তালা অফিসঃ সাতক্ষীরার তালায় বে-সরকারী সংস্থা পরিত্রাণ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আলোচিত নববধূ ঋতুপর্ণা দাস (১৯) অপহরণের ঘটনায় অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পরিত্রাণ। ইতোমধ্যে ঐ কমিটি তদন্ত কার্যক্রম শুরু করলেও তাদের বিরুদ্ধে ঋতুপর্ণার ননদ লতিকার কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর আদায় ও অভিযোগ প্রত্যারে ১ লক্ষ টাকার প্রলোভন দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগকারী লিটন দাসসহ এলাকাবাসীরা বলছেন, অভিযুক্ত পরিত্রাণ কর্মকর্তা উজ্জ্বল দাসকে বাঁচাতে সামগ্রিক পরিকল্পিত সাজানোর ঘটনার অংশ হিসেবে তদন্ত কমিটি ও তাদের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত ৯ আগস্ট সকালে তালার পাটকেলঘাটা থানার পুটিয়াখালি গ্রামের গোপাল দাসের বাড়ি থেকে অপহরণ হন তালার খলিলনগর ইউনিয়নের হরিশচন্দ্রকাটি গ্রামের লক্ষন দাসের ছেলে লিটন দাসের স্ত্রী। এর আগে ৮ আগস্ট সকালে লিটন তার নববধূ ঋতুপর্ণাকে নিয়ে ভগ্নিপতি গোপালের বাড়িতে যান। ঘটনার থানায় একটি অভিযোগ হয়। প্রায় মাসাধিককাল অতিবাহিত হলেও ঋতুপর্ণার কোন সন্ধান না পেয়ে হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েন দু’পরিবার ও তাদের স্বজনরা।
একদিকে স্ত্রী হারানোর শোক অন্যদিকে অভিযোগ তুলে নিতে আসামী পক্ষের অব্যাহত হুমকিতে রীতিমত দিশেহারা হয়ে পড়েছে লিটন ও তার পরিবার।
মামলার বিবরণ ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, দীর্ঘদিনের প্রেমজ সম্পর্কের জের ধরে গত ৫ আগস্ট লিটন দাস যশোরের কেশবপুর উপজেলার বড়েঙ্গা এলাকার ভদ্র দাসের মেয়ে ঋতুপর্ণা দাস বিয়ে করেন। তবে প্রথম থেকেই বিয়েতে ভিন্ন মত ছিল ঋতুপর্ণার সহোদর ননীগোপাল। এক পর্যায়ে বিয়ের পর লিটন তার স্ত্রী ঋতুপর্ণাকে নিয়ে ৮ আগস্ট সকালে তার ভগ্নীপতি তালার পুটিয়াখালির গোপাল দাসের বাড়িতে গিয়ে ঐদিন বিকেলে স্ত্রীকে সেখানে রেখে চাকুরীর সুবাদে বাগেরহাটে কর্মস্থলে চলে যায়। এরপর খবর পেয়ে ৯ আগস্ট সকালে বে-সরকারী সংস্থা পরিত্রাণ-এর প্রোগ্রাম অফিসার উজ্জ্বল দাস ও পাশ্ববর্তী বড়েঙ্গা গ্রামের ভদ্র দাসের ছেলে ননী গোপাল দাসের নেতৃত্বে সঞ্জয় দাস,সংকর দাসসহ অন্যান্যরা সংঘবদ্ধ হয়ে ঋতুপর্ণাকে সেখান থেকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায়।
লিটনের বোন লতিকা জানান, প্রথমত ঋতুপর্ণা স্বামীকে রেখে তাদের সাথে যেতে রাজি ছিলনা। পরে পরিত্রাণ কর্মকর্তা উজ্জ্বল দাসের সাথে আসা দুষ্কৃতিকারীরা ঋতুপর্ণাকে মারধর করতে থাকে। একপর্যায়ে সে অচেতন হয়ে পড়লে তারা তাকে নিয়ে চলে যায়। ঘটনায় স্থানীয়রা তাদের বাধাঁ দিতে গেলে তারা তাদেরও প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
এ ঘটনায় লিটন দাস বাদী হয়ে গৃহবধূর নিজ এলাকা যশোরের কেশবপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ ও পাটকেলঘাটা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী (যার নং-৩৮০) করেন। সর্বশেষ তিনি গত ১৫ আগস্ট সাতক্ষীরা জেলা বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধি ১০০ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। এরপর মামলা তুলে নিতে পরিত্রাণের প্রভাবশালী কর্মকর্তা উজ্জ্বল দাসসহ অনুসারীরা লিটনকে হুমকি ধামকি অব্যাহত রেখেছে।
অন্যদিকে ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে নিতে এনজিও কর্মকর্তা উজ্জ্বল দাস সংবাদ সম্মেলনে মিথ্যাচার করেছেন। এছাড়া এনজিও সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ও পরে পরিত্রাণের পক্ষে প্রকৃত ঘটনা তদন্তে প্রথক পৃথক তদন্ত কমিটি ঘটন করা হয়েছে। তবে অভিযোগ করা হয়েছে যে, পরিত্রাণের পক্ষে গঠিত তদন্ত কমিটির কতিপয় সদস্য উজ্জ্বলকে বাঁচাতে ঘটনাস্থলে তদন্তকালে সংশ্লিষ্ট বাড়ি কত্রী লতিকা দাসের কাছ থেকে একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর আদায় ও ১ লক্ষ টাকার প্রলোভন দেখিয়ে আসে।
এ বিষয়ে পরিত্রাণ কর্মকর্তা উজ্জ্বল দাসের নিকট জানতে চাইলে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। তবে পরিত্রাণ পরিচালক মিলন দাস বলেন, উজ্জ্বল দাসের বিরুদ্ধে অভিযোগের ঘটনা তদন্তে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমানিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে পাটকেলঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী ওয়াহিদ মুর্শেদ বলেন, বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে।