চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফা) খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার সাধারণ কেয়ার টেকার মো. আল-আমিন ফকির কর্তৃক দাওরা হাদিস (মাওলানা) শ্রেণির জাল সনদ দিয়ে চাকরি এবং মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের শিক্ষা কেন্দ্র বরাদ্দের নামে নিয়োগ বাণিজ্যের ঘটনায় তোলপাড় সৃস্টি হয়েছে। বিষয়টি স্থানীয় আলেম সমাজের মধ্যে ব্যাপক সমালোচনার সৃস্টি হয়েছে।
এদিকে, তার এ অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনা খতিয়ে দেখতে রোববার (২৯ ডিসেম্বর) দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন খুলনা বিভাগীয় পরিচালক এবং দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলাদাভাবে তদন্ত কমিটি দু’টি গঠন করেছেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন খুলনা বিভাগীয় পরিচালকের নির্দেশে গঠিত চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির আহবায়ক করা হয়েছে ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমির সহকারী পরিচালক মো. তবিবুর রহমানকে এবং সদস্য সচিব হচ্ছেন পরিচালকের পিএ আব্দুল হামিম। এছাড়া সদস্যরা হলেন মো. কামরুল ইসলাম ও মো. নূরুল ইসলাম। অপরদিকে, দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে গঠিত এক সদস্য বিশিষ্ট কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মাহফুজুর রহমানকে।
তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন খুলনা বিভাগীয় পরিচালক শাহীন বিন জামান বলেন, তদন্ত কমিটিকে বিষয়টি যাচাই-বাছাই পূর্বক দ্রæততম সময়ের মধ্যে রিপোর্ট দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সত্যতা প্রমাণিত হলে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কর্তৃক গঠিত কমিটির প্রধান উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, পুরো বিষয়টি তদন্ত পূর্বক যথা সময়ে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
এদিকে, আসছে বছরের শুরুতে মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের নতুন শিক্ষা কেন্দ্র বরাদ্দ ও শিক্ষক নিয়োগে বড় ধরণের বাণিজ্যের লক্ষে নয়া কৌশল শুরু করেছেন অভিযুক্ত কেয়ার টেকার মো. আল-আমিন ফকির। তিনি ইতিমধ্যেই পুরাতন কেন্দ্র বাতিল এবং শিক্ষকদের ছাটাই করে অর্থ নিয়ে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দিতে বিভিন্ন অজুহাত খুঁজছেন। এরই অংশ হিসেবে ১৫জন শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে। এছাড়াও অনেককেই হয়রানি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
শিক্ষা কেন্দ্রের ১৫জন শিক্ষককে শোকজের বিষয়টি স্বীকার করেছেন উপজেলা ফিল্ড সুপারভাইজার মুহাম্মদ নূরুল ইসলাম। তিনি বলেন, তিনি নিজে, আল আমিন এবং হাফিজুর রহমান তিনজন মিলেই তারা এ তালিকা করেছেন। এখানে আল আমিনের ব্যক্তিগত কোন উদ্দেশ্য আছে-কিনা সেটি তার জানা নেই।
উল্লেখ্য, খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার হাজী গ্রামের নূর মোহাম্মদ ফকিরের ছেলে মো. আল-আমিন ফকির ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফা)’র উপজেলার সাধারণ কেয়ার টেকার পদে নিয়োগ পান। এরপর থেকে তিনি ইফার জেলা ও বিভাগীয় কার্যালয়ের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজস এবং স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় শিক্ষা কেন্দ্র বরাদ্দ ও শিক্ষক নিয়োগের কথা বলে ব্যাপক অর্থ বাণিজ্য শুরু করেন। এভাবে গত তিন বছরে তিনি লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। নিয়োগের প্রতিশ্রæতিতে অর্থ গুণতে গিয়ে স্থানীয় আলেম-উলামাগণ তার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। ঘুষ ছাড়া কোন শিক্ষক নতুন কেন্দ্র পাচ্ছেন না। এ বিষয়ে ইতিপূর্বে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, আল-আমিন ফকির তেমন লেখাপড়া করেনি। কিন্তু সে উপজেলার সেনহাটিস্থ জামেয়া আরাবিয়া জাকারিয়া দারুল উলুম মাদরাসার নামে দাওরা হাদিস পাসের একটি জাল সনদ দিয়ে চাকরি করছেন। অথচ: ওই প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে ও মাদরাসার হাজীরা খাতার তথ্য নিয়ে জানা গেছে, সে কখনই ওই প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়ন করেনি। এ ধরণের জালিয়াতি এবং অর্থ বাণিজ্যের বিষয়ে তদন্ত পূর্বক তার কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন অভিযোগকারীরা। যদিও অভিযুক্ত আল আমিন ফকির এসব অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার বলে দাবি করেছেন।