ডুমুরিয়ার নদীতে কুমির আতঙ্কে জেলেরা মাছ ধরছেন না। গত ৮জুলাই থেকে দুটি জেলে নৌকায় একটি কুমিরের আক্রমণ করার পর থেকে এই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। জেলেদের দাবি, তাঁরা অন্তত ২টি কুমিরকে ভাসতে দেখেছেন।
এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর জেলার শোভনা,জিয়েল তলা ও চাকুন্দিয়া গ্রামের জেলেরা কিছু দিন ধরে নদীতে মাছ ধরতে নামছেন না। প্রত্যক্ষদর্শী তিন-চারজন জেলে জানান, দুই গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবাহিত ভদ্রা নদীটি বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিশেছে।
৮জুন সকালে উপজেলার ভদ্রা নদী-সংলগ্ন চাকুন্দিয়া গ্রামের জেলে মহিতোষ জাল নিয়ে নদীতে মাছ ধরতে যান। এ সময় একটি কুমির তার নৌকায় হামলা করে। পরে মহিতোষ ও তার সহযোগী জেলেরা জাল ফেলে রেখে দ্রুত নৌকা নিয়ে কিনারে আসেন। কিনারে এসে এই ঘটনা এলাকার অন্য জেলেদের কাছে জানালে প্রথমে কেউ বিশ্বাস করতে চাননি।
পরে ওই দিন দুপুরে নদীতে ভাসতে দেখে এলাকার বাসিন্দা নাসিমা বেগম তাঁর বোনের ছেলে রাব্বিকে নিয়ে নদীতে পানি আনতে গেলে নদীর কিনারে গিয়ে দেখেন সেখানে ১টি কুমির চরের সামান্য পানিতে ভাসছে। তারা আতঙ্কে দৌড়ে বাড়ি চলে আসেন।
একইভাবে ৮জুলাই পাশের গ্রাম বরাতিয়ার জেলেরা নদীতে জাল ফেলতে যান। এ সময় ওই জেলেদের একটি নৌকায় ১টি কুমির হানা দেয়। এতে অল্পের জন্য নৌকার জেলেরা রক্ষা পান।
ভদ্রাদিয়া গ্রামের জেলে হেলাল জাল নিয়ে নদীতে রওনা দেন। তিনি তীরমুনি এলাকার নদীর কিনারে গেলে সেখানে ২টি কুমিরকে ভাসমান অবস্থায় দেখতে পান। পরে আতঙ্কে তিনি জাল-নৌকা ফেলে কিনারে উঠে স্থানীয় লোকজনকে খবর দেন। খবর পেয়ে সেখানে শতাধিক লোক নদীর পাড়ে ছুটে এসে ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন।
কয়েক দিন ধরে একের পর এক জেলে নৌকায় কুমিরের হানা দেওয়ার খবর জেলে ও সাধারণ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ায় উপজেলার জেলেদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ফলে দুদিন ধরে কুমিরের ভয়ে ভদ্রা নদীতে জেলেরা মাছ শিকার বন্ধ রেখেছেন। উপজেলার শোভনা গ্রামের শেখ এরশাদ আলী বলেন, কয়েক দিন ধরে আমাদের নদীতে কুমির দেখা যাচ্ছে। জিয়েল তলা এলাকায় নদীর তীরে থেকে ১টি ছাগল কুমিরে খেয়ে ফেলেছে।
এরপর গোটা এলাকার জেলেদের মধ্যে কুমির আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে বঙ্গোপসাগরের মোহনা থেকে ৫০০ ঔ কিলোমিটার পর্যন্ত নদীতে ৮জুলাই সকাল থেকে কুমির আতঙ্কে জেলেরা মাছ ধরা বন্ধ করে দিয়েছে। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এব্যাপারে ডুমুরিয়া উপজেলার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: আবুবকর সিদ্দিক বলেন, ‘নদীতে কুমির এসেছে এ কথা শুনে আমি নিজে নদীটি পরিদর্শন করি এবং ঘটনার সত্যতা পাই। অনেক জেলে ফোন করে আমাকে বিষয়টি জানিয়েছেন।
আমরা ধারণা করছি, বঙ্গোপসাগর থেকে দলছুট হয়ে এ কুমির শাখা নদীতে প্রবেশ করেছে। নদীতে আসা এসব কুমির যাতে জেলেরা সংঘবদ্ধ হয়ে মেরে না ফেলে সে জন্য জেলে ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সচেতন করা হয়েছে।