক প্রভাবের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম অরক্ষিত দেশের একটি। জলবায়ু পরিবর্তন যেভাবে সামাজিক সমস্যাগুলোকে প্রকট করছে তাতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়ছে শিশুরা। ইউনিসেফের শিশুদের জন্য জলবায়ু ঝুঁকি সূচক বা চিলড্রেনস ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৩ দেশের মধ্যে ১৫তম।

শিশুদের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ দুইভাবেই প্রভাব পড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমান করে যে সারা বিশ্বে বিদ্যমান রোগের মোট ৮৮ শতাংশ পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের। যেটি জলবায়ু পরিবর্তনের দ্বারা সবচেয়ে খারাপ ভাবে প্রভাবিত হিসেবে বলা হয়।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দিন দিন নতুন রোগের প্রাদুর্ভাব ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে একটি পরিবারকে নানা সমস্যা মোকাবেলা হতে হয় এবং এর মধ্যে অন্যতম সমস্যা হচ্ছে আর্থিক সমস্যা। যার প্রভাব সরাসরি শিশুদের ওপর পড়ে। এর ফলে শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশে ব্যাঘাত ঘটে। শিশুদের শৈশব ও স্বাস্থ্যের উপরও প্রভাব পড়ে।
অনেকে ঢাকা ও অন্য বড় শহরগুলোতে যাচ্ছে, যেখানে শিশুদের বিপজ্জনক শ্রম বা বাল্যবিয়ের ঝুঁকির দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে ৬০ লাখ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিবাসী রয়েছে, যা ২০৫০ সালের মধ্যে বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হতে পারে। এছাড়া, উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী আরও ৪৫ লাখ শিশু নিয়মিত শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় দ্বারা আক্রান্ত হয়।

প্রতিটি সংকটে শিশুরাই সবচেয়ে বেশি অসহায় হয়। জলবায়ু পরিবর্তনও তার ব্যতিক্রম নয়। যে সময়টাতে মানুষ বিকাশিত হয়, সেই বয়সটাই শিশু বয়স। নিঃসন্দেহে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে বহুমুখী পরিবর্তনগুলো হচ্ছে, সেটা থেকে শিশুরাও রক্ষা পাবে না। সেজন্য জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় পরিকল্পনার ক্ষেত্রে শিশুদের বিষয় আলাদা করে বিবেচনায় নেওয়া দরকার।

জলবায়ু পরিবর্তন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের থেকেও শিশুদের উপর বেশি প্রভাব ফেলছে। কেননা শিশুরা প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় দুর্বল এবং খাপ মিলিয়ে চলতে পারে না। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘর-বাড়ি ধ্বংস হওয়া, খাদ্য নিরাপত্তার হুমকি এবং পারিবারিক জীবিকা হারানোর মাধ্যমে একটি পরিবারে থাকা শিশুর উপর গভীরভাবে প্রভাব পড়ছে। এই প্রভাব সম্ভবত সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য স্বতন্ত্র সংঘাত এবং স্বাস্থ্য মহামারীর কারণে আরো বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কম বয়সীরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে; অন্ধকার এই যাত্রায় নিরাপদ থাকছে না গর্ভের শিশুও।

সারা দেশে বিশটি জেলার শিশুরা সবচাইতে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের তিন জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা ও ভোলায় জলবায়ু পরিবর্তন ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলছে। ঘন ঘন দুর্যোগের সম্মুখীন হচ্ছে এই জেলাগুলো। বঙ্গোপসাগরের উপকূল ঘেঁষে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি সংকটকে আরও ঘনীভূত করছে।
শোষণমূলক শিশুশ্রম, শিশু বিয়ে ও পাচারের ফাঁদে আটকা পড়ছে লাখ লাখ শিশু। এদের মধ্যে সবচেয়ে নাজুক অবস্থানে আছে শহরের বস্তিতে বাস করা শিশুরা। তাদের অনেকেই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে, বাল্যবিয়ের শিকার, এমনকি যৌনকর্মীতেও পরিণত হচ্ছে।

সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা সংক্রান্ত কর্মকা-ে উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন খাতে বার্ষিক বরাদ্দের ৬ থেকে ৭ শতাংশ ব্যয় করছে। বছরে এই অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ১০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ। এই বিপুল বিনিয়োগের সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে, আর্থিক পরিকল্পনা, তদারকি, রিপোর্টিং ও কার্যকর নীতি গ্রহণ করতে হবে।

প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেমে আসে, এটা এখন নিয়মিত ঘটনা। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে সংগ্রাম করে বাংলাদেশের মানুষ এখন প্রায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে।
এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য অনেক শিশু এবং নবজাতক শিশুদের জীবন দিতে হচ্ছে। বাংলাদেশ অধিকাংশ মানুষই নিম্ন আয় করে থাকে। তাই তাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগের ধকল সামলাতে বছরও পার হয়ে যায়। এতে শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশ হচ্ছে না। শিশুসহ পরিবারের কেউ সুষম খাদ্য আহার করতে পারে না।

অধিকাংশ শিশুকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় তারা স্কুলে না গিয়ে কাজ কেনো করছে? তখন তারা উত্তরে বলবে বন্যা, ঘূর্ণিঝড় বা বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে তাদের ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে যায়, পরিবারের আয় কর্তা মারা যাওয়ার সহ পরিবারের আর্থিক সমস্যার তারা কাজ করছেন। তাই বলা যায় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দিন-দিন শিশু শ্রম বৃদ্ধি ও শিশুদের স্কুল থেকে ঝরে পড়া বেড়েই চলেছে।

গবেষণায় দেখা যায়, দেশের প্রায় ১৭ লাখ শিশু নিষিদ্ধ ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে থাকে। প্রতি চারজনের মধ্যে একজনের বয়স ১০বা তার কম বছরের হয়ে থাকে। কাজের সন্ধানে ঢাকায় যেমন প্রাপ্তবয়স্করা আসছে তেমনি শিশুরাও আসছে। ঢাকা ও আশেপাশের এলাকায় বস্তিতে থাকা বেশিরভাগ শিশুরা মুদি দোকান, লঞ্চ ইয়ার্ড, ক্ষতিকর মিল বা কেমিক্যাল কারখানায়, বাজারে ভারী মাল বা জিনিসপত্র টানা, ট্যানারি, দর্জির দোকান, বাস স্ট্যান্ড, লঞ্চঘাট কিংবা রেলওয়ে স্টেশনে কাজ করে।

পরিবেশ দূষণ থেকে বিভিন্ন ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি হয়। বায়ু দূষণের ফলে গর্ভধারণকৃত শিশুর ওজন আকার ছোট হাওয়া কিংবা নির্ধারিত সময়ের আগে জন্ম নেওয়ার ঘটনাগুলোতে প্রভাব ফেলছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে একটি শিশুর হঠাৎ জ্বর ঠা-া লেগেই থাকে। যা স্বাভাবিক মনে হলেও পরবর্তীতে কঠিন রোগ আকারে ধারণ করে।

বনাঞ্চল ধ্বংসের কারণেও বায়ুম-লে গ্রিনহাউজ গ্যাসের নির্গমন বাড়ছে। গাছপালা কার্বন ধরে রাখে। বাংলাদেশের জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় বেশি করে বনাঞ্চল বাড়াতে হবে এবং অল্প জায়গা ব্যবহার এবং বহুতল বিল্ডিং এবং শিল্পকারখানা স্থাপন করতে হবে। যাতে পরিবেশের কোন ক্ষতি না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। শিল্পকারখানার বর্জ্য পরিশোধন করে তা নির্দিষ্ট স্থানে জমা রাখতে হবে এবং এই বর্জ্য থেকে রিসাইকেলিং করে কীভাবে অন্যকাজে লাগানো যায় এবং নতুন নতুন উদ্ভাবন প্রযুক্তি কাজে লাগাতে হবে।
প্লাস্টিক জাতীয় বর্জ্য এবং পলিথিনের ব্যবহার কমাতে হবে। এই প্লাস্টিক জাতীয় বর্জ্য সহজে নষ্ট হয় না, যার কারণে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হয়। কল কারখানার কালো ধূয়া পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করে। তাই এখন থেকে গ্রিন ফ্যাক্টরির উদ্যোগ নিতে হবে। যাতে করে পরিবেশের কোনো ক্ষতি না হয়। বিদ্যুৎ উৎপাদনে সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়াতে হবে। সৌর বিদ্যুৎ পরিবেশের কোনো ক্ষতি করে না।

ট্যানারির বর্জ্য যাতে করে খাল-বিল নদী-নালায় না যায় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। ট্যানারি বর্জ্য খাল-বিল নদী নালায় চলে গেলে নানান রোগ-ব্যাধি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই ট্যানারির বর্জ্য পরিশোধন করে ব্যবহারের উপযোগী করে তুলতে হবে।

শিল্প কল-কারখানা করতে লক্ষ রাখতে হবে যেন কৃষি জমি নষ্ট না হয়। অল্প জায়গা ব্যবহার করে শিল্প কারখানা তৈরি করতে হবে। শিল্প কারখানার আশেপাশে গাছগাছালি লাগানো বা থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। কৃষি জমি ধ্বংস না করে বহুতল বিল্ডিং নির্মাণ করতে হবে।

জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে শিশুদের ‘চিন্তাধারা’ যোগ করা জরুরি। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মে নেতৃত্ব দিতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের সময় এখনই।

শিশুদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা সম্পর্কে দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি গ্রহণ এবং দুর্যোগ পরবর্তী পুনর্বাসনের সময় শিশুদের নিরাপত্তার বিষয় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা, এ ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী শিশুদের নিরাপত্তা বিশেষভাবে বিবেচনা করতে হবে।

মনুষ্যঘটিত কারণে শিল্প বিপ্লবের পর পৃথিবীর তাপমাত্রা এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে, আর তাতেই সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়েছে, লবণাক্ততাসহ প্রাকৃতিক অনিয়ম বেড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব উপকূলীয় অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এবং এই অঞ্চলের নারী ও শিশুদের উপর এর প্রভাব আরও মারাত্মক।

বৈশ্বিক এই সংকট মোকাবিলায় সরকারি-বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক সংস্থা সমূহের একযোগে কাজের কোনো বিকল্প নেই। সরকারের পাশাপাশি আমরা যদি সকলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই দুর্যোগ মোকাবিলা সম্ভব । সরকারের পাশাপাশি প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা নিলে হয়তো আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হবো। তাতে বাঁচবে দেশ —সুরক্ষিত হবে শিশুরা।

https://channelkhulna.tv/

বাংলাদেশ আরও সংবাদ

জলবায়ু পরিবর্তনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হুমকির মুখে শিশুরা

মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশি মাছ ধরার ট্রলারে গুলি, নিহত ১

চেয়ারম্যানসহ পিএসসির ১২ সদস্যের পদত্যাগ

কুমিল্লা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে যুবক নিহত

সুন্দবনে বাঘ বেড়েছে ১১টি

শেখ হাসিনার বান্ধবী কি এখনও সচিব থাকবেন: ফারুক

চ্যানেল খুলনা মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
DMCA.com Protection Status
সম্পাদক: মো. হাসানুর রহমান তানজির
It’s An Sister Concern of Channel Khulna Media
© ২০১৮ - ২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | চ্যানেল খুলনা.বাংলা, channelkhulna.com.bd
যোগাযোগঃ কেডিএ এপ্রোচ রোড (টেক্সটাইল মিল মোড়), নিউ মার্কেট, খুলনা।
প্রধান কার্যালয়ঃ ৫২/১, রোড- ২১৭, খালিশপুর, খুলনা।
ফোন- 09696-408030, 01704-408030, ই-মেইল: channelkhulnatv@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য অধিদফতরে অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিবন্ধনের জন্য আবেদিত।