চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ পক্ষকালের ব্যবধানে খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় দু’হাজারের বেশি লোক ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। এ সময় মৃত্যু হয়েছে চারজনের। যার সবারই মৃত্যু হয় খুলনার বিভিন্ন হাসপাতালে। পয়লা আগষ্ট থেকে শুরু করে গতকাল(১৬আগষ্ট) পর্যন্ত স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে দেয়া ডেঙ্গু আক্রান্তের তথ্য বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পাওয়া যায়।
এদিকে, ডেঙ্গুজ¦র সনাক্তকরণ সংক্রান্ত সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষা সরকারি হাসপাতালে হয় উল্লেখ করে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশন(বিএমএ) গঠিত ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও চিকিৎসা মনিটরিং সেলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সরকারি হাসপাতালের রোগীদেরকে অহেতুক বেসরকারি ক্লিনিক বা প্যাথলজীর দালাল চক্রের হাতে পড়ে বিভ্রান্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে। গতকাল রাতে এ বিষয়ে মনিটরিং সেলের সভায় সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের পাশাপাশি অনেক বেসরকারি হাসপাতালের প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন। সভা থেকে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নগরীর সন্ধানী ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের একজন স্যাম্পল কালেক্টরকে নিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে যে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে সে বিষয়ে মনিটরিং সেলের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক এবং খুলনার সিভিল সার্জনের দপ্তর থেকে দেয়া ডেঙ্গু বিষয়ক তথ্যে দেখা যায়, গত পয়লা জুলাই খুলনা বিভাগে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৪৩৩জন। যে সংখ্যা গতকাল শুক্রবার দাঁড়ায় ২৩৪৬জনে। এছাড়া গত ২৪ ঘন্টায় খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ১২৪জন। এর মধ্যে সরকারি হাসপাতালেই ভর্তি হয় ১২২জন এবং বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয় মাত্র দু’জন। খুলনা জেলায় গত ২৪ ঘন্টায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩০জন। এর মধ্যে শুধুমাত্র খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই ভর্তি হয় ২৭জন। বাকী তিনজন জেনারেল হাসপাতাল, গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং রূপসা উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক দপ্তরের তথ্য মতে, পয়লা আগষ্ট খুলনায় ১৪জন ও বিভাগে ৭০জন, ২ আগষ্ট খুলনায় ১৫জন এবং বিভাগে ৭৯জন, ৩ আগষ্ট খুলনায় নয়জন ও বিভাগে ৬৮জন, ৪ আগষ্ট খুলনায় ১৫জন ও বিভাগে ১১৭জন, ৫ আগষ্ট খুলনায় ৩১জন ও বিভাগে ১৩৭জন, ৬ আগষ্ট খুলনায় ৩৭জন ও বিভাগে ১৪০জন, ৭ আগষ্ট খুলনায় ৩১জন ও বিভাগে ১৫৯জন, ৮ আগষ্ট খুলনায় ৩৬জন ও বিভাগে ১৪৮জন, ৯ আগষ্ট খুলনায় ৩১জন ও বিভাগে ১৪০জন, ১০ আগষ্ট খুলনায় ২৪জন ও বিভাগে ১১৬জন, ১১ আগষ্ট খুলনায় ৩৭জন ও বিভাগে ১৮০জন, ১২ আগষ্ট খুলনায় ৪২জন ও বিভাগে ১৪১জন, ১৩ আগষ্ট খুলনায় ১৭জন ও বিভাগে ৭৯জন, ১৪ আগষ্ট খুলনায় ২৩জন ও বিভাগে ১৪৪জন, ১৫ আগষ্ট খুলনায় ২০জন ও বিভাগে ১৩৩জন এবং গতকাল শুক্রবার(১৬ আগষ্ট) খুলনায় ৩০জন ও বিভাগে ১২৪জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক দপ্তরের সহকারি পরিচালক(রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা: ফেরদৌসী আক্তার বলেন, এ পর্যন্ত খুলনা বিভাগে দু’হাজার ৩৪৬জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ৫০৮জন এবং ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে এক হাজার ৭৮৯জনকে। এছাড়া ৪৯জনকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
খুলনার সিভিল সার্জন ডা: এএসএম আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পয়লা আগষ্ট থেকে গতকাল পর্যন্ত খুলনা জেলায় চারজন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে দু’জন খুমেক হাসপাতালে, একজন সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং একজন গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায়। ডেঙ্গুতে মৃত্যুবরণকারী চারজনের তিনজনই ঢাকা থেকে জ¦রে আক্রান্ত হয়ে আসা এবং একজন স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত। তাছাড়া একজন খুলনার রূপসার এবং একজন দিঘলিয়া উপজেলার বাসিন্দা। বাকী দু’জনের একজন বাগেরহাটের শরণখোলা এবং অপরজন গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার বাসিন্দা বলেও তিনি জানান।
অপরদিকে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় খুমেক হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে রোগীর ভিজিটরদের হাতে আটক হওয়ার পর পুলিশে দেয়া দু’ ব্যক্তির ব্যাপারে গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে মুখ খুলেছে বিএমএ গঠিত ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও চিকিৎসা মনিটরিং সেল। সেলের সদস্য সচিব ও খুলনা বিএমএ’র সাধারণ সম্পাদক ডা: মো: মেহেদী নেওয়াজ এ প্রতিবেদককে বলেন, গতকালকের সভায় স্পষ্ট জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, ডেঙ্গুর সকল প্রকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা সরকারি হাসপাতালে হচ্ছে। সুতরাং কেউ অতি উৎসাহী হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে প্রতারিত না হয়ে সরকারি সেবার সুযোগ নেয়ার আহবান জানান তিনি।
মনিটরিং সেলের আহবায়ক ডা: শেখ বাহারুল আলম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ডেঙ্গুজ্বর সনাক্ত করন সংক্রান্ত সকল পরীক্ষা নীরিক্ষা (প্যাথলজিক্যাল টেষ্ট) সরকারী হাসপাতাল (উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেনারেল হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল) এ বিদ্যমান। হাসপাতালের রির্পোট নি¤œ মানের মনে করে রোগীর স্বজনদের বেসরকারী হাসপাতাল ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে রির্পোট করানোর আগ্রহ প্রকাশ করার কোন প্রয়োজন নেই। অকারণে আগ্রহ প্রকাশ করলে দালাল চক্রের হাতে পড়ে বিভ্রান্ত হওয়ার সমূহ সম্ভবনা রয়েছে বলেও ওই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
এ ব্যাপারে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় খুলনা বিএমএতে মনিটরিং সেলের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় মনিটরিং সেলের আহবায়ক ডা: শেখ বাহারুল আলম, সদস্য সচিব ডা: মো: মেহেদী নেওয়াজ ছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সেলের সদস্য ডা. এস এম সামছুল আহসান মাসুম, ডা. এস এম আব্দুর রাজ্জাক, ডা. গাজী মিজানুর রহমান, ডা. এ টি এম মঞ্জুর মোর্শেদ, ডা. আব্দুল আলী, ডা. প্লাবন বসু, অধ্যাপক ডা. এস এম কামাল, ডা. এস এম তুষার আলম ও ডা. শৈলেন্দ্র নাথ বিশ্বাস।