দীর্ঘ বিরতির পর দেশে ফের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে টিকা প্রয়োগ শুরু হয়েছে। চীন থেকে উপহার পাওয়া সিনোফার্মের টিকার প্রথম ডোজ প্রয়োগ শুরু হয়েছে শনিবার। সকালে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলার কেন্দ্রে এই টিকা প্রয়োগ শুরু হয়।
শনিবার (১৯ জুন) সকালে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সকাল থেকেই সারাদেশে সিনোফার্মের টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ইতোমধ্যেই টিকা পৌঁছানো হয়েছে। টিকাকেন্দ্র শুক্রবার ও সরকারি ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা জেলায় চারটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে সিনোফার্মের টিকা। এসব হাসপাতালে একটি করে টিকাকেন্দ্র এবং প্রতিটি কেন্দ্রে দুটি করে বুথ রয়েছে। ঢাকা জেলা বাদে প্রতি জেলায় একটি করে টিকাকেন্দ্র এবং প্রতিটি কেন্দ্রে দুটি করে বুথ করা হয়েছে। তবে বুথ টিকা গ্রহীতার সংখ্যার ওপর নির্ভর করে বাড়ানো হতে পারে। ১৫০-২০০ জনের জন্য একটি বুথ এবং ২০০-এর বেশি গ্রহীতা হলে দুটি বুথ চালু করতে হবে।
ঢাকার চারটি হাসপাতাল হচ্ছে—
১. ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
২. স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
৩. শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
৪. মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
সিনোফার্মের টিকা পাবেন যারা
১০ ক্যাটাগরির ব্যক্তিদের এই টিকা দেওয়ার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
১. টিকার জন্য নির্ধারিত কেন্দ্রে ইতোমধ্যে যারা টিকা নেওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো টিকা পাননি, তাদের এই টিকা দেওয়া হবে।
২. অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী।
৩. পুলিশ সদস্যরা, যারা আগে টিকা নেননি।
৪. অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিদেশগামী বাংলাদেশি কর্মী, যাদের বিএমইটি নিবন্ধন কিংবা কার্ড আছে।
৫. সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের শিক্ষার্থীরা, সরকারি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি, সরকারি ম্যাটস ও সরকারি আইএইচটি’র শিক্ষার্থীরা।
৬. সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা।
৭. বিডার আওতাধীন ও অন্যান্য জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নমূলক সরকারি প্রকল্পে (পদ্মা সেতু প্রকল্প, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প, মেট্রোরেল প্রকল্প, এক্সপ্রেস হাইওয়ে প্রকল্প, রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্প, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র) সম্পৃক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
৮. ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার পরিচ্ছন্নতাকর্মী।
৯. সারাদেশে কোভিড-১৯ মৃতদেহ সৎকারে নিয়োজিত ওয়ার্ড/পৌরসভার কর্মীরা।
১০. বাংলাদেশে বসবাসরত চীনা নাগরিকরাও পাবেন সিনোফার্মের এই টিকা।
টিকা দেওয়া যাবে না যাদের
সিনোফার্মের এই টিকা ১৮ বছরের নিচে কাউকে দেওয়া হবে না। টিকা গ্রহণের সময় জ্বর থাকলে বা অসুস্থ থাকলে, টিকাজনিত অ্যালার্জির পূর্ব ইতিহাস থাকলে, প্রথম ডোজ গ্রহণের পর মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে তিনি এ টিকা নিতে পারবেন না। অনিয়ন্ত্রিত দীর্ঘমেয়াদি রোগ, যেমন- ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ঘা, অ্যাজমা, কিডনি রোগ, ডায়ালাইসিস নিচ্ছেন এমন ব্যক্তি, ক্যান্সারে আক্রান্ত এবং স্বল্প রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জনগোষ্ঠীর টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
দেশে টিকার জন্য এ পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন ৭২ লাখ ৪৮ হাজার ৮২৯ জন। তাদের মধ্যে ৫৮ লাখ ২০ হাজার ১৫ জন অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন। এই টিকার দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় আছেন প্রায় ১৫ লাখ মানুষ। তবে তাদের দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে সিনোফার্ম বা ফাইজারের টিকা দেওয়া হবে কি না, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।