সব কিছু
facebook channelkhulna.tv
খুলনা শনিবার , ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
‘জান যতক্ষণ না বের হইছে ততক্ষণ ওরা যায় নাই’ | চ্যানেল খুলনা

‘জান যতক্ষণ না বের হইছে ততক্ষণ ওরা যায় নাই’

সাভার (ঢাকা): ঢাকার খুব কাছের একটি ছোট শহর সাভার। ছোট্টো এই শহরে অনেক মানুষের বসবাস।

তাই বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনা ঘটে এখানে। গত শনিবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) সাভার পৌরসাভার ব্যাংক কলোনী এলাকায় তরুণ বয়সের কিছু ছেলের ছুরিকাঘাতে মৃত্যু হয় রোহানুর ইসলাম রোহান (১৮) নামের এক তরুণের। এ ঘটনার পরপরই জড়িত থাকা হৃদয় (১৭) নামে একজনকে আটক করে পুলিশ। রোহানকে মারধর ও হত্যার নির্মম দৃশ্য ধরা পড়েছে একটি সিসিটিভির ক্যামেরায়। ফুটেজটি সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরালও হয়েছে।
এ হত্যাকাণ্ডের ২৬ ঘণ্টা পর রোববার (০৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে নিহতের বাবা আব্দুস সোবহান বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় ১৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১৫-২০ জনের নামে মামলা দায়ের করন। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে আটক আসামি হৃদয়কে এই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ০৮ ফেব্রুয়ারি ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে ঢাকার মুখ্য বিচারিক আদালতে পাঠানো হবে। বাকি আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার করা হবে।

ঘটনার পর দিন রোববার (০৭ ফেব্রুয়ারি) সরজমিনে ঘটনাস্থল সাভারের ব্যাংক কলোনীর মুড়ি মটকা রেস্তোরা এলাকায় ও নিহত রোহানের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও তার পরিবারের সঙ্গে। নিহত রোহানুর ইসলাম রোহান সাভার পৌরসভার উলাইল কর্ণপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুস সোবহানের ছেলে। সে স্থানীয় রোদেলা স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে।

মুড়ি মটকা রেস্তোরার সামনের দোকনদার আজাহার সেই মারধরের ঘটনা সামনা সামনি দেখেছেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘এখানে অনেকেই মুড়ি খেতে আসে। কিন্তু সেদিন সন্ধ্যা থেকেই কিছু ছেলে জড় হতে দেখা গেছে। একটু পর দেখলাম অনেকগুলা ছেলে ভিতরে একজনকে ঘেরাও করে ধরে অনেক মারছে। তবে কাউকে চিনি নাই। আমি গ্যাঞ্জাম দেখে তাড়াতাড়ি দোকানের মাল ভিতরে ঢুকায় ফেইলা বাসায় চলে যায়। পরে শুনলাম একজনকে নাকি মেরে ফেলেছে। ’

রোহানের বাড়ি উলাইল কর্ণপাড়া গিয়ে কথা হয় রোহানের মামা রবিনের সঙ্গে। রবিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘সেদিন বিকেলে আমি রোহানকে ফোন দিছিলাম। রোহানকে বললাম বাবা তোর শীতের মামি পিঠা বানাইছে আইসা পিঠা খা। রোহান আমাকে বলল যে, আমি আসতেছি আপনি থাকেন। ছোট ভাই একটা মোটরসাইকেল নিয়া গেছে, আসলে গাড়ি নিয়া আসতেছি। এরপরর শুনি ওর বন্ধু সিয়ামসহ আরও দুইজন অ্যালাইড স্কুলের ওখানে মুড়ি-মটকা দোকানে মুড়ি খাইতে গেছিলো। তার কিছুক্ষণ পরেই শুনতে পাইলাম ওখানে কিছু ছেলেপেলেরা ওরে রোহানরে) মারধর করতেছে। আমার ছোটভাই তাৎক্ষণিক ওইখানে যায়। যাওয়ার পরে হাসপাতালে গিয়া দেখে রোহান মৃত। ওদের মুখে শুনতে পাইলাম হৃদয়, আশরাফুল, রকি ছিলো। একসঙ্গে পরীক্ষা দিছিলো, ওরা রোহানের সহপাঠী। ’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে রবিন আরো বলেন, আমার ভাগিনা আজ পর্যন্ত কারো সঙ্গে কখনও খারাপ ব্যবহার করে নাই। কারো সঙ্গে ঝগড়াও করে নাই ও এমনিতেই একটু ভিতু প্রকৃতির ছেলে, ভয় পায় বেশি। কালকে আমি সিসিটিভিতে দেখলাম, আমার ভাগিনা ভয়ে দোকানে আশ্রয় নিতে যাইতেছিল। দোকানদার আমার ভাগিনাকে সেখানেও ঢুকতে দেয় নাই। এখানে মানুষ যারা ছিলো আমার ভাগিনাকে কেউ বাঁচাতে আসে নাই। অনেকেই চেষ্টা করলে পারতো। ওরা এখানে মারার পরেও প্রায় ১০-১৫ মিনিট এখানে অবস্থান করছে। আমার ভাগিনার জান যতক্ষণ না বের হইছে ততক্ষণ ওরা যায় নাই। অকালে আমার ভাগিনার প্রাণ যারা কেড়ে নিয়েছে আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। ’

নিহত রোহানের চাচাতো ভাই রাজু আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রেম সংক্রান্ত ঘটনায় রোহানকে গত কয়েকদিন আগে হত্যার হুমকি দিয়েছিল হৃদয়। শনিবার রাতে তার তিন বন্ধুকে নিয়ে মুড়ি খেতে গেলে তার ওপর হামলা চালায় হৃদয়, রাহিদসহ আরও কয়েকজন। ’

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুস সালাম রুবেল বাংলানিউজকে বলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যায় যখন ঘটনা ঘটেছে তারপর আমি এখানে এসেছি। যে মারা গেছে রোহান, তার সঙ্গে আরও তিনজন ছিলো। তারা আমাকে বলেছে, গতকালকে হৃদয় ও রাফি নামে দু’জন রোহানকে তার বাড়ি কর্ণপাড়া থেকে এখানে ডেকে আনে। প্রথমে মোটরসাইকেলে বসা রোহানকে মারতে মারতে মুড়ি-মটকা দোকানের সামনে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরে আবারো দল বেঁধে কিশোর বয়সী ছেলেরা দৌঁড়ে অ্যালাইড স্কুলের গলিতে ঢোকে। পরে আবারো রোহানকে তারা মারতে মারতে গলি থেকে বের করে কিছু দূরে ডানপাশে প্রাচীরের আড়ালে আরেকটি সড়কে নিয়ে যায়। এসময় রোহানকে তারা ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে পালিয়ে যায়। পরে এনাম হাসপাতালে নিয়ে গেলে রোহান মারা যায়।

এদিকে, রোহানের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সোমবার ৮ ফেব্রুয়ারি সাভারের ওলাইলে মানববন্ধন করেছেন তার স্বজন, শিক্ষক ও স্থানীয় বাসিন্দারা। মানবন্ধেনে রোহানের বাবা আব্দুস সোবাহান বলেন, ‘আমি এক হতভাগা বাবা। সেদিন সারাদিন আমার ছেলে বাড়ির নির্মাণ কাজ করতেছিল। এরপর সন্ধ্যার হলে সে ঝাল মুড়ি খেতে যায়। পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে রোহান আমাকে বলে বাবা আমি ১০ মিনিটের ভেতরে বাসায় আসতেছি। তখনই আমার সঙ্গে শেষ কথা হয় রোহানের। পরে রাত ৯টার দিকে অপরিচিত এক নম্বর থেকে আমার কাছে ফোন আসে। ফোনে বলা হয় রোহান এনাম মেডিক্যালের আইসিউতে ভর্তি রয়েছে। আমি হাসপাতালে গিয়ে দেখি আমার ছেলের মরদেহ পড়ে রয়েছে। আমি আমার ছেলে হত্যাকাণ্ডের বিচারই চাই। আর কারো সন্তানের সঙ্গে যেনো এমন না হয়। ’

রোহান হত্যাকাণ্ডের মামলায় যাদের নাম রয়েছে:

সাভারের ছোটো অমরপুর এলাকার হাসেমের ছেলে রাহিদ (১৯), ঘোড়াদিয়া এলাকার জন্টুর ছেলে হৃদয় (১৯), বেদে পল্লী এলাকার আতিকুর রহমানের ছেলে আসিফ (১৮), মধ্যপাড়ার রাকিবুল ইসলাম রকি (২০), ছোটো অমরপুর এলকার তোমর মিয়া ছেলে হৃয়দ (১৯), লুকুসের ছেলে আকিরুল (১৯), ইয়াওলের ছেলে রবিউল (১৯), কামালের ছেলে আপন (২০), কান্ডারের ছেলে শিখর (১৯), পোড়াবাড়ি এলাকার নুরের ছেলে সজিব (২০), ব্যাংক কলোনী এলাকার আইয়ুব আলীর ছেলে দুদুল (২২), বনপাড়া এলাকার মাহবুবুর রহমান খানের ছেলে সিয়াম (২১), তালবাগের সুফিয়ান হৃদয় (২১), আব্দুলের ছেলে তানু (২৭) ও ব্যাংক কলোনী এলাকার সাজ্জাদ (২১)। এছাড়া আরও অজ্ঞাত ১৫-২০ জনেকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন আব্দুস সোবাহান।

ঘটনাস্থলের পাশে সিসিটিভি ক্যামেরায় যা দেখা গেছে:

ব্যাংক কলোনী এলাকার একটি রেস্তরার সামনে রোহানকে প্রথমে মারধর করেন হৃদয়সহ বেশ কয়েকজন। কিছুক্ষণ পরে ২০-৩০ জন কিশোর দলবদ্ধ হয়ে ছুটে এসে বেধড়ক মারতে থাকেন রোহানকে। মারতে মারতে তাকে রেস্তরার গলি থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয় কিছুটা দূরে। এর কিছুক্ষণ পরেই ছুরিকাঘাতে আহত মুমূর্ষু রোহানকে দাঁড় করানোর চেষ্টা করে আবারো রেস্তরার সামনে আনেন আরেক কিশোর। তারাই রোহানকে একটি অটোরিকশায় তুলে সাভার এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।

হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে পুলিশ যা বলছে:

সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম সায়েদ বাংলানিউজকে বলেন, এ ঘটনায় অভিযুক্ত হৃদয় নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আজ দুপুরে আসামি হৃদয়কে রিমান্ড চেয়ে ঢাকার মুখ্য বিচারিক আদালতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া হত্যাকাণ্ডে জড়িত বাকিদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এ নিয়ে নিহতের বাবা একটি মামলা দায়ের করেছে। এছাড়া আমরা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আসামিদের চিহ্নিত করতে পেরেছি।

https://channelkhulna.tv/

সারাদেশ আরও সংবাদ

যুবলীগ কর্মীকে গুলি করে হত্যা

ঢাকা মেডিকেল থেকে ‘ভুয়া নারী চিকিৎসক’ আটক

হাসিনার দুঃশাসনের কারণে কোন লোক আ’লীগের নাম বলার সাহস পাচ্ছে না: মাসুদ সাঈদী

জামায়াত ক্ষমতায় এলে দাবি আদায়ে সংগ্রাম করতে হবে না: শফিকুর

খুঁটির সঙ্গে বেঁধে পেটানোর ৭দিন পর যুবলীগ নেতার মৃত্যু

প্রবাসীর স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা, আটক ২

চ্যানেল খুলনা মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
DMCA.com Protection Status
সম্পাদক: মো. হাসানুর রহমান তানজির
It’s An Sister Concern of Channel Khulna Media
© ২০১৮ - ২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | চ্যানেল খুলনা.বাংলা, channelkhulna.com.bd
যোগাযোগঃ কেডিএ এপ্রোচ রোড (টেক্সটাইল মিল মোড়), নিউ মার্কেট, খুলনা।
প্রধান কার্যালয়ঃ ৫২/১, রোড- ২১৭, খালিশপুর, খুলনা।
ফোন- 09696-408030, 01704-408030, ই-মেইল: channelkhulnatv@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য অধিদফতরে অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিবন্ধনের জন্য আবেদিত।