অভিবাসীদের নিয়ে কথা বলাই তার অপরাধ। এই অপরাধে বহুল আলোচিত রায়হান কবিরকে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে মালয়েশিয়া। শুক্রবার (২১ আগস্ট) দিবাগত রাত ১টার দিকে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তিনি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।
এ সময় বিমানবন্দরে এক আবেগঘন দৃশ্যের অবতারণা হয়। সন্তানকে কাছে পেয়ে বুকে জড়িয়ে ধরেন পিতা শাহ আলম। এ সময় তিনি হাউমাউ করে শিশুদের মতো কাঁদতে থাকেন। আবেগাপ্লুত হন বিমানবন্দরে উপস্থিত মানুষ।
রায়হান কবির মালয়েশিয়ায় গিয়েছিলেন ভাগ্য ফেরানোর আশায়। সম্প্রতি করোনাভাইরাস মহামারিতে সেখানে আটক অবৈধ অভিবাসীদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের দুর্ব্যবহার নিয়ে আল জাজিরা টেলিভিশনকে একটি সাক্ষাতকার দেন তিনি।
ওই সাক্ষাতকারই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ তাকে ধরিয়ে দিতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানায়। প্রকাশ করে তার ছবি সহ বিস্তারিত তথ্য। তার ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করা হয়। ঘোষণা দেয়া হয় তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হবে। তিনি মালয়েশিয়ায় চিরদিনের জন্য নিষিদ্ধ হবেন।
এর ধারাবাহিকতায় গত রাত একটার দিকে তাকে বহনকারী মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট এমএইচ-১৯৬ ঢাকায় অবতরণ করে। এ সময় সন্তানকে কাছে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার পিতা শাহ আলম। বিমানবন্দরে তিনি বলেছেন, ছেলেকে কাছে পাওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম। আমাদের ‘ঈদের চাঁদ’ হাতে এসেছে।
অন্যদিকে অনুভূতি ব্যক্ত করে রায়হান কবির বলেছেন, এই আনন্দ প্রকাশ করার মতো নয়। গত ৬ বছরে আমি অনেকবার দেশে এসেছি। আবার গিয়েছি। কিন্তু এবারকার অনুভূতি ভিন্ন। আমার বাংলাদেশ, আমার মার্তৃভূমি, আমার মা, আমার পিতামাতা…এই অনুভূতি আমি কাউকে বোঝাতে পারবো না। আপনাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা। কৃতজ্ঞতা দেশে ও বিদেশে যারা আমার পাশে ছিলেন সবার প্রতি।
মালয়েশিয়ায় রায়হান কবিরের পক্ষে আইনি লড়াই করেন সুমিতা সান্তিনি কৃষ্ণা এবং সেলভারাজা চিন্নিয়া। মিডিয়ার প্রশ্নের জবাবে সুমিতা বলেছেন, শুক্রবার বিকালে পুত্রজয়া ইমিগ্রেশন অফিস থেকে সরাসরি বিমাবন্দরে নিয়ে যাওয়া হয় রায়হানকে। সব প্রক্রিয়া শেখ করার পর তাকে স্থানীয় সময় রাত ১১টায় একটি বিমানে তুলে দেয়া হয়। এ সময় তার করোনাভাইরাস টেস্ট নেগেটিভ ছিল। যেহেতু তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা করেনি মালয়েশিয়া পুলিশ, তাই তাকে কোনো আইনগত জটিলতায় পড়তে হয়নি।
রায়হান কবিরের পরিবারের বসবাস নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর উপজেলায়। স্থানীরা বলছেন, তিনি নিজের বই ও অর্থ দিয়ে শিক্ষার্থীদের সাহায্য করতেন। এলাকায় মাদকের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সোচ্চার।