গেল বছরের জুন-জুলাই মাসে খুলনার দৌলতপুর মোকাম থেকে সবচেয়ে বেশি পাট রপ্তানি হয় পাকিস্তানে। অথচ ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে ভারতের বাজার ছিল খুলনার দৌলতপুরের পাট মোকামের দখলে। পশ্চিমবঙ্গের পাট কলগুলোর চাহিদার প্রেক্ষিতে সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে ভারতে পাট রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে। যদিও আম্ফানের কারণে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে পাটের উৎপাদন কম হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে সারাদেশ থেকে ৩৬০ কোটি টাকা মূল্যের তিন লাখ ৩৮ হাজার একশ’ ৮২ বেল পাট রপ্তানি হয়। তার মধ্যে শুধুমাত্র খুলনার দৌলতপুর মোকাম থেকে দুইশ’ পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের এক লাখ ৯২ হাজার বেল পাট রপ্তানি হয়। এ সময় দৌলতপুর মোকাম থেকে ভারতে একশ’ দুই কোটি টাকা মূল্যের এবং পাকিস্তানে ৬০ কোটি টাকা মূল্যের পাট রপ্তানি হয়। ২০১৮-২০১৯ সালে ভারতে যথাক্রমে দেড়শ’ থেকে দুইশ’ কোটি টাকা মূল্যের পাট দৌলতপুর মোকাম থেকে রপ্তানি হয়। ভারত ও পাকিস্তান ছাড়া যেসব দেশে পাট রপ্তানি হয় তার মধ্যে রয়েছে চীন, নেপাল, ব্রাজিল, বেলজিয়াম, ভিয়েতনাম, আইভেরিকোস্ট, এলসারভাদদ, রাশিয়া, ফিলিপাইন, ইউকে ও তিউনিশিয়া।
বাংলাদেশ জুট এসোসিয়েশন সূত্র জানায়, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে আটশ’ ৫৪ কোটি টাকা মূল্যের আট লাখ বেল পাট সারাদেশ থেকে রপ্তানি হয়। তার মধ্যে ৬৫ শতাংশ কাঁচা পাট খুলনার দৌলতপুর মোকাম থেকে রপ্তানি হয়েছে। মহামারি করোনার কারণে রপ্তানি প্রক্রিয়া বাঁধাগ্রস্ত হয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় স্থানীয় বাজারে পাটের মূল্য রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। দৌলতপুর পাট মোকামে গত সোমবার প্রতি মন পাট ৩৬শ’ থেকে ৩৮শ’ টাকা দরে বিক্রি হয়।
খুলনার দৌলতপুর মোকাম থেকে যেসব প্রতিষ্ঠান কাঁচা পাট রপ্তানি করছে তার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে পপুলার জুট এক্সচেঞ্জ। রপ্তানিকারক অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে সারতাজ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, শহীদ এন্ড সন্স, রিফাত এন্টারপ্রাইজ, মামুন জুট ট্রেডিং, শরীফ ব্রাদার্স, রাজীব জুট ট্রেডার্স, তাসফিয়া জুট ট্রেডিং, উত্তরা পাট সংস্থা, আলম ফাইর্বাস, এসআর এন্ড সন্স, এম এন জুট ট্রেডিং, প্রগতি জুট সাপ্লাই, ইয়াসিন ব্রাদার্স, আকুঞ্জী ব্রাদার্স, রশ্মি কবির, পিনিতাহ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, মন্ডল এন্ড কোম্পানি, রিপন এন্টারপ্রাইজ, ওহাব জুট ট্রেডিং, এবি জুট ট্রেডিং, কসমিক ফাইবার, আরমান জুট ট্রেডিং, এমডি বদরুদ্দোজা, পূরবী ট্রেডার্স, আরএম ট্রেডিং এবং ইউএসবি।
দৌলতপুর মোকামের পাট রপ্তানিকারক শেখ শহিদুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে জানান, পাকিস্তান বস্তা তৈরির জন্য দৌলতপুর মোকাম থেকে পাট ক্রয় করত। করোনা ভাইরাসের কারণে রপ্তানি বাণিজ্যে ভাটা এবং আম্ফানের কারণে উৎপাদন কম হওয়ায় সেখানে পাট রপ্তানি কমেছে। অপরদিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পাট কলগুলো বাংলাদেশের কাঁচা পাটের ওপর নির্ভরশীল। ভারত গোল্ডেন ফাইবারস কোয়ালিটির পাট ক্রয় করে। যা এশিয়ার মধ্যে শুধুমাত্র ফরিদপুর অঞ্চলেই উৎপাদিত হয়। তিনি বলেন, গেল মাসের শেষদিকে ভারতে প্রতি টন কাঁচা পাট ১৫শ’ ডলার মূল্যে বিক্রি হয়। ভারতে বিশেষায়িত পাট কলগুলোতে ফরিদপুরের উৎপাদিত পাটের চাহিদাই বেশি। তাছাড়া বেনাপোল স্থল বন্দর দিয়ে পাট রপ্তানিতে খরচ কম পড়ে। মোংলা বন্দর দিয়ে চীন ও পাকিস্তানে পাট রপ্তানি হয়।
উল্লেখ্য, গত ৩ জুলাই থেকে রাষ্ট্রায়ত্ব ২৫টি পাট কলের উৎপাদন বন্ধ হওয়ার পর অভ্যন্তরীণ বাজারে ‘গোল্ডেন ফাইবারস’ এর চাহিদা কমেছে।