খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্লিনার পদে কর্মরত হরিজনরা পাঁচ মাসের বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। আসন্ন পূজায় কেনাকাটা করতে না পেরে মানষিক অস্বস্তির মধ্যে রয়েছেন তারা। কবে নাগাদ তারা বেতন পাবেন এর নিশ্চয়তা নেই। তবে পূজার আগেই তাদের একমাসের বেতন দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গেল বছরের করোনার শুরুতে আউটসোর্সিং খাতে ৩০২ জন কর্মচারী কর্মরত ছিল। করোনার প্রকোপ বেড়ে গেলে তাদেরকে ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। এর কারণে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতায় সংকট সৃষ্টি হয়। আউটসোসিং এ কর্মরত অনেকেই উচ্চ শিক্ষিত হওয়ায় তারা এ কাজ করতে অনীহা প্রকাশ করেন। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে অচলাবস্থার সৃষ্টি হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সিটি মেয়রের শরণাপন্ন হন। পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় সিটি মেয়র হরিজন সম্প্রদায় থেকে ক্লিনার নিয়োগের পরামর্শ দেন। যার প্রেক্ষিতে হাসপাতালের তৎকালীন তত্বাবধায়ক মুন্সি রেজা সেকেন্দার ৪০ জন প্রকৃত হরিজনকে সরাসরি নিয়োগ দেন। তবে হরিজন ও আউটসোর্সিং ঠিকাদারের নিযুক্ত কর্মচারী মিলিয়ে বর্তমানে ১০২ জন ক্লিনার পদে কর্মরত আছেন।
অভিযোগ রয়েছে, যেহেতু ৪০ জন হরিজনকে বাড়তি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, সে কারণে তাদের বেতন আউটসোর্সিং কর্মচারীদের বেতন থেকে কেটে তাদের দেওয়া হবে। এ নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ ও বিভিন্ন সময় তারা বেতনের দাবীতে আন্দোলন করেছে । আউটসোর্সিং কর্মচারীরা মাসিক বেতন পায় ১৬ হাজার ৬২০ টাকা। হরিজনদের বেতন ৮ হাজার টাকা।অভিযোগ আছে, প্রতিমাসে আউটসোর্সিং কর্মচারীদের বেতন থেকে ২ হাজার ৬শ ১০ টাকা কেটে রাখেন ঠিকাদার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক কর্মচারী জানান, তিনি গত চারমাস যাবত কোন বেতন পান না। বেতন নেওয়ার আগে ওই প্রতিষ্ঠানকে আগে ২৬০০ টাকা গুনে দিয়ে বেতনের খাতায় স্বাক্ষর করতে হয়।
এ অভিযোগের ভিত্তিতে আউটসোর্সিং ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মাছরাঙ্গা সিকিউরিটি সার্ভিসের প্রধান ফারুক হোসেন হেমায়েতের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আউটসোর্সিংয়ে নিয়োজিত কোন কর্মচারীর বেতন কর্তন করা হচ্ছেনা। হরিজনের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের নিয়োগ দিয়েছে। তাদের বেতন কিভাবে দেওয়া হচ্ছে তা কর্তৃপক্ষ ভালই জানেন।
অপরদিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ মোঃ রবিউল হাসানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ৪০ জন হরিজনকে অতিরিক্ত নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। অন্যখাত থেকে সমন্বয় করে তাদের বেতন দেওয়া হয়। ওদেরকে বেতন ঠিকাদার দেন । বিষয়টা নিয়ে কিছুটা ঝামেলা আছে। সমাধানের জন্য তিনি লিখিত প্রস্তাব দিয়েছেন মন্ত্রাণালয়ের কাছে। রবিবার ঠিকাদার খুলনা আসলে সবার বেতন পরিশোধ হয়ে যাবে।