ডুমুরিয়া (খুলনা) পৃথিবীর সবচেয়ে দামি আম হলো ‘মিয়াজাকি’ বা সূর্যডিম আম’। বাহারি রঙের দৃষ্টিনন্দন এই আমের প্রজাতিটি জাপানের মিয়াজাকি অঞ্চলের। এই আমটি চাষ করেছেন খুলনার জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার বরাতিয়ার নবদ্বীপ মল্লিক।
মিয়াজাকি আম পৃথিবীর সবচেয়ে দামি ও পুষ্টিসমৃদ্ধ আমের প্রজাতি। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এই আম চাষ হচ্ছে। এই আম নেট দুনিয়ার মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ২০১৭ সালে, যখন জাপানের ফুকুওকা শহরের একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে নিলামে এক জোড়া আমের দাম ওঠে পাঁচ লাখ জাপানি ইয়ান। অর্থাৎ বাংলাদেশি টাকায় সাড়ে তিন লাখ টাকার ওপরে।
প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ ইবনে সাদিক শাহিন বলেন, ‘শখ করে ৭-৮ মাস আগে মিয়াজাকি জাতের আমগাছটি বাসার ছাদে লাগিয়েছিলাম। ফলনও এসেছে ভালো। গাছটিতে পাঁচটি আম ধরেছে।’
তিনি বলেন, ‘বাগান আকারে যদি এটি চাষ করা যায় তাহলে ভালো আয় করা সম্ভব। বর্তমান বাজারে এর চাহিদা অনেক ও আন্তর্জাতিক বাজারেও বেশ কদর রয়েছে। যার ফলে মিয়াজাকি চাষে উচ্চমূল্য পাওয়া সম্ভব।
উল্লেখ্য গত ২০ মে থেকে ডুমুরিয়া উপজেলার খর্নিয়া বাজারে এসেছে সুমিষ্ট আম। গুটি আম দিয়ে শুরু হলেও গোপালভোগ আমের দিকে নজর ছিল সবার। তবে, গতবছরের তুলনায় বাজারে প্রকারভেদে দ্বিগুণ থেকে তিনগুন আমের দাম। আমচাষি ও বাগান মালিকরা বলছেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে আমের মুকুল ঝরে পড়েছে। এর ফলে বাগানে আমের পরিমাণ গত বছরের তুলনায় অর্ধেকেরও কম। উৎপাদন কমে যাওয়ায় মৌসুমের শুরু থেকেই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে আম।
বেঁধে দেয়া নিদৃষ্ট সময়ের প্রথম দিন থেকেই উপজেলার খর্নিয়া বাজারে বিভিন্ন গুটি ও গোপালভোগ জাতের আম উঠেছে। গোপাল ভোগ আম বেশিদিন বাজারে থাকে না। বর্তমানে বাজারে গোপালভোগ প্রায় শেষ। এখন হিমসাগর বাজার মাতাচ্ছে।
খুলনা ডুমুরিয়া উপজেলা সদর সহ খর্নিয়া বাজারে বিক্রি হচ্ছে মৌসুমী আম। খুচরা বিক্রেতারা ভ্যানে করে বিক্রি করছেন রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আবারো কেও পাড়া মহল্লায় ফেরি করে।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ইনসাদ ইবনে আমিন ওরফে তুহিনবলেন, ডুমুরিয়ার আম্য চাষীদের আমবাগান গুলোর জন্য ডুমুরিয়া কৃষি অফিস পরামর্শ দিয়ে আসছে। কৃষি বিভাগের লোকজন সবসময়ই ডুমুরিয়ার১৪ইউনিয়ানের বাগান গুলোর আম চাষীদের কে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে উপজেলার সব বাগানেই আমের ফলন হয়েছে।
শনিবার (১৪জুন) মঙ্গলবার সকালে আমের আড়ত থেকে গোপালভোগ আম নিয়ে উপশহর এলাকায় বিক্রি করছেলেন শান্তুনি মল্লিক ।তিনি বলেন, গাছে এবার আম খুব কম। তাই দাম বেশি।
গোপালভোগ আম বিক্রি করছি ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে। উপজেলার ১৮ মাইল আমের হাটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি মণ কাঁচা গোপালভোগ আম চাষিদের কাছ থেকে আড়তগুলোতে কেনা হয়েছে ২৯০০ থেকে ৩ হাজার টাকা মণ দরে। দু-এক দিনের মধ্যে দাম আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
এছাড়া অন্যান্য আমের মধ্যে হিমসাগর ও ল্যাংড়া প্রতি মণ (৪০ কেজি) ২৫০০ থেকে ২৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
সবচেয়ে কমদামী আম (আটির) বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ১৬০০ টাকা মন দরে । যার প্রতি কেজির দাম পড়ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা এবং গুটি জাতের আম ১৩ থেকে ১৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কেবল আসতে শুরু করেছে ল্যাংড়া আম। ৮০ টাকা কেজি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। ফলের মোকামে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এবারে আমের বেশ চাহিদা রয়েছে।
খর্নিয়া আম ব্যবসায়ী জাহাতাফ শেখ বলেন,প্রতিবছর কয়েক কোটি টাকার আম বেঁচাকেনা হয়। বাজারে আমচাষি, ব্যবসায়ীরা এবার বেশ উৎফুল্ল। ল্যাংড়া আসতে শুরু করেছে। দাম গতবারের তুলনায় এবার মণে ৫ থেকে ৬০০ টাকা বেশি। এখান থেকে আম কিনে লাভ করেই বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা। আর বাজারের ভেতরে আরো বেশি দাম। হাটে যে আম ৫০ টাকা কেজি ,সেটা খুচরা বাজারে ৮০ টাকার কম পাওয়া যাচ্ছে না।
এবিষয়ে কথা হয় ডুমুরিয়া উপজেলার উপ-কৃষি কর্মকর্তা মোঃ ইকবাল হোসেনর সাথে তিনি বলেন, এবার বাজারে আগের তুলনায় আম একটু কম হলেও দাম একটু চড়া যে কারণে কৃষক এবার অনেক খুশি।