কলেজ পড়ুয়া ১৭ বছরের মেয়ে ধর্ষণের ঘটনায় পাইকগাছা থানায় মামলা করেন মেয়েটির বাবা। মামলার দিনই হামলার শিকার হয়েছে বাবা। ভাইকে মেরে হাত পা ভেঙে দিয়েছে। এরপরও মামলা না তোলায়, সাতক্ষীরা উপজেলার একটি ঘটনায় মেয়েটির বাবা ও ভাইকে উল্টো আসামি করে মামলা দায়ের করেছে ধর্ষণ মামলার আসামিরা।
গত ৮ মে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার চাঁদখালী ইউনিয়নের ধামরাইল গ্রামের বাসিন্দা মোঃ শাহামত মোড়লের মেয়ে গণধর্ষণের শিকার হয়। ১১ মে পাইকগাছা থানায় মেয়েটির বাবা বাদি হয়ে ৩ জনের নামে একটি মামলা (মামলা নং-১২) করে। মামলার পর থেকেই পরিবারটির ওপর কয়েকবার হামলা করে অভিযুক্তরা। মামলার ১নং আসামী একই গ্রামের মোঃ হালিম মোড়লের ছেলে মোঃ ওমর ফারুক (২৪), ২নং আসামি মোঃ লুৎফর মোড়লের ছেলে মোঃ মনিরুল মোড়ল (৩০) ও ৩নং আসামি মোঃ রশিদ মোড়লের ছেলে মোঃ সালাম মোড়ল (৪৫)।
১১ মে খুলনা জেলা পুলিশ সুপার বরাবর মেয়েটির বাবা একটি অভিযোগ পত্র দাখিল করেন। যেখানে তিনি উল্লেখ করেন, তার মেয়ের মেডিকেল রিপোর্ট সুষ্ঠ হচ্ছে না। মামলার অভিযুক্তরা এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ ও ডাক্তার পক্ষপাতিত্ব করছে।
মামলার ১নং আসামি পুলিশের ধরা-ছোয়ার বাইরে থাকলেও ৯ জুন ২ ও ৩নং আসামিকে আটক করেছিল র্যাব-৬। আটকের ১১ দিন পর ২১ জুন জামিনে মুক্তি পেয়ে মেয়েটির ভাইকে কুপিয়ে জখম করে ধর্ষক বাহিনীর লোকেরা। গত ২০ জুলাই খুলনা প্রেসক্লাবে মেয়েটি তার পিতাকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে।
গত ১১ আগস্ট পাইকগাছা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন শাহামত মোড়ল। যাতে তিনি উল্লেখ করেন, ৯ আগস্ট বিবাদীরা তার বাড়ির সামনে এসে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। তিনি প্রতিবাদ করলে বিবাদীরা মিথ্যা মামলায় জড়ানোসহ খুুন জখমের হুমকি প্রদর্শন করে।
সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার মধ্যম চাপড়া গ্রামের মাহমুদুল হাসান হৃদয়ের স্ত্রী নাদিরা পারভীন। গত ১৩ আগস্ট সাতক্ষীরা থানায় তিনি একটি এজাহার দায়ের করেন। যাহাতে তিনি উল্লেখ করেন, মোঃ মনিরুল ইসলামের সহযোগিতায় তিনি এজাহারটি থানায় প্রেরণ করেন। এই মনিরুল হচ্ছে শাহামতের দায়ের করা ধর্ষণ মামলার ২নং আসামি। তাই ঝোপ বুঝে কোপ দিতে দ্বিধা করেননি। নাদিয়া মামলা এখন পাইকগাছা থানায় (মামলা নং-১৮, তাং-১৩ আগস্ট)। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ও মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে করা মামলায় ৩ ও ৪নং আসামি করা হয়েছে ধর্ষণের শিকার মেয়েটির ভাই বদিউল ইসলাম ও বাবা শাহামত মোড়লকে। মামলার কারণে গ্রাম ছাড়া দু’জন। ভেঙে পড়েছে মেয়েটির পরিবার।
অভিযুক্ত মনিরুল মোড়লের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে, তার স্ত্রী রওশান আরা’র সাথে কথা হয়। তিনি ঘটনাটি অস্বীকার করেন। নাদিরা পারভিনের সাথে যোগাযোগ করা যায়নি। তার বাড়িতে তালা মারা ছিল।
এ বিষয়ে চাঁদখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জোয়াদুর রসুল বাবু ও ৪নং ওয়ার্ড সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, ধর্ষণের ঘটনা আমরা শুনেছি। ধর্ষণের ঘটনার পর থেকে মেয়েটির পরিবারের সদস্যরা কয়েকবার হামলার শিকার হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তিও ছিল। এছাড়া ১৩ আগস্ট যে মামলাটি হয়েছে, এখানে মেয়েটির বাবা ও ভাইকে চক্রান্তমূলক ভাবে ফাঁসানো হয়েছে। মনিরুলরা আর্থিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ার কারণে প্রশাসন পক্ষপাতিত্ব মূলক আচরণ করছে।
পাইকগাছা থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ আশরাফুল আলম বলেন, উভয় পক্ষের মামলা থানায় এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। মামলাগুলো তদন্তধীন অবস্থায় আছে। বিশেষ করে ধর্ষণ মামলায় মেয়েটির ডিএনএ টেস্টের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।