বুধবার সকাল ১১.৩০ ঘটিকায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন ‘নীল দল’ এর পক্ষ থেকে গত শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর, ২০২০) রাতে কুষ্টিয়ায় জাতির জনকের নির্মাণাধীন ভাস্কর্যে হামলার ঘটনার নিন্দা ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক
শাস্তি এবং যথাসময়ে ভাস্কর্য স্থাপনের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নীল দলের আহবায়ক ও বিশ^বিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড পাবলিক হেলথ্ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আশিকুল আলমের সভাপতিত্বে নীল দলের সদস্য সচিব ও
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. এম এ হান্নানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য প্রদান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ শহীদুর রহমান খান। প্রধান অতিথি তাঁর বক্তৃতায় বলেন, বাংলাদেশ মানেই বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটাক্ষ বা বঙ্গবন্ধুর
স্মৃতিতে আঘাত হলো বাংলাদেশের অস্তিত্বে আঘাতের শামিল। কারণ বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্ম তথা বিশ্ব মানচিত্রে এর অন্তর্ভুক্তির মূল কারিগর হলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জাতির জনকের
সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ যখন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে যাচ্ছে ঠিক তখনি স্বাধীনতা বিরোধী ও উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠী দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করার হীন উদ্দেশ্যে একের পর এক অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এসব ধর্মান্ধদের অন্যায় ও অযৌক্তিক দাবির প্রতি কর্ণপাত না করে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণে বিরোধীতাকারীদের কঠোরভাবে দমন করে ভাস্কর্য নির্মাণের কাজ দ্রুত সম্পন্ন এবং হামলাকারীদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের নিকট জোর দাবি জানান। এছাড়া তিনি
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বঙ্গবন্ধুর চিহ্নিত খুনিদের দেশে ফেরত এনে অতিদ্রুত শাস্তি কার্যকরের ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, আজকের বাংলাদেশের বাস্তবতায় দলমত নির্বিশেষে স্বাধীনতার স্বপক্ষের সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বাধীনতা বিরোধী চক্রকে রুখে দিয়ে বাংলাদেশের চলমান উন্নয়ন অগ্রযাত্রার ধারা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. উজ্জল কুমার নাথ, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ডাঃ খন্দকার মাজহারুল আনোয়ার শাজাহান, বিশ্ববিদ্যালয়ের
এগ্রোনমি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. ইশরাত জাহান আইরিন, প্রভাষক ডাঃ সাহাবুদ্দিন আহমেদ, প্রভাষক ডাঃ মোঃ জান্নাত হোসেন সহ প্রমূখ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষকবৃন্দ, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, গত শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর,২০২০) রাতে একদল দুষ্কৃতিকারী কুষ্টিয়ার পাঁচ রাস্তা মোড়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভেঙে ফেলে যা বাংলাদেশ ও স্বাধীনতার উপর চরম আঘাত। ভাস্কর্য হলো একটি দেশের কৃষ্টি যা সে দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরে। এমনকি সৌদি আরব, কাতার, তুরস্ক, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জাতীয় বীর ও গুণীজনদের সম্মানার্থে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ভাস্কর্য নির্মাণ ও স্থাপন করা হয়েছে। সম্প্রতি ইসলামের নামধারী কিছু কট্টরপন্থী সংগঠনের বিপদগামী লোক বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধীতার নামে দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করার ষড়যন্ত্র করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলে লিপ্ত। তারা ভাস্কর্য ও মূর্তিকে এক করার প্রয়াস নিয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের চলমান উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করে দেশকে পাকিস্তানি ভাবধারায় নিয়ে যেতে চায়। সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য ভাস্কর্য বিরোধীতার নামে মূলতঃ তারা একাত্তরের পরাজিত শক্তির পক্ষ নিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধীতা করছে এবং চলমান উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে পিছিয়ে দেওয়ার জন্য নানা উস্কানিমূলক কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে।
মানববন্ধনে ভাস্কর্য ও মূর্তিকে এক করে ধর্মীয় উস্কানিদাতাদের ঘৃণ্য আচরণের প্রতি খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় নীল দল তীব্র নিন্দা জানায় এবং একই সাথে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সকল গণতান্ত্রিক শক্তিকে এসব স্বাধীনতা বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানান। এছাড়া এসব ধর্মান্ধদের অন্যায় ও অযৌক্তিক দাবির প্রতি কর্ণপাত না করে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধীতাকারীদের কঠোরভাবে দমন করে ভাস্কর্য নির্মাণের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বানের পাশাপাশি কুষ্টিয়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্যে হামলাকারী ও তাদের ইন্ধন দাতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের নিকট জোর দাবি জানানো হয়।