রাজধানী ঢাকায় বায়ুদূষণের মাত্রা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এতে বসবাসকারী জনগোষ্ঠী মারাত্মক সব রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশ্বের শীর্ষ ঘনবসতিপূর্ণ মহানগরী ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষস্থান দখল করেছে। গত বুধবার সকাল ১০টা ১১ মিনিটে ঢাকার বাতাসের মান সূচক (একিউআই) ২৬৯ রেকর্ড করা হয়েছে। তালিকায় এরপর রয়েছে যথাক্রমে চীনের উহান ও ভারতের দিল্লি। উহান ও দিল্লির একিউআই স্কোর যথাক্রমে ২৫২ ও ২১৪। এ অবস্থায় পর্যবেক্ষণটিকে অবশ্যই আমলে নিতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। দূষণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সরকারকে এখনই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া উচিত। বাংলাদেশের সামগ্রিক একিউআই পাঁচটি দূষণকারী মানদণ্ডের ওপর ভিত্তি করে নির্ণয় করা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে কণা পদার্থ (পিএম১০ এবং পিএম২.৫), কার্বন মনোক্সাইড, কার্বন ডাই-অক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড ও ওজোন। ঢাকা দীর্ঘদিন ধরেই বায়ুদূষণ সমস্যায় জর্জরিত। ঢাকার বাতাসের গুণমান সাধারণত শীতকালে অস্বাস্থ্যকর হয়ে যায় এবং বর্ষাকালে উন্নত হয়। এর আগে গত বছরের ২৩ অক্টোবর ঢাকার বাতাসের গুণমান সূচক (একিউআই) ১৫৯ রেকর্ড করা হয়েছিল। তখন ঢাকাকে বিশ্বের দ্বিতীয় দূষিত শহর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। ঢাকা সিটিতে বায়ুদূষণের বিভিন্ন কারণ রয়েছে। তার মধ্যে তিনটি কারণ প্রধান। যাতে ঢাকাসহ সারাদেশে বায়ুদূষণের মাত্রা বাড়ছে। সেগুলো হলো ইটভাটা, মোটরযানের কালো ধোঁয়া ও যথেচ্ছ নির্মাণকাজ। জানা যায়, ২০১৩ সালে দেশে মোট ইটভাটার সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৯৮৫টি। ২০১৮-তে বেড়ে দাঁড়ায় ৭ হাজার ৯০০টিতে। এর মধ্যে ঢাকার আশপাশেই রয়েছে ২ হাজার ৮৭টি। প্রতি মুহূর্তে এসব ইটভাটার ধোঁয়ায় বিষাক্ত হয়ে উঠছে ঢাকার বাতাস। শুষ্ক মৌসুমে ৫৮ শতাংশ বায়ুদূষণের পেছনে দায়ী এসব ইটভাটা। গত ৪০ বছরে ঢাকা শহরে সুউচ্চ ভবন ও অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে ৭৫ শতাংশ চাষযোগ্য জমি হারিয়ে গেছে। এছাড়া নন-কমপ্লায়েন্স শিল্প ও অপর্যাপ্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ফলে শহরের বাতাস এবং ভূপৃষ্ঠের পানি দূষিত হচ্ছে। বায়ুদূষণের উপাদানগুলো মূলত ধূলিকণা, সালফার ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, হাইড্রো কার্বন, কার্বন মনোক্সাইড, সিসা ও অ্যামোনিয়া। অপরিকল্পিতভাবে শিল্পকারখানা স্থাপনে ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে বায়ুদূষণ ক্রমাগত বাড়ছে। ক্ষতিকর উপাদানগুলোর ব্যাপকহারে নিঃসরণ ঘটছে। যাদের বেশিরভাগই দরিদ্র জনগোষ্ঠী, তারা সিসা দূষণের
ঝুঁকিতে রয়েছে। এ কারণে বিশেষ করে শিশুদের বুদ্ধিমত্তা বিকাশে (আইকিউ) ও স্নায়বিক ক্ষতি হতে পারে এবং গর্ভবতী নারীদের গর্ভপাত ও মৃত শিশু প্রসবের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। পরিবেশ দূষণ ও পরিবেশ সংরক্ষণ বর্তমান সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। এ ব্যাপারটি সম্পর্কে আমাদের সচেতনতা আছে। কিন্তু নেই সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ এবং অভিজ্ঞতা, যা কাজে লাগিয়ে বাস্তবায়ন করা যায় বসবাসযোগ্য পরিবেশ। জাতীয়ভাবে পরিবেশ রক্ষার জন্য এবং পানি সুরক্ষার জন্য আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসা উচিত, সচেতন হওয়া উচিত। সর্বোপরি পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
লেখক: সামছুল আলম সাদ্দাম, লেখক ও সাংবাদিক