নিরাপরাধ রাজধানীর পল্লবীর মো. আরমানকে মাদক মামলার আসামি কয়েকবছর কারাগারে রাখার ঘটনায় ক্ষতিপূরণ হিসেবে আরমানকে ২০ লাখ টাকা দিতে পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজি) প্রতি হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশ স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান।
রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের ওপর শুনানির নিয়ে আজ মঙ্গলবার আট সপ্তাহের জন্য এ স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত। আরমানের মায়ের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ও ব্যারিস্টার হুমায়ুন কবির পল্লব।
হাইকোর্ট গত ৩১ ডিসেম্বর এক রায়ে নিরাপরাধ আরমানকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ২০ লাখ টাকা দিতে পুলিশ মহাপরিদর্শককে (আইজি) নির্দেশ দেন। রায়ের কপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে টাকা দিতে নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে অবিলম্বে আরমানকে মুক্তির নির্দেশ দেন। এ ছাড়া আরমানকে গ্রেপ্তারে জড়িত পল্লবী থানার সেসময়কার চার পুলিশ সদস্যকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
ক্ষতিপূরণ ও পুলিশের চার সদস্যকে চলতি দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার বিষয়ে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে আইজিপি ও ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া আরমানকে বেআইনিভাবে আটকের ঘটনায় দায় নিরূপনে নতুন করে তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মকর্তা নিযুক্ত করতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত করে আগামী ১১ এপ্রিল আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে পিবিআইয়ের উপ-মহাপরিদর্শককে (ডিআইজি) নির্দেশ দেওয়া হয়।
যে চার পুলিশ সদস্যকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয় তারা হলেন-পল্লবী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দাদন ফকির ও মো. নজরুল ইসলাম এবং সাবেক উপ-পরিদর্শক (এসআই) সিরাজুল ইসলাম খান ও মো. রাসেল।
মাদক মামলায় নিরাপরাধ আরমানকে কারাগারে বন্দি রাখা নিয়ে ‘কারাগারে আরেক জাহালম’ শিরোনামে ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এই প্রতিবেদন যুক্ত করে ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন একটি রিট আবেদন করে। এই রিট আবেদনটি উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করেন আদালত। পরবর্তীতে এ নিয়ে আরমানের মা বানু পৃথক একটি রিট আবেদন করেন। এই রিট আবেদনে গত ৩১ ডিসেম্বর রায় দেওয়া হয়।
পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৫ সালের ৩০ আগষ্ট রাতে পল্লবীর ৬ নম্বর সেকশনের সি ব্লকের ৮ নম্বর লেনের ৭ নম্বর ভবনের নীচতলার একটি ফ্ল্যাট থেকে ৪০ বোতল ফেনসিডিলসহ শাহাবুদ্দিন এবং তার দুই সহযোগী সোহেল মোল্লা ও মামুন ওরফে সাগরকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। এরপর তাদের বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনে মামলা করে পুলিশ। এ মামলায় দুইবছর কারাগারে থাকার পর জামিনে মুক্তি পান শাহাবুদ্দিন। মামলায় বিচার শেষে ২০১২ সালের ১ অক্টোবর রায় দেয় ঢাকার একটি আদালত। রায়ে শাহাবুদ্দিনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কিন্তু রায়ের দিন শাহাবুদ্দিন পলাতক থাকায় আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
এ মামলায় ২০১৬ সালের ২৭ জানুয়ারি পুলিশ বেনারসি কারিগর মো. আরমানকে গ্রেপ্তার করে। সেই থেকে আরমান কারাবন্দি। মূল আসামি শাহাবুদ্দিনের পিতার নাম ইয়াসিন ওরফে মহিউদ্দিন। আর আরমানের পিতার নামও ইয়াসিন। উভয় ইয়াসিনই মৃত।