নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, দেশ এখন দুঃশাসনে ডুবে গেছে। আন্দোলন ছাড়া চোখের জল এই সরকারের গদি নড়াতে পারবে না। প্রতিবছরই এখানে আসলেই স্বজনদের কান্না দেখি। কান্না কোন সমাধান নয়। আন্দোলনই এই সরকারের পতন নিশ্চিত করতে পারে। পুলিশ লীগ না থাকলে আ’লীগের অস্তিত্বও থাকবে না। দুর্নীতিতে সারাদেশ ছেয়ে গেছে। করোনা কালীন সময়েও যারা দুর্নীতি করেছে তাদের সেভাবে বিচার করতে পারছে না। কারণ দুর্নীতির উপর ভর করেই জনগণের ভোট ছাড়া এই সরকার ক্ষমতায় রয়েছে।
৩০ আগস্ট গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক গুম দিবস উপলক্ষে মায়ের ডাক এর উদ্যোগে শনিবার (২৯ আগস্ট) বিকালে শাহবাগস্থ জাতীয় জাদুঘরের সামনে গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের উপস্থিতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
মায়ের ডাক এর সভাপতি হাজেরা খাতুনের অসুস্থ্যতার কারণে তার বড় মেয়ে গুম হওয়া সাজেদুল ইসলাম সুমনের বড় বোন মারুফা ইসলাম ফেরদৌসির সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক, জোনায়েদ সাকি, ঢাবি’র সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরু , নুর খান লিটন, অধিকার’র নাসির উদ্দিন এলান, বাসদের আব্দুর রাজ্জাক, ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ কমিটির সদস্য ইফতেখার আহমেদ, জাতীয় মানবাধিকার সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক লায়ন আল আমিন, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের অনির্বান, মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটির রেজাউর রহমান লেলিন, গুম ফেরত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তারিক, তিতুমীর কলেজের ছাত্র মেহেদী হাসান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন এম. ইলিয়াস আলীর ছেলে আবরার ইলিয়াস, রামপুরা থানা ছাত্রলীগের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন তপুর মা আলহাজ¦ সালেহা বেগম, কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন সবুজের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস জিনিয়া, মাইকেল চাকমার পক্ষে সুনয়ন চাকমা, সাইফুর রহমান সজীবের পিতা শফিকুর রহমান, ইসমাইল হোসেনের মা শিরিন আক্তার, মো. হাবিবুর রহমানের মেয়ে জেসমিন বেগম, বাপ্পির বোন ঝুমুর আক্তার, তপন দাসের স্ত্রী সুমি রানী দাস, ইসমাইল হোসেন বাতেনের স্ত্রী নাসিমা আক্তার স্মৃতি, মনির হোসেনের ভাই শহীদুল্লাহ, ড্রাইভার কাউসারের মেয়ে লামিয়া মীম, পারভেজের শিশু কন্যা হৃদি-সহ প্রমুখ।
এসময় গুম সদস্যদের পরিবারের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন আফরোজা ইসলাম আঁখি, সানজিদা ইসলাম তুলি, আনোয়ার হোসেন মাহবুবের স্ত্রী রিনা ও তার মেয়ে রাইসা, পল্লবীর নুর আলমের স্ত্রী রিনা আলম, ছেলে প্লাবন আলম, এস.এম সানাউল্লাহ সানার স্ত্রী নাজনীন, তরিকুল ইসলাম তারার স্ত্রী বেবী আক্তার, ছেলে ওয়াজিদ ইসলাম তাহসিন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতির চেয়ারম্যান মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা।
বক্তারা বলেন, ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর গুম হওয়া থেকে সমস্ত ব্যক্তির সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক কনভেনশনটি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়। এই দিনকে সামনে রেখে আজ গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ ও ‘হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার্স, বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতি’ যৌথভাবে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারগুলোকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সমাবেশ, মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন এবং আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। এই অনুষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে আমরা এই দুটি নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্মরণ করছি এবং গুমের শিকার ব্যক্তিদের তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার দাবির পাশাপাশি বন্দুকযুদ্ধ বা ক্রসফায়ারের নামে নাগরিকদের বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা ও হেফাজতে নির্যাতনসহ সকল রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।
রাষ্ট্রীয় বাহিনীর কর্তৃক গুম ও বিচার বহির্ভূতভাবে মানুষ হত্যা হলো রাষ্ট্রীয় নিপীড়রে চরম বহিঃপ্রকাশ।
কিন্তু নিপীড়নকারী রাষ্ট্র শুধু গুম বা ক্রসফায়ারের মতো হত্যাকাণ্ডই ঘটায় না। সমাজের প্রত্যেক ক্ষেত্রে ভিন্নমত ও শাসকচক্রের স্বার্থবিরোধীতাকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য এমন কোন কাজ নেই, যা তারা করে না। একটি জনগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত না হওয়ার কারণে গুম, হেফাজতে নির্যাতন ও বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যার শিকার ব্যক্তিদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে এবং ভুক্তভোগী পরিবারগুলো রাষ্ট্রের রোষানলে পড়ছেন। তাই একটি জনগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং সবধরনের অন্যায়-অবিচারের প্রতিকার করে ন্যায়ভিত্তিক শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ভিক্টিম পরিবারগুলোকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের জনগণকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।