চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃখুলনার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অসাধু কর্মকর্তারাই নিয়ন্ত্রণহীন! তাদের মধ্যে অনেকেই মাদকের বিভিন্ন স্পট থেকে মাসোয়ারা, সোর্স দিয়ে মাদক কেনাবেচা ও নিজেরাই মাদকসেবনের সাথে জড়িত। মাদকের অভিযানে উদ্ধার হওয়া মাদকের বড় একটি অংশ আত্মসাতসহ নানা অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে। এছাড়াও রয়েছে সাধারণ মানুষকে নানাভাবে হয়রানি, সোর্সদের কথা মতো অভিযানের নামে চাঁদাবাজির অভিযোগও। অনেক আগে থেকেই এ বিষয়টি দৃষ্টি গোচর হলেও কর্তৃপক্ষ কোন প্রকার পদক্ষেপ নেননি। দায়সারাভাবে শুধুমাত্র বদলি ও তদন্তের নামে অপরাধগুলো ফাইলবন্দী রেখেছেন। এরই মধ্যে অতিরিক্ত মদ্যপান অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মনোজিৎ কুমার বিশ্বাসের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়েছে খুলনাসহ আশপাশের জেলায়।
মাদক কর্মকর্তা মনোজিৎ কুমার বিশ্বাস (৫২) নগরীর হাজী মহসিন রোডের আর্জেন আলী বাইলেন এলাকার ধীরাজ বিশ্বাসের ছেলে। তাপস কুমার বিশ্বাস ও শ্রাবন্তি বিশ্বাস তিথি নামে তার দু’টি সন্তান আছে। গত শুক্রবার ময়নাতদন্ত শেষে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে মনোজিৎ বিশ্বাসের মৃতদেহ তার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে সৎকার করেছেন পরিবারের সদস্যরা। তিনি নোয়াখালী জেলা কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। পূজার ছুটিতে খুলনায় এসেছিলেন তিনি। বিজয়া দশমীর রাতে খুলনায় মদপানে যে নয়জনের মৃত্যু হয়েছে তাদের মধ্যে মাদকের এই কর্মকর্তাও ছিলেন।
এর আগে ২০১৮ সালের ২৭ ফেব্র“য়ারি দু’জনকে গাঁজাসহ গ্রেফতার করে জেলার বটিয়াঘাটা থানায় মামলা করতে গিয়েছিলেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা (এসআই) মনোজিৎ কুমার বিশ্বাস। তার সঙ্গে ছিলেন গোয়েন্দা শাখার সিপাহী মোঃ সেলিম ও সোর্স সুশীল। সেদিনও তিনি মদ্যপ অবস্থায় বটিয়াঘাটা থানার ওসির কক্ষে প্রবেশের পর মাতলামি করেন। থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হক বিষয়টি টের পেয়ে অধিদপ্তরের খুলনাস্থ কর্মকর্তাদের জানান। এরপর একজন কর্মকর্তা মুচলেকা দিয়ে তাদেরকে ছাড়িয়ে নেন।
সূত্রে জানা গেছে, অধিদপ্তরের খুলনার কার্যালয়ে কর্মরত অধিকাংশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের ২-৩ বছর পর্যন্ত মেয়াদ হয়েছে। একই স্থানে দীর্ঘ সময় ধরে দায়িত্বে থাকার কারনে মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে তাদের অনেকের সখ্যতা তৈরি হয়েছে। নিয়মিত মাদকের স্পট থেকে তারা মাসোয়ারা উত্তোলন করেন। এছাড়া অধিদপ্তরের বিভিন্ন সময়ে অভিযানে উদ্ধার মাদক দ্রব্যের বড় একটি অংশ আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে এ সকল কর্মকর্তা ও সদস্যদের বিরুদ্ধে। এ সকল মাদক দ্রব্য পরবর্তীতে তারা নিজেদের পোষ্য সোর্সদের (যারা মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকায় অভিযোগে র্যাব বা পুলিশের হাতে একাধিকবার গ্রেফতার হয়েছে) মাধ্যমে বিভিন্ন স্পটে কেনাবেচা করে থাকেন বলেও জানা গেছে। এ সকল অভিযোগে বিভিন্ন সময় খুলনার মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও সদস্যদের শাস্তিমূলক বদলি হতে দেখা গেছে। পরবর্তীতে ওই সকল কর্মকর্তা ও সদস্যরা ফের খুলনায় ফিরে এসে তাদের সেই কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।
২০১৮ সালে মাদক কর্মকর্তা মনোজিৎ বিশ্বাসের ওই ঘটনা সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ওই বছরের ২৭ ফেব্র“য়ারি রাতে গাঁজাসহ দু’জন আসামি নিয়ে এসআই মনোজিৎ কুমার বটিয়াঘাটা থানায় মামলা করতে আসেন। এ সময় মদের গন্ধ পেয়ে থানার ওসি এ বিষয়ে মনোজিৎসহ তার সাথে থাকা সিপাহী সেলিম ও তাদের সোর্স সুশীলকে জিজ্ঞাসাবাদে মদ্যপানের কথা স্বীকার করেন। পরে বটিয়াঘাটা থানা পুলিশ তাদের তিনজনকে স্টমাক ওয়াশ করানোর জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। হাসপাতাল থেকে দেয়া সনদের ভিত্তিতে সার্স সুশীলের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়। এছাড়া এসআই মনোজিৎ ও সিপাহী সেলিমকে মাদকের একজন কর্মকর্তা মুচলেকা দিয়ে বটিয়াঘাটা থানা থেকে ছাড়িয়ে নেন। এ ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত করা হয় মনোজিৎকে। পরে বিভাগীয় মামলায় ডিমোশন দিয়ে এসআই থেকে এএসআই করা হয় তাকে।
উল্লে¬খ্য, গত ৮ ও ৯ অক্টোবর নগরী ও রূপসা উপজেলায় মদ্যপানে ৯ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে মাদক কর্মকর্তা মনোজিৎ কুমার বিশ্বাস (৫২) রয়েছেন। বাকীরা হলেন নগরীর গ্ল¬াক্সোর মোড় এলাকার বাসিন্দা প্রদীপ শীলের পুত্র সুজন শীল (২৬), গল্ল¬¬ামারী এলাকার নরেন্দ্র দাসের পুত্র প্রসেনজিৎ দাস (২৯), তার আপন ভাই তাপস (৩৫), নগরীর ভৈরব টাওয়ারের বাসিন্দা মানিক বিশ্বাসের পুত্র রাজু বিশ্বাস (২৫) রূপসা উপজেলার আইচগাতী ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের সত্যরঞ্জন দাসের পুত্র পরিমল দাস (২৫) রাজাপুর গ্রামের নির্মল দাসের পুত্র দিপ্ত দাস (২২), সমীর বিশ্বাসের স্ত্রী ইন্দ্রানী বিশ্বাস (২৫) ও নগরীর রায়পাড়া ক্রস রোডের বাসিন্দা নির্মল শীলের পুত্র অমিত শীল (২২)।
এদিকে রবিবার সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে ভারপ্রাপ্ত জেলা ম্যাজিস্টেট মোঃ ইকবাল হোসেনের সভাপতিত্বে খুলনা জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় লাইসেন্সধারী মাদক ব্যবসায়ী এবং মাদকসেবীদের নজরদারির মধ্যে আনার পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় অতিরিক্ত পরিচালক আবুল হোসেন বলেন, পারফরম্যান্স ভালো থাকায় সেসকল কর্মকর্তা ও সদস্যদের একই স্থানে ২/৩ বছর রাখা হচ্ছে। এছাড়া ইতোমধ্যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। অন্যদিকে বিষাক্ত মদ্যপানে মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সুত্র-সময়ের খবর