মহানগরীর দৌলতপুর উপশহরের কোলঘেষে দীর্ঘ ৩০ বছরের ও বেশি সময় ধরে সরকারী রেলওয়ের জায়গার উপর জণার্কীন কুটিরে দৌলতপুর কাঁচাবাজার সম্মুখ হতে মুহসীন রেলক্রসিং গেট পর্যন্ত বাস করে আসছে সমাজের সবচেয়ে তৃনমূল পর্যায়ের অবহেলিত বেশ কয়েকটি পরিবার। যার বর্তমান সংখ্যা সাতটি। এ সাতটি পরিবারে প্রায় অর্ধশত সদস্যদের নিয়ে কোন রকম বেঁচে আছে এই মানুষ গুলো। সম্প্রতি করোনার সংক্রমন ভয়াবহ আকার ধারণ করা শুরু করার কারণে সরকার ঘোষিত লকডাউনের কারণে দৌলতপুর বাজার রেলওয়ে অর্ধশত বস্তিবাসীর দিন কাটছে চরম অনিশ্চয়তায় আর অনাহারে। সমাজের বিত্তবান, বা পাশে বাজার উন্নয়ন সংস্থার নেতারা বা অন্যকোন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন গুলো খবর রাখেনি এই তৃনমূল অসহায় পরিবার গুলো কিভাবে দিন কাটাচ্ছে। এখানে বসবাসরত বস্তিবাসীরদের জীবন-জীবিকা দৌলতপুর পাইকারী কাঁচা বাজারের মালের বোঝা টানার উপর নির্ভর করে চলে। তবে লকডাউনের কারণে দৌলতপুর কাঁচা বাজারে দূরপাল্লার মালবাহী যানবহন কম আসার দরুন সবজী সরবরাহ কম, তাই এই বস্তির লোকগুলো বলতে গেলে পুরাপুরি বেকার। লকডাউন আর করোনার কারণে কাজ না থাকায় ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে চরম হতাশায় আর অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে বলে জানালেন এখানকার বাসিন্দারা।
হামিদ মোল্লা (৬৫)। আজ দৌলতপুরে প্রায় ৫০ বছরের বেশি সময় বসবাস। বামহাত কাঁটা। একজন শারিরীক প্রতিবন্ধী। দীর্ঘ ৩০ বছরের বেশি সময় এই বস্তিতে বসবাস তার। এক সময় বাজারে ব্যবসা ছিল। ছেলে, ছেলের বউ, মেয়ে, জামাই, নাতি-নাতনী নিয়ে পরিবারে সদস্য সংখ্যা ১৭ জন। তবে ছোট ছেলে আলামিন এবার এইচ.এস.সি অটোপাশ দিলেও বাকি ছেলেরা সবাই যার যার মতো। তিনি জানান, কাজ না থাকার কারণে পরিবারে সদস্যদের নিয়ে খুব কষ্টে আর খেয়ে না খেয়ে একটি দিন পার করছি। ঘরে চাল, ডাল, কিছুই নেই। বাকিতে কিছু চাল এনে রান্না করে খাচ্ছি।
ছোট বেলা হতে এই বস্তিতে বসবাস করছে মাকসুদা। স্বামী সেলিম। বাজারে কাঁচামালের বোঝা টানে। ১ ছেলে, আর ১ মেয়ে। মাকসুদা জানান, কারোনার কারনে স্বামীর কাজ নাই। গাড়ী বন্ধ থাকায় বাজারে মাল আসে কম। বলতে গেলে আমার উনুনে আগুণ জ্বলছে না । ছেলে মেয়ে নিয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছি। খুব কষ্টে আসি। সরকার আমাদের দিক একটু মুখ তুলে তাকাবে কবে? সামনে ঈদ। খেতেই পায়না, আর বাচ্চাদের নতুন কাপড় কিনে দেব কোথা হতে। তবে গত বছর করোনার সময়ে মোহাম্মদ স্যার পাঁচ কেজি চাল দিয়েছিল।
স্বামী পরিত্যাক্তা প্রতিবন্ধী মাহফুজা (৫৫) রেললাইনের পাশ ঘেঁষে ঝুপড়ি বেঁধে থাকে। তিনি কেবল প্রতিবন্ধী নন বরং ২ ছেলে আরো ১ মেয়েও প্রতিবন্ধী। এক কথায় একটি অচল পরিবার। নেই প্রতিবন্ধী কার্ড বা বিধবা ভাতা। করোনায় লকডাউনের কারণে তিনি না খেয়ে অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। একই বস্তির বাসিন্দা নাসিরের স্ত্রী মাকসুদা, দেলোয়ার স্ত্রী, ছাত্র আলামিনসহ অনেকেই তাদের বর্তমানে অনাহারে দিন কাটানোর কথা জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ মোহাম্মদ আলী জানান, আমি ব্যক্তিগত ভাবে দৌলতপুর রেলওয়ে বস্তি বাসীর খোঁজ খবর নেয়। জানি তাদের খুব খারাপ অবস্থা যাচ্ছে। তাদের এই দুঃখ লাঘবের জন্য ঈদের আগেই ৭ কেজি করে চাল আর ১’শ করে টাকা দেওয়া হবে বলে জানান এ জনপ্রতিনিধি।