শেখ মাহতাব হোসেন:: খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা। সবজির চাষে কম খরচে বেশি লাভবান হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে এ চাষ করছেন কৃষকরা। বর্তমানে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শিম, টমেটো, বেগুন, করলা, লাউ, বরবটি, মুলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লালশাক, পুঁইশাকসহ নানা জাতের শীতকালীন সবজি চাষে সমারোহ হয়ে উঠেছে এলাকা। ভোর থেকেই লোকজন ছুটে চলেছেন সবজি ক্ষেতে। এরমধ্যে কেউ করছেন জমি প্রস্তুত, কেউবা করছেন আবাদ, আবার কেউবা সবজির পরিচর্যাসহ বাজার জাত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
এ উপজেলার মাটির গুণাগুণ ভালো হওয়ায় এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকরা সবজি চাষে নিরব বিপ্লব ঘটিয়েছে। এখানকার উৎপাদিত সবজি নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গাতে বিক্রি করে তারা লাভবান হচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, এ উপজেলায় প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন নানা প্রজাতির সবজি চাষের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। বর্তমান সরকার কৃষিবান্ধব সরকার হওয়ায় সবজি চাষে কৃষকদের মাঝে মানসম্পন্ন বীজ ও সারসহ অন্যান্য উপকরণ দিয়েছেন। বেশিরভাগ কৃষক মালচিং পদ্ধতি, বেড পদ্ধতি, হলুদ ফাঁদ, জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করে নিরাপদ সবজি উৎপাদন করছেন। বাজারে এসব সবজির প্রচুর চাহিদা থাকায় এবং ভালো দাম পাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।
সরেজমিন উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের বিভিন্ন বাজারসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় গিয়ে দেখা যায় সবজি চাষ নিয়ে স্থানীয় চাষিরা এক ব্যস্ত সময় পার করছেন। এরমধ্যে কেউ কীটনাশক স্প্রে করছেন। কেউবা জমির আগাছা পরিচর্যা করছেন। কেউ বা আবার সবজি তুলে বাজারে বিক্রি করছেন। সব মিলিয়ে সকাল থেকেই শীতকালীন সবজি নিয়ে কৃষকদের বিভিন্ন কর্ম ব্যস্ততা দেখা গেছে।
কৃষক শুরেশ্বর বলেন, দেশীয় পদ্ধতিতে প্রায় ৬০ শতক জায়গায় শীতকালীন টমেটো, লাউ, লাল শাক, মুলা, চাষ করেন। জায়গা প্রস্তুত, চারা, বেড়া দেওয়াসহ অন্যান্য খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। এরই মধ্যে লাউ, মুলা আর লাল শাক বিক্রি শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত ১৫ হাজার টাকা সবজি বিক্রি করা হয়।
তিনি আশা করছেন এ মৌসুমে ১ লাখ টাকার সবজি বিক্রি হবে। গত বছর এই জায়গা থেকে সবজি চাষ করে ৭০ হাজার টাকা তার আয় হয়। কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, নানা প্রতিকুলতা অপেক্ষা করে ৭০ শতক জায়গায় লাউ, বেগুন, করলা, লাল শাখ চাষ করেন। আবাদের শুরুতে কয়েক দফা বৃষ্টিতে সবজি ক্ষেত কিছুটা নষ্ট হয়ে যায়। কৃষি অফিসের সহযোগিতায় পুনরায় সবজি আবাদ করেন। এতে ফলন তুলনামূলক ভালো হয়। বর্তমান বাজারে সবজি বিক্রিতে ভালো দাম পাচ্ছেন। তিনি আশা করছেন নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে ও খরচ বাদে ৮০ হাজার টাকা আয় হবে।
কৃষক মো. সোহাগ মিয়া বলেন, এ মৌসুমে দেশীয় পদ্ধতিতে ১৩০ শতক জমিতে শীত কালীন ফুলকপি, মুলা, লাল শাক, টমোটোসহ নানা জাতের সবজির আবাদ করা হয়। এরমধ্যে ফুল কপি চারা লাগানো হয়েছে ৬ হাজার। এ চাষে খরচ হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। ইতিমধ্যে মুলা, লাল শাক বিক্রি শুরু হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে খরচ বাদে আশা করছি দেড় লাখ টাকা আয় হবে।
তিনি আরো বলেন, ওই জমিতে যদি ধান আবাদ করা হতো তাহলে ৪০ হাজার টাকার বেশি ধান পাওয়া যেতো না। তাই ধান ছেড়ে সবজি আবাদ করছি। কৃষক গোলাম রসুল বলেন, এক সময় তিনি ধান আবাদ করতেন। ধান চাষে লোকসান হওয়ায় গত কয়েক বছর ধরে সবজি আবাদ করছেন। এ মৌসুমে তিনি ২ বিঘা জমিতে টমেটো, লাউ, লাল শাখ, বেগুন আবাদ করেন। এরই মধ্যে সবজি বিক্রি শুরু হয়েছে। বিক্রিতে ভালো দাম পাওয়ায় তিনি খুবই খুশি।
কৃষক আব্দুল জলিল বলেন, সবজি চাষে খরচ কম লাভ বেশি হওয়ায় দীর্ঘ ৮ বছর ধরে চাষ করছি। এ মৌসুমে শীতকালীন বাঁধাকপি লাউ, মুলা, লাল শাকসহ নানা জাতের সবজি আবাদ করা হয়েছে। ফলন ভালো হয়েছে। নিজেদের পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা মিটিয়ে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে ভালো টাকা আয় হবে।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন, এ উপজেলার বছর জুড়ে নানা প্রকার সবজি আবাদ হচ্ছে। ফলন বৃদ্ধিতে সব সময় স্থানীয় কৃষকদেরকে পরামর্শ দেওয়া হয়। তিনি আরো বলেন, কয়েক দফা বৃষ্টি হওয়ায় কিছু ক্ষতি হলেও নিয়মিত পরিচর্যার কারণে সবজির ভালো ফলন হয়েছে। তাছাড়া স্থানীয় বাজারে সবজির দাম ভালো থাকায় এ চাষে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে বিভিন্ন ধরণের সবজি চাষ।