চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ খুলনা থেকে ঢাকা ট্রেন পথে ৫৭০ কিলোমিটার। সময় লাগে প্রায় দশ ঘন্টা। এই সময়ে যাত্রীদের খাবারের জন্য ট্রেনের ওপরই নির্ভর করতে হয়। এ কারণে প্রতিটি ট্রেনেই রেলওয়ের মনোনীত ক্যাটারিং সার্ভিস রয়েছে। তবে তাদের খাবারের দাম ও মান নিয়ে যাত্রীদের তিক্ততা বরাবরই।
শুধু খুলনা থেকে ঢাকা নয়। দেশের যে কোন রুটেই ট্রেনের খাবাবের মান ও দাম নিয়ে প্রশ্ন তোলেন যাত্রীরা। আর প্রশ্ন সব সময়ই প্রশ্নের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে।
দিনের পর দিন, বছরের পর বছর পার হলেও এই অবস্থার কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না লম্বা সময়ের এ যানে। খাবারে দাম ও মান নিয়ে অরাজকতা চলছে ট্রেনগুলোতে। যাত্রীদের অভিযোগ ট্রেনের খাবার বাসি, দামও বেশি। দক্ষিণাঞ্চলের রেলের এই রুটে খাবার সরবরাহ করে আসছে বিল্লাল ব্রাদার্স কোম্পানী নামক একটি ঠিকাদার
প্রতিষ্ঠান।
আগে যাত্রীদের সুবিধার্থে ট্রেনের সাউন্ড বক্স থেকে বিভিন্ন প্রকার ঘোষণা আসত। ‘কোনো অপরিচিত ব্যক্তির হাতে কিছু খাবেন না। ট্রেনের মধ্যে খাবারের তালিকা দেওয়া আছে। খাবার সম্পর্কে কোনো অভিযোগ থাকলে তা লিখে অভিযোগ বক্সে ফেলুন। ক্যাশমেমো নিয়ে খাবারের বিল পরিশোধ করুন’। যা বর্তমানে নেই। আর ট্রেনে এমন ঘোষণা থাকলেও কোনো বগিতেই খাবারের তালিকা খুঁজে পাওয়া যায়নি। আর পরীক্ষা করার জন্য খাবারের বিল পরিশোধের সময় ক্যাশ মেমোর কথা বলেও কোন লাভ নেই। এককথায় উত্তর খাইলে খান, না খাইলে যান।
যেনো ক্যাশ মেমো চাওয়াটা অপরাধ।
ট্রেনে ভেজাল ও নি¤œমানের খাদ্য প্রতিরোধে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ও মহাপরিচালকের কাছে চিঠিও দিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির যথাযথ অনুশীলনের মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্যপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিতকরণে খাদ্য উৎপাদন, আমদানী, প্রক্রিয়াকরণ, মজুদ, সরবরাহ, বিপণন ও বিক্রয় সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম সমন্বয়ের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে নিরাপদ খাদ্য আইন,২০১৩ প্রবর্তন করা হয়েছে। দেশবাসীর জন্য নিরাপদ খাদ্যপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা বিধান প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার।
সূত্র জানায়, ক্যাটারিং সার্ভিসের মাধ্যমে কারা কোন ট্রেনে খাবার সরবরাহ করবে তা টেন্ডারের মাধ্যমে নির্ধারণ করার নিয়ম। কিন্তু তা মানা হয় না। দেখা যায়, যারা একবার ক্যটারিং সার্ভিসের অধিভূক্ত হয়েছে তারাই ঘুরে ফিরে খাবার সরবরাহের দায়িত্ব পায়। নির্দ্দিষ্ট কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বাইরে কেউই খাবার সরবরাহের সুযোগ পায় না। সাধারণ যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শুধু পুরাতন ও বাসি খাবার নয় ট্রেনে প্রতিটি খাবারের দাম নেয়া হয় তুলনামূলক বেশি। আবার যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী খাবার রাখা হয় না। এ কারনে অনিচ্ছা সত্ত্বেও যাত্রীরা সরবরাহকৃত খাবার কিনতে বাধ্য হয়। বিশেষ করে কাটলেট ও চিকেন নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগ বেশি। বেশিরভাগ সময়ে এই দুই খাবার পুরাতন ও বাসি হয়ে থাকে বলে যাত্রীদের অভিযোগ। সকল পণ্যের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের থেকে পাঁচ থেকে দশ টাকা দাম বেশি নিয়ে থাকে। সামান্য লাল চায়ের দাম এখানে ২০ টাকা।
গত ২১ ফেব্রুয়ারি চিলাহাটি-খুলনা রুটে রূপসা এক্সপ্রেসে সৈয়দপুর থেকে খুলনা আসেন, খুলনা জজ কোর্টের আইনজীবী এড. ড. মোঃ জাকির হোসেন। যাত্রা পথে ট্রেন থেকে খাবার কিনে প্রতারিত হন তিনি। খাবার মুখে দিতেই বমি চলে আসে তার। কাটলেট ও চিকেন ১৫০ টাকা দিয়ে কিনেও পঁচা-বাসি হবার কারণে খেতে পারেন নি। বিক্রেতার কাছে ক্যাশ মেমো চেয়েও তিনি পাননি। পরে ম্যানেজারকে ডাকা হলে তিনিও অপারগতা স্বীকার করেন। এরপর ২ মার্চ তিনি
খুলনা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন। যেখানে তিনি উল্লেখ করেন, সেবার মূল্য তালিকা সংরক্ষণ ও প্রদর্শন না করিয়া, অধিক মূল্যে ভেজাল বাসি পঁচা ফাস্ট-ফুড বিক্রয়, মানসম্মত খাবারের কথার প্রতিশ্রুতি দিয়া অখাদ্য, পঁচা, মেয়াদ উত্তীর্ন, অস্বাস্থ্যকর, জীবন হানিকর খাবার সাপ্লাই করিয়া ট্রেনে ভোক্তাদের অধিকার ক্ষুন্ন করছে। যার ফলে ভোক্তাদের মারতœক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পরার সম্ভাবনা রয়েছে।
খুলনা রেলষ্টেশন এর টিআইসি শামীমুর রহমান বলেন, আমাদের প্রতিটি ট্রেনেই অভিযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। কোন যাত্রীর সমস্যা হলে সাথে সাথে ম্যানেজারকে অভিযোগ দেওয়ার কথা লেখা আছে। এখন কেউ প্রমান সহ অভিযোগ না দিলে আমরা কি করতে পারি।
খুলনা রেলষ্টেশন এর ষ্টেশন মাষ্টার বুলবুল আহমেদ বলেন, আমি এখানে মাত্র কয়েকদিন হল এসেছি। এখনো সব কিছু বুঝে পাই নাই। যার কারনে আমি এ বিষয়ে কিছুই বলতে পারবো না।
খুলনা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শিকদার শাহীনুর আলম বলেন, অভিযোগটি আমলে নিয়ে আমরা তাদেরকে ডাকবো। এর আগেও আমরা এমন অভিযোগ পেয়েছি। তিনি আরও বলেন, সেবার মূল্য তালিকা সংরক্ষণ ও প্রদর্শন না করা অপরাধ। অতি দ্রুত তাদের কাছে এর ব্যাখ্যা চাওয়া হবে।