চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃফের আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিক নেতারা। শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি, মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ১১ দফা দাবিতে এ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় বিজেএমসির সিবিএ কার্যালয়ে সারাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিক নেতারা বৈঠক করে প্রাথমিকভাবে এ কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এদিকে সরকার ঘোষিত জাতীয় মজুরি স্কেল বাস্তবায়নসহ পাটশিল্প রক্ষার্থে ৯ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য এক সপ্তাহের মধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে রবিবার বিজেএমসির চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছে পাটকল শ্রমিক লীগ। অন্যথায় আন্দোলন কর্মসূচি গ্রহণের হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে।
আলীম জুট মিলের সিবিএ সভাপতি মোঃ সাইফুল ইসলাম লিটু বলেন, আর কতোকাল শ্রমিকরা অবহেলিত থাকবে। কাজ করেও সময়মতো মজুরি মিলছে না। এ অবস্থায় পরিবার নিয়ে দিন অতিবাহিত করা দায় হয়ে দাড়িয়েছে।
প্লাটিনাম জুট মিলের সিবিএ সভাপতি শাহানা শারমিন ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ হুমায়ুন কবির খান জানান, শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি, মজুরি কমিশনসহ ১১ দফা দাবি আদায়ে গতকাল ঢাকায় সারাদেশের পাটকলের শ্রমিক নেতাদের নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে আগামীকাল বুধবার খালিশপুর জুট মিলের সিবিএ কার্যালয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ২৬ অক্টোবর ঢাকায় জনসভা, ২৭ অক্টোবর চট্টগ্রামের আমিন জুট মিলে জনসভা এবং ১ অক্টোবর খালিশপুর পিপলস গোল চত্বরে জনসভা অনুষ্ঠিত হবে। এসব জনসভায় সারাদেশের সিবিএ নেতারা থাকবেন। এ সময়ের মধ্যে দাবি আদায় না হলে পরবর্তীতে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-ননসিবিএ সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে।
গতকালের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আলীম জুট মিলের সিবিএ সাধারণ সম্পাদক সরদার আব্দুল হামিদ। বক্তৃতা করেন ও উপস্থিত ছিলেন আমিনুল ইসলাম খান, শাহানা শারমিন, মোঃ হুমায়ুন কবির খান, মোঃ আলাউদ্দিন, আবু দাউদ মোঃ দ্বীন ইসলাম, মোঃ ইব্রাহীম, মোঃ বেলাল হোসেন মল্লিক, মোঃ আব্দুল মান্নান, আক্তার হোসেন, আরিফুর রহমান, শফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
এদিকে বিজেএমসির চেয়ারম্যানকে পাটকল শ্রমিক লীগের সভাপতি মোঃ মাহবুবুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক এম এম কামরুজ্জামান চুন্নু স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, কয়েক দফা চিঠি দিয়েও পাটকল শ্রমিকদের সমস্যার সমাধানে কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। গত ১৮ মে শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় সভার সর্বসম্মতিক্রমে এবং সচিব বিজেএমসির পক্ষ থেকে সকল মিলের প্রকল্প প্রধান বরাবরে জাতীয় মজুরী স্কেল, ২০১৫ এর চূড়ান্ত ফিক্সেশন সম্পন্ন করে ১৮ মে’র মধ্যে শ্রমিকদের অনুকুলে নতুন মজুরি স্বেলে পে-স্লিপ প্রদান করার নির্দেশনা থাকার সত্ত্বেও এ পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা হয়নি। ১৬ মে ও ১৬ এপ্রিল পত্র প্রেরণ করার পরও জাতীয় মজুরি স্কেল বাস্তবায়নে নানান গড়িমসির মাধ্যমে বিলম্বিত করা হচ্ছে। ফলে শ্রমিকদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে জাতীয় মজুরি স্কেল, ২০১০ অনুযায়ী শ্রমিকেরা যে মজুরি পাচ্ছে তা দিয়ে জীবন জীবিকা নির্বাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। শ্রমিকরা পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাদের ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া ও চিকিৎসার ব্যয় চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে। বিনা চিকিৎসায় অসুস্থ হয়ে শ্রমিক-কর্মচারীদের মৃত্যুর হার বাড়ছে। কর্মচারীদের ৩-৪ মাসের বেতন এবং শ্রমিকদের ৮/৯ সপ্তাহের মজুরী বকেয়া পড়েছে। একই সাথে অদক্ষ অনভিজ্ঞ পরিচালনা পর্ষদের ব্যবস্থাপনায় নতুন নতুন সমস্যা সৃষ্টির কারণে মিলের উৎপাদিত পাটপণ্যের মজুদ দিন দিন বৃদ্ধি পেয়ে অবিক্রিত আনুমানিক মজুদ দাঁড়িয়েছে ৭১ হাজার ৭১৪.১৯ মেট্রিকটন। যার আনুমানিক মূল্য ৬৭৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা। বকেয়া বেতন ও মজুরী ৯৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। গ্রাচ্যুইটি বকেয়া ২০১৩-১৪ থেকে অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের ৫০৩ কোটি ৯৬লাখ টাকা। ইতোমধ্যে অনেকে মৃত্যুবরণ করেছেন এবং জীবিত অবস্থায় যাদের নমিনী করে গেছেন তাদের মধ্যে অনেকে মৃত্যুবরণ করেছেন। বর্তমানে পাট মৌসুম ৩ মাস অতিবাহিত হলেও পাটক্রয়ের বিষয়ে কোন কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ফলে বাজেট উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে এবং উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া বিজেএমসির মিল সমূহ ধীরে ধীরে ক্রেতা শূন্য হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থাতে রাষ্ট্রায়ত্ত পাট শিল্প রক্ষার স্বার্থে সকল শ্রমিকরা বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণ ও পালন করতে বাধ্য হবে। এসব দাবি আদায়ে পাটকল শ্রমিক লীগের পক্ষ থেকে আগামী ২৮ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে কর্মসূচি ঘোষণার কথা রয়েছে।