সব কিছু
facebook channelkhulna.tv
খুলনা রবিবার , ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
তরুণরা শুধু আক্রান্ত হচ্ছেন না, ঝুঁকিও বাড়াচ্ছেন | চ্যানেল খুলনা

তরুণরা শুধু আক্রান্ত হচ্ছেন না, ঝুঁকিও বাড়াচ্ছেন

করোনাভাইরাসে দেশে আক্রান্ত ও মৃত্যু উভয়ই বেড়ে চলেছে। নতুন করে আক্রান্ত হওয়াদের অধিকাংশই তরুণ এবং অনেকের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) সাপোর্ট প্রয়োজন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তরুণরা যে শুধু আক্রান্তই হচ্ছেন তা নয়, বরং বেপরোয়া চলাফেরা করে অন্যদের জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছেন।

মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে এক হাজার ৭১৯ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। ফলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৬০ হাজার ৮৮৭ জনে। এছাড়াও ভাইরাসটিতে নতুন করে আরও ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল আট হাজার ৫৯৭ জনে।

দীর্ঘ সময় পর এই নিয়ে টানা সাত দিন করোনায় দৈনিক হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। ১০ মার্চ ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ১৮ জন। এরপর ১১ মার্চ এক হাজার ৫১; ১২ মার্চ এক হাজার ৬৬; ১৩ মার্চ এক হাজার ১৪; ১৪ মার্চ এক হাজার ১৫৯ এবং সোমবার (১৫ মার্চ) ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৭৭৩ জন। আজকেসহ টানা দুদিন ২৬ জন করে মৃত্যু হয়েছে। এর আগের দিন (১৪ মার্চ) ভাইরাসটি ১৮ জনের প্রাণ কেড়ে নেয়।

সরকারি সংস্থা রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) তথ্যমতে, দেশে করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত মোট আক্রান্তের ৫০ শতাংশেরই বয়স ২১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে।

যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যমতে, সারাবিশ্বেই তরুণদের আক্রান্ত হওয়ার হার বাড়ছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা, সাউথ ক্যারোলাইনা, জর্জিয়া ও টেক্সাসসহ আরও কিছু অঙ্গরাজ্যে তরুণদের বেশি আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। অপেক্ষাকৃত কম বয়সীদের বেশি হারে আক্রান্ত হওয়াকে এখন বিশ্বব্যাপী বিশেষ উদ্বেগের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।

কেন তরুণরা অধিক হারে আক্রান্ত হচ্ছেন?
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সুলতানা শাহানা বানু ঢাকা পোস্ট-কে বলেন, ‘কোভিড–১৯ প্রধানত শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ছড়ায়। কোভিডে আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাস ছাড়ার সময় বা হাঁচি–কাশির সময় অসংখ্য ড্রপলেটের মাধ্যমে ভাইরাসটি কিছুক্ষণ বাতাসে ভেসে থাকে। এটি একটি আরএনএ ভাইরাস, এর চারপাশে থাকে লিপিডের (এক ধরনের চর্বি) আবরণ ও কাঁটার মতো স্পাইক গ্লাইকো প্রোটিন। অন্যদিকে, মানুষের কোনো কোনো কোষে থাকে এইস–২ রিসেপ্টর (গ্রাহক-কোষ)। দেহকোষে এই রিসেপ্টরের ঘনত্ব বেশি থাকলে আক্রান্ত হওয়ার বিপদ বেশি, কম থাকলে বিপদও কম।’

তিনি বলেন, ‘সাধারণত তরুণ ও বাচ্চাদের এই রিসেপ্টর কম থাকে বা থাকে না। ফলে পূর্বে ১৮ বছরের নিচে পর্যন্ত করোনা সংক্রমণটা হতো না। কারণ তাদের রিসেপ্টর না থাকায় ভাইরাস গিয়ে বাইন্ড করতে (আটকানো) পারত না। কিন্তু এখন মিউটেশনের ফলে যে স্ট্রেইনগুলো বের হচ্ছে, সেগুলো সংক্রমিত করতে কোনো রিসেপ্টরের প্রয়োজন হয় না। তারা এতোটাই শক্তি অর্জন করেছে যে, রিসেপ্টর উপেক্ষা করে গেছে। ফলে তারা কিন্তু তরুণদেরও সংক্রমিত করতে পারছে।’

সাহানা বানু বলেন, ‘সম্প্রতি স্বাস্থ্য মহাপরিচালকও বলেছেন, নতুন করে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের অধিকাংশই তরুণ। এতোটাই দ্রুত তাদের অবস্থা খারাপ হচ্ছে, ফলে আইসিইউতে নিতে হচ্ছে। এ জন্য গত কয়েকদিনে সংক্রমণের পাশাপাশি মৃত্যুর হার বেশি।’

তিনি আরও বলেন, ‘তরুণদের মধ্যেও একটা উদাসীন ভাব আছে। কারণ, আগে থেকেই আমাদের দায়িত্বশীলরা বলে আসছেন, তরুণদের করোনা হবে না, তারা শক্তিশালী। এসব বলার কারণে তাদের মধ্যেও বিষয়টি গেঁথে গেছে যে, করোনা আসলেই তাদের কিছুই করতে পারবে না। ফলে, তারাই বেশি স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না, একসঙ্গে বসে আড্ডা দিচ্ছেন, মাস্ক পরছেন না। এটাও তরুণদের মধ্যে বেশি সংক্রমণের অন্যতম কারণ।’

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর ঢাকা পোস্ট-কে বলেন, ‘আমরা আগে থেকেই একটা ভুল ভাবনা নিয়ে বসে আছি যে, করোনায় তরুণরা কম আক্রান্ত হবেন। আর বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হবেন। আমি সবসময় বলেছি, এটি একটি ভুল ধারণা। তরুণরা কখনই কম আক্রান্ত হয় না। তবে হ্যাঁ, তরুণ আক্রান্ত হলে বয়স্কদের তুলনায় তাদের জটিলতা অনেক কম হয়।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার মূল অংশটাই তরুণ। শতাংশ হিসাব করলে দেখা যাবে, তরুণরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। কিন্তু হঠাৎ করেই যে তরুণরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন বিষয়টি এমন নয়। তবে নতুন স্ট্রেইনের কারণে তরুণদেরও একটু বেশি জটিলতা দেখা যাচ্ছে। সেটা হতেই পারে যদি আপনি সময় মতো চিকিৎসা না নেন। এছাড়াও তরুণদেরও তো দীর্ঘমেয়াদী রোগ, কোমরবিডিটি আছে। সুতরাং এক্ষেত্রে সতর্কতাটাই জরুরি।’

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউসিজি) অধ্যাপক ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ ঢাকা পোস্ট-কে বলেন, ‘দেশে করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেইন (প্রজাতি) এসেছে। এই স্ট্রেইনে সব বয়সের মানুষই বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে আক্রান্তদের মধ্যে তরুণদের সংখ্যাই বেশি দেখা যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘‘তরুণদের বেশি আক্রান্ত হওয়ার কারণ একটাই। তা হলো- তরুণরা হয় তো নিজেদেরকে ‘সুপারপাওয়ার’ (বিশেষ শক্তির) মনে করে। যে কারণে তারাই সবচেয়ে বেশি বেপরোয়া চলাচল করেন। বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে আড্ডা, চলাফেরায় তারা মাস্ক পরেন না, স্বাস্থ্যবিধি মানেন না। এটাই হলো মূল কারণ। যে বয়সেরই হোক, স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সামনে বিপদ আছে। নিজে বাঁচতে এবং পরিবারকে বাঁচাতে অবশ্যই সব বয়সের সবাইকেই সচেতন হতে হবে।’

এদিকে, গত রোববার (১৪ মার্চ) ঢাকার শ্যামলীতে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট টিবি হাসপাতালের এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, ‘দেশে নতুন করে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। সুতরাং এখন থেকে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সামনে বড় বিপদ আসতে পারে। এছাড়া এখন যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের বেশিরভাগই তরুণ এবং আক্রান্তদের অনেকেরই আইসিইউতে ভর্তি করা লাগছে।’

মহাপরিচালক বলেন, ‘গত দুই মাসে আমার কাছে কখনওই আইসিইউ শয্যার জন্য কোনো অনুরোধ আসেনি। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে আইসিইউ শয্যার জন্য অনুরোধের ফোন পাচ্ছি। অথচ হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা পাওয়া যাচ্ছে না। আগে কোমরবিডিটি থাকা ব্যক্তিরা করোনায় আক্রান্ত হলে, তাদের আইসিইউ লাগত। এটাই দেখছিলাম আমরা। এখন তরুণদেরও আইসিইউ লাগছে।’

সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘গত দুই মাস সবাই স্বস্তিতে থাকায় অধিকাংশ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেননি। এবার স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সামনের দিকে বড় বিপদ হতে পারে।’

তরুণরা অন্যদের ঝুঁকিও বাড়াচ্ছেন
মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ২৬ জনের ১৭ জন পুরুষ, ৯ জন নারী। তারা সবাই হাসপাতালে মারা গেছেন। এ পর্যন্ত মোট মারা যাওয়া আট হাজার ৫৯৭ জনের মধ্যে পুরুষ ছয় হাজার ৫০১ জন, বাকি দুই হাজার ৯৬ জন নারী।

বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মারা যাওয়া ২৬ জনের মধ্যে ষাটোর্ধ্ব ১৫ জন, তিন জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। বাকি আট জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে। যাদের উপসর্গ গুরুতর তাদের মধ্যেও বয়স্করা বেশি রয়েছেন। বিশ্বব্যাপীই এই প্রবণতা রয়েছে।

অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘তরুণদের বেপরোয়া চলাচল শুধু তাদেরকেই ঝুঁকিতে ফেলছেন না, বাসায় তার বাবা-মা বা পরিবারের বয়স্ক অন্য সদস্যদের জন্যও ঝুঁকি বাড়াচ্ছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাস্তায় দেখা যায়, অনেক তরুণ গা ঘেঁষাঘেঁষি করে আড্ডা দিচ্ছেন। কারও মুখে হয়তো মাস্ক আছে, কারও নেই, কেউ আবার মাস্ক গলায় ঝুলিয়ে রেখেছেন। এই তরুণরাই বাড়ি গিয়ে নিজের পরিবার, প্রতিবেশী, আত্মীয়দের সংক্রমিত করছেন। পরিবারে আগে থেকেই কারও হার্ট, কিডনির সমস্যা বা ডায়াবেটিস আছে তাদেরকেও বড় ঝুঁকিতে ফেলছেন।’

আইইডিসিআরের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন বলেন, ‘তরুণরা উদ্বিগ্ন বোধ করছেন না। কারণ তারা দেখছেন, আক্রান্ত হলেও তাদের উপসর্গগুলো খুব গুরুতর নয়। অনেক সময় তাদের মধ্যে কোনো উপসর্গই দেখা যায় না। তারা দেখছেন, মূলত বয়স্করাই বেশি মারা যাচ্ছেন। তাই করোনাভাইরাসকে তারা হালকাভাবে নিচ্ছেন। কিন্তু তারা যে অন্যদের জন্য ঝুঁকির কারণ, সে বিষয়ে নিজেদের দায়িত্বটুকু তারা বুঝতে পারছেন না।’

তিনি বলেন, ‘তরুণরা নিজেরা আক্রান্ত হয়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরীক্ষা ব্যবস্থার ওপর চাপ তৈরি করছেন। তাদের কারণেই হয়তো এক জন বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিকে আক্রান্ত হয়ে গুরুতর পরিস্থিতিতে হাসপাতালে যেতে হচ্ছে। এতে হাসপাতাল ব্যবস্থার ওপরও চাপ পড়ছে।’

https://channelkhulna.tv/

স্বাস্থ আরও সংবাদ

যে ২ খাবার অ্যান্টিবায়োটিকের কাজ করে

ডেঙ্গুতে একদিনে ১০ জনের মৃত্যু

শরীরে ভিটামিন ডি’র ঘাটতির লক্ষণ ও প্রভাব

রাত ১০ টার পর কি ডিনার করা ঠিক? যা বলছেন পুষ্টিবিদ

কৃত্রিম চিনি বয়ে আনতে পারে যেসব বিপদ

চ্যানেল খুলনা মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
DMCA.com Protection Status
সম্পাদক: মো. হাসানুর রহমান তানজির
It’s An Sister Concern of Channel Khulna Media
© ২০১৮ - ২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | চ্যানেল খুলনা.বাংলা, channelkhulna.com.bd
যোগাযোগঃ কেডিএ এপ্রোচ রোড (টেক্সটাইল মিল মোড়), নিউ মার্কেট, খুলনা।
প্রধান কার্যালয়ঃ ৫২/১, রোড- ২১৭, খালিশপুর, খুলনা।
ফোন- 09696-408030, 01704-408030, ই-মেইল: channelkhulnatv@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য অধিদফতরে অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিবন্ধনের জন্য আবেদিত।