চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃঅবহেলায় রোগী মৃত্যুর ঘটনা যেখানে নিত্যদিনের। শত অভিযোগ তাড়া করে ফিরছে যাকে। হরহামেশা মৃত্যুর হাতছানি। স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয় এখানকার পরিবেশ। পাইকগাছার সেই বহুল আলোচিত শাপলা ক্লিনিকে আবারও তিন দিনের ব্যবধানে দুই প্রসূতি মায়ের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে প্রতিবাদ, ক্লিনিক বন্ধসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি। এদিকে ক্লিনিকটি বন্ধ করে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন খুলনা সিভিল সার্জন ডাঃ আব্দুর রাজ্জাক।
ভুক্তভোগী পরিবারসহ এলাকাবাসী জরুরি ভাবে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। জানা গেছে, পাইকগাছা পৌর সদরে অবস্থিত বহুল আলোচিত শাপলা ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার পর হতে একের পর এক রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। সব মিলিয়ে ক্লিনিকটি যেন মৃত্যু পুরিতে পরিণত হয়েছে। ইতোপূর্বে একাধিক বার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বন্ধ হলেও কিছু দিনের মধ্যে আবার অদৃশ্য কারণে চালু হয় ক্লিনিকটি। গত মঙ্গলবার উপজেলার গজালিয়া গ্রামের মাসুম গাজীর স্ত্রী নাসরিন আক্তারকে সিজার করলে একটি কন্যা সন্তান হয়। কিন্তু প্রসূতির অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাকে কৌশলে খুলনায় প্রেরণ করে। অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণের কারনে প্রসূতি মা নাসরিন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় গজালিয়া গ্রামের আলমগীর ফকিরের স্ত্রী মারুফা খাতুন (২৯) নামে গৃহবধূ প্রসব যন্ত্রণার কারনে শাপলা ক্লিনিকে ভর্তি হয়। রাত ১২টার দিকে পাইকগাছা হাসপাতালের ডাঃ আব্দুর রব ও নীতিশ গোলদার তাকে সিজার করে রেখে যায়। পরবর্তীতে তার শরীর থেকে রক্ত ক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় ডাক্তার ডেকে আনলে একই রোগীর দ্বিতীয় দফায় অপারেশন করে। এ সময় মারুফা খাতুন অসুস্থ হতে থাকলে পরের দিন সকাল ৯টার দিকে খুলনার গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউতে প্রেরণ করে। সেখানে গতকাল শুক্রবার ভোর রাতে তার মৃত্যু হয়। গত তিন দিনের ব্যবধানে দুই রোগীর মৃত্যু নিয়ে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এলাকাবাসী দ্রুত শাপলা ক্লিনিক বন্ধসহ এর সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন। শাপলা ক্লিনিকের মালিক ক্লিনিক রেখে পালিয়েছে। ডাঃ আব্দুর রব জানান, রোগীর সিজার করেছি পরবর্তীতে রক্ত বন্ধ না হওয়ায় আরেকটি অপারেশন করতে হয়েছে। সে সুস্থ ছিল, পরে কিডনি ফেল করে খুলনা গাজী মেডিকেলে মারা গেছে।
শাপলা ক্লিনিকে গত বছরের ১৯ মার্চ উপজেলা মৌখালী গ্রামের মাফুজুর সানার স্ত্রী আরিফা বেগম (২২) অপ-চিকিৎসার ফলে মারা যায়। এ ঘটনায় সিভিল সার্জন ক্লিনিকটি বন্ধ ঘোষণা করেন। এর কিছু দিন পরপরই আবার ক্লিনিকটি অজানা কারনে চালু হয়ে যায়। এরপর আবার চলতি বছরে শাহাদাৎসহ কয়েকজন নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। এরপরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অজানা কারনে নীরব রয়েছেন। উল্লেখ, উপজেলায় প্রায় ১০টি বে-সরকারি ক্লিনিক রয়েছে। এ সকল ক্লিনিকের অধিকাংশই সরকারি নিয়ম মেনে চলছে না। দুই-একটি ক্লিনিক নিয়মকানুন মেনে চললেও অধিকাংশ ক্লিনিকগুলি নিয়ন নীতির তোয়াক্কা না করে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বহাল তবিয়াতে চলছে। আর এদের অপ-চিকিৎসায় অকালে প্রাণ যাচ্ছে অনেকেরই। পাইকগাছা উপজেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা হ-য-ব-র-ল অবস্থায়। সরকারি প্রতিষ্ঠানে জনবল সংকট, নেই কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ, নেই ভালো অবকাঠামো। অপরদিকে বে-সরকারি ক্লিনিকে অপ-চিকিৎসায় প্রাণ যাচ্ছে অনেকের। ক্লিনিকগুলির বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ সাময়িকভাবে ব্যবস্থা নিলেও কয়েকদিনের মধ্যে অজ্ঞাত কারনে সেগুলি আবার পুনরায় চালু হচ্ছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়ছে উপজেলার নিরীহ অসহায় মানুষগুলো। বিষয়টি কর্তৃপক্ষ দেখবেন কি? এদিকে জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ আব্দুর রাজ্জাক মুঠোফোনে রোগী মৃত্যুর ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, গত বছরও এ ধরনের ঘটনায় তিন মাস মতো ক্লিনিক বন্ধ ছিলো। এবারও ক্লিনিকটি বন্ধ করে দেওয়া হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, অনেক সময় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির পরিবার কিংবা আত্মীয়রা কনভিন্স হয়ে যান। সে ক্ষেত্রে তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে বেগ পেতে হয়।