শেখ মাহতাব হোসেন, ডুমুরিয়া (খুলনা) প্রতিনিধি:: খুলনার ডুমুরিয়ায় বাড়ীতে বাড়ীতে পেয়ার পাতার চা তৈরি করে খাচ্ছে। ডুমুরিয়া উপজেলার গোনালী গ্রামের পেয়ারার পাতার চা খাওয়া ব্যাক্তি মনি নন্দী, বলেন পেয়ারার গুণাগুণ সম্পর্কে তো সবারই জানা আছে। কিন্তু কজনই বা জানেন যে পেয়ার পাতার অন্দরেও এমন অনেক উপকারি উপাদান মজুত রয়েছে, যা নানাভাবে শরীরের উপকারে লেগে থাকে। তাই তো আজ এই প্রবন্ধে পেয়ারা পাতা দিয়ে বানানো চায়ের এমন কিছু উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হবে, যা পড়তে পড়তে বাস্তবিকই আপনার চোখ কপালে উঠে যাবে।
উল্লেখ্য, ইতিহাসের পাতা ওল্টালে জানতে পারা যায় কয়েকশো বছর আগে থেকেই মেক্সিকো এবং দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশে কোচি পেয়ারা পাতা দিয়ে বানোন চা পানের রেওয়াজ ছিল। কারণ তাদের ধরণা ছিল এই পানীয়টি পান করলে একাধিক রোগ দূরে থাকতে বাধ্য হবে। সেই কারণেই তো আজও ল্যাটিন আমেরিকার বাসিন্দারা পেয়ারা পাতা দিয়ে বানানো চা পান করে থাকেন। কিন্তু আমরা বাংলাদেশীরা এই বিষয়ে এতদিন পর্যন্ত কোনও খোঁজ রাখেনি। তাই তো আজ আপনাদের সামনে পেয়ারা পাতা দিয়ে বানানো চা পান করলে কী কী উপকার মিলতে পারে, সে বিষয়ে আলোকপাত করার চেষ্টা করা হল।
পেয়ারা পাতা ফুটিয়ে বানানো চায়ে এত মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি এবং ফ্লেবোনয়েড থাকে যে তা শরীরে প্রবেশ করার পর নানাভাবে শরীরের গঠনে সাহায্যে করে থাকে। যেমন সাও পাওলোর একদল গবেষকের করা এক বিশেষ গবেষণায় একথা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে পেয়ারা পাতার অন্দরে উপস্থিত বেশ কিছু উপাকারি উপাদান শরীরে প্রবেশ করার পর স্টেফিলোকক্কাস ব্যাকটেরিয়াকে দ্রুত মেরে ফেলে। ফলে ডায়ারিয়ার প্রকোপ কমতে সময় লাগে না। প্রসঙ্গত, এই স্টোফিলোকক্কাস ব্যাকটেরিয়ার কারণেই মূলত ডায়ারিয়া রোগ হয়ে থাকে। তাই একবার এই জীবাণুটি মারা গেলে লুজ মোশান কমতে সময়ই লাগে না।
প্রসঙ্গত, এমন পরিস্থিতিতে প্রথমে এক কাপ গরম জলে কয়েকটি পেয়ারা পাতা মিশিয়ে ফুটিয়ে নিতে হবে। তারপর জলটা ছেঁকে নিয়ে খালি পেটে পান করতে হবে। এমনটা কয়েকবার করলেই দেখবেন আরাম মিলতে শুরু করেছে।
নিউট্রিশন অ্যান্ড মেটাবলিজম পত্রিকায় প্রকাশিত একটি স্টাডি অনুসারে টানা ৮ সপ্তাহ পেয়ারা পাতা দিয়ে বানানো চা পান করলে রক্তে উপস্থিত খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে হার্টের কর্মক্ষমতাও বাড়ে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কোনও ধরনের করোনারি আর্টারি ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়।
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে এই বিশেষ ধরনের পানীয়টি পান করার পর শরীরে বেশ কিছু এনজাইমের ক্ষরণ বেড়ে যায়, যা রক্তে সুগারের মাত্রা হঠাৎ করে বাড়তে দেয় না। সেই সঙ্গে ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা এতটা বাড়িয়ে দেয় যে ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওযার সুযোগই পায় না। তাই তো ডায়াবেটিক রোগীদের কাছে অনুরোধ আপনারা যদি প্রয়োজন মনে করেন, তাহলে পেয়ারা পাতা দিয়ে বানানো চা পান করতে ভুলবেন না যেন!
এবার আপনার নিউ ইয়ার রেজিলিউশান কী ওজন কমানো হতে চলেছে? তাহলে তো বন্ধু আজ থেকেই রোজের ডেয়েটে এই বিশেষ ধরনের চাটিকে অন্তর্ভুক্তি করতেই হবে। কারণ পোয়ারা পাতায় উপস্থিত নানাবিধ পুষ্টিকর উপাদান কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেডকে শর্করায় রূপান্তরিত হতে দেয় না। ফলে ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কা অনেকাংশেই হ্রাস পায়।
গত কয়েক দশকের পরিসংখ্যানের দিকে নজর ফেরালে বুঝতে পারবেন আমাদের দেশে কীভাবে ক্যান্সার রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পয়েছে। এমন পরিস্থিতে পেয়ারা পাতা দিয়ে বানানো চায়ের গুরুত্ব যে অনেকাংশেই বৃদ্ধি পয়েছে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কারণ এই প্রকৃতিক উপাদানটিতে থাকা ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে উপস্থিত টক্সিক উপাদানদের বরে করে দেয়। ফলে ক্যান্সার সেল জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।
প্রসঙ্গত, গবেষণায় দেখা গেছে পেয়ারা পাতায় উপস্থিত লাইকোপেন নামক একটি উপাদান ব্রেস্ট, প্রস্টেট এবং ওরাল ক্যান্সার প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন, প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং আয়রন থাকার কারণে এই পানিয়টি নিয়মিত পান করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এতটা বেড়ে যায় যে শুধু জ্বর কেন, কোনও ধরনের রাগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। সেই সঙ্গে সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়। তাই এই শীতকালে সুস্থ থাকতে এই ঘরোয়া ঔষধিটি চেখে দেখতে পারেন।
পেয়ারা পাতায় উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, নার্ভাস সিস্টেমে যাতে কোনও ধরনের প্রদাহ সৃষ্টি না হয় সেই দিকে খেয়াল রাখে। সেই সঙ্গে বিশেষ কিছু হরমোনের ক্ষরণ এত মাত্রায় বাড়িয়ে দেয় যে অনিদ্রার সমস্যা কমতে সময় লাগে না।