চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ সবুজ রঙ ও ডানপাশ বন্ধের খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি)’এর নির্দেশনা থাকলেও তা মানছে ইজিবাইক চালকরা। ফলে এ অপরাধে ১২টি ইজিবাইক আটক করা হয়েছে। গতকাল অভিযানের মাধ্যমে এসব ইজিবাইক আটক করা হয়।
কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১০-১১ অর্থ বছরে নগরীতে চলাচলের জন্য দুই হাজার ইজিবাইকের লাইসেন্স প্রদান করে কর্পোরেশন। পরে এর মধ্যে থেকে ৩৭টির লাইসেন্স স্থগিত রেখে ১৯৬৩টি ইজিবাইকের লাইসেন্স প্রদান করা হয়। লাইসেন্সপ্রাপ্ত এ ইজিবাইকগুলো ২০১১-১২ অর্থবছরের জন্যে কেসিসি নবায়ন করে চলাচললের অনুমতি অব্যাহত রাখে। ২০১৩ সালের শেষের দিকে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে ইজিবাইকের লাইসেন্স প্রদান বন্ধ রাখতে কেসিসিকে নির্দেশ দিয়ে চিঠি প্রদান করে। মন্ত্রণালয়ের ওই নির্দেশ পাওয়ার পর কেসিসি ইজিবাইকের লাইসেন্স প্রদান করা বন্ধ রাখে। পরবর্তীতে আর কোন ইজিবাইককের লাইসেন্স প্রদান করা হয়নি। তবে নগরীতে ইজিবাইক বিক্রির জন্য যানবাহন ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্স প্রদান অব্যাহত রাখা ও এ যান বন্ধে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় নগরীতে ওই বাইকের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে থাকে। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে ২০১৬ সালের ১১ মে খুলনার তৎকালীন বিভাগীয় কমিশনার আবদুস সামাদ একটি সভার আহ্বান করেন। ওই সভায় স্থানীয় সংসদ সদস্য, খুলনা সিটি কর্পোরেশন মেয়র, বিভাগীয় কমিশনার, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও খুলনা জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় নগরীতে ইজিবাইকের সংখ্যা ৫ হাজারে নামিয়ে আনা, ইজিবাইকের শো-রুম বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু নানা কারণে ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন থমকে থাকে। পরবর্তীতে ফের বিভাগীয় প্রশাসনের নির্দেশে সেই তৎপরতা শুরু হয়। এর ধারাবাহিকতায় গত বছর ৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় নগর ভবনে ইজিবাইক ও যানজট নিরসন সংক্রান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন সিটি মেয়র মনিরুজ্জামান মনি। বৈঠকে খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মিজানুর রহমান মিজান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশীদসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় পূর্বের ১ হাজার ৯৬৩টি ইজিবাইকের সঙ্গে নতুন করে আরও ৩ হাজার ৪০টি ইজিবাইকের অনুমতি দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে নগরীর স্থায়ী বাসিন্দা অথচ ইজিবাইক চালক এমন লোক অগ্রাধিকার পাবে। ওই সব ইজিবাইকে সবুজ রং দিয়ে মার্কিং করা হবে। নগরীর বাইক এর বাইরে অর্থাৎ জেলায় এবং জেলার ইজিবাইক নগরীতে আসতে পারবে না। এছাড়া প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মিজানুর রহমান ও খুলনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, সিটি মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশিদ এসব ইজিবাইক বাচাইয়ে সুপারিশ করবেন। মূলত এই ৪ জনের যে কোন একজনের সুপারিশেই ৩ হাজার ৪০টি ইজিবাইককে নতুন করে অনুমতি দেওয়া হবে। কিন্তু সে ব্যাপারেও কোন কার্যকরী পদক্ষেপ দৃষ্টি গোচর হয়নি।
সর্বশেষ ২০১৮ সালের ১৫ মে কর্পোরেশন নির্বাচনে আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক ইজিবাইকের লাইসেন্স দেয়ার ব্যাপারে প্রতিশ্র“তি দেন। সেই প্রতিশ্র“তি বাস্তবায়নে ৬ থেকে ১৪ ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত ৫০০ টাকা মূল্যের ফরমে আবেদন জমা নেয়া হয়। এরপর যাচাই-বাছাই শেষে ৮ হাজার লাইসেন্স প্রদানে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। খুব শিগগির এসব ইজিবাইকের লাইসেন্স প্রদান করা হবে। কিন্তু পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পে-অর্ডার গ্রহন করা এসব ইজিবাইকের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সবুজ রং ও ডান পাশও বন্ধ করেনি। তারা কর্পোরেশনের এ নির্দেশনা অমান্য করে সড়কে চলাচল করছে।
কর্পোরেশনের লাইসেন্স কর্মকর্তা (যানবাহন) রবিউল আলম বলেন, শিগগিরই ইজিবাইকের লাইসেন্স প্রদান করা হবে। কিন্তু শর্ত অনুযায়ী এসব ইজিবাইক সবুজ রঙ ও ডান পাশ বন্ধ করা হয়নি। তাই এ অপরাধে ইজিবাইক গুলো আটক করা হয়েছে। এখন মেয়রের সাথে আলোচনা করে ছাড়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
Like+1