বদলে গেছে তিন শতাধিক মৎস্যজীবীর ভাগ্য। ইউরোপিয়ন ইউনিয়নের অর্থায়নে বে-সরকারী উন্নয়ন সংস্থা উত্তরণের সহযোগিতায় ১৫টি মৎস্যজীবী সংগঠনের সদস্যরা প্রায় ২০৩ একর জলমহাল পরিচালনা করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করার পাশাপাশি সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছে। এসকল মৎস্যজীবীদের বসবাস সাতক্ষীরা জেলার তালা, শ্যামনগর, খুলনার জেলার ডুমুরিয়া ও বটিয়াঘাটা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে।
জানা গেছে, এক সময় এসব মৎস্যজীবীরা জলমহাল থেকে বঞ্চিত ছিল। অমৎস্যজীবী ও প্রভাবশালীদের দখলে ছিল জলমহাল। তখন মৎস্যজীবীরা অন্যের মৎস্য ঘেরে কিংবা সরকারি জলমহালে মাছ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করত। বর্তমানে তারা বিস্তীর্ণ জলমহালের মালিক, জলমহালের আহরিত সব মাছ বিক্রির অর্থ এখন তাদের। এ কথা ভাবতেই ওদের নিজেদের মধ্যে অন্য রকম শিহরণ আন্দোলিত করে। তারা এখন নতুন করে নতুনভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখছে।
তালা উপজেলার কৈখালি গ্রামের সুদর্শন মন্ডল, মাদ্রা গ্রামের সমীরণ বিশ^াস, সরজিত বিশ^াসসহ কয়েকজন মৎস্যজীবী জানান, তারা সকলেই ছিল দরিদ্র। বিস্তীর্ণ জনপদের গ্রামের পর গ্রাম চিংড়ী চাষের আওতায় চলে যাওয়ায় এক সময় ভাটা পড়ে উন্মুক্ত মৎস্য আহরণে।
প্রাকৃতিক মাছের আঁধারগুলো ক্রমান্বয়ে চলে যায় ব্যক্তি মালিকানায়। মৎস্যজীবী হয়েও নদীতে মাছ ধরতে না পেরে তাদের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরার মত অবস্থা চলছিল। প্রায় প্রতিটি পরিবারেই বছরের সারাটা সময় লেগে থাকতো অভাব-অনটনের ঘনঘটা। সরকারী জলমহাল নীতিমালা’২০০৯ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়ে প্রকৃত মৎস্যজীবীদের সাথে আলোচনা শুর করে তালার উত্তরণের একদল উদ্যোমী কর্মী। শুরু হয় সমবায় সমিতি গঠণের প্রক্রিয়া। নিয়মিত মিটিং করা, রেজুলেশন লেখা, সঞ্চয় করা, ব্যাংক হিসাব খোলা ইত্যাদি কাজ সম্পাদন করতে তাদের বেশকিছু সময় লেগে যায়। এভাবে সহযোগিতায় গড়ে ওঠে মৎস্যজীবী সংগঠন।
উত্তরণ এর আমার প্রকল্পের প্রকল্প সমন্বয়কারী জাহিন শামস জানান, ১৫ ভূমিহীন মৎস্যজীবী সংগঠনের অধিকাংশ রেজিষ্ট্রেশনে,সরকারী জলমহাল টেন্ডারডাকে অংশগ্রহণ করতে উত্তরণ-আমার প্রকল্প আর্থিকভাবে সহায়তা করে। ফলে মৎস্যজীবী সংগঠনগুলি সরকারী জলমহাল টেন্ডারডাকে অংশগ্রহণ করতে শুরু করে। সেই থেকে শুরু অদ্যবধি (বিগত এক বছর) সংগঠনের হাতে ১৬টি জলমহাল রয়েছে। আর ১৫ ভূমিহীন মৎস্যজীবী সংগঠনের ৩১২জন সদস্য ২০২.৯১ একর জলমহাল পরিচালনা করছে। প্রত্যেক সদস্যকে অফেরতযোগ্য ৯ শত টাকা করে প্রদান করছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে টাকা প্রদানের সময় ভূমি কমিটির সদস্য ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকেন।
তালা উপজেলা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি গণেশ চন্দ্র বর্মণ ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী নিকারী বলেন, বেশ কয়েকটি সংগঠন রেজিষ্ট্রেশনে উত্তরণ-আমার প্রকল্প আর্থিকভাবে সহায়তা করে। এক পর্যায়ে মৎস্যজীবী সংগঠনগুলি সরকারী জলমহাল টেন্ডারডাকে অংশগ্রহণ করতে শুরু করে। সেই থেকে শুরু হয় তাদের নতুন করে পথ চলা।
তালা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সরদার মশিয়ার রহমান বলেন, উত্তরণের সহযোগিতায় সম্মিলিতভাবে তিন শতাধিক মৎস্যজীবী জলমহাল ইজারা নিয়ে দু’বেলা দু’মুঠোভাত, সন্তানদের পড়ালেখা শেখানোর পাশাপাশি ছোটখাট ঋণ-দেনা পরিশোধ করতে পারছেন। তাদের সংসারে ফিরে এসেছে স্বচ্ছলতা। বর্তমানে নতুন করে নতুন ভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখছে তারা।