চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর করার প্রতিবাদে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলায় বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে পরিবহন শ্রমিকরা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। কার্যত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এক জেলার সাথে অন্য জেলা। তবে স্থানীয় সকল রুটে বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও ঢাকাসহ দূরপাল্লার বাস ও ট্রাকসহ অন্যান্য পরিবহন চলাচল করছে।
সোমবার (৮ নভেম্বর) সকাল থেকে পরিবহন শ্রমিকদের আকস্মিক এই কর্মসূচির কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন দূরপাল্লার যাত্রীরা। অনেকেই বাস স্ট্যান্ডে এসে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে ফিরে গেছেন বাস না পেয়ে।
শ্রমিক নেতাদের দাবি, আইন সংশোধনের পর এটি বাস্তবায়ন করা হোক। এটা না করা পর্যন্ত তাদের এ ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে। এদিকে, হঠাৎ করেই বাস চলাচল বন্ধ হওয়ায় দুর্ভেোগে পড়েছেন লাখো যাত্রী। তারা অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে নছিমন, করিমন ও ইজিবাইকে করে গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন।
খুলনা বিভাগীয় শ্রমিক ফেডারশনের যুগ্ম সম্পাদক মোর্তজা হোসেন বলেন, যশোর, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, মাগুরা, নড়াইল, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গার পরিবহন শ্রমিকরা সকাল থেকে ‘স্বেচ্ছায়’ এই কর্মবিরতি পালন করছেন।
তিনি বলেন, শ্রমিকরা কাউকে ইচ্ছা করে হত্যা করে না। অনিচ্ছাকৃত দুর্ঘটনার জন্য নতুন সড়ক আইনে তাদেরকে ঘাতক বলা হচ্ছে। তাদের জন্য এমন আইন করা হয়েছে যা সন্ত্রাসীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
নতুন আইনের অনেক ধারার ব্যাপারে শ্রমিকদের আপত্তি রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার সমাধানের কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় শ্রমিকরা বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন।
জানতে চাইলে যশোর জেলা পরিবহন সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন অর রশিদ বলেন, ১৪ নভেম্বর যশোরে এক সমাবেশ থেকে ২০১৮ সালের সড়ক আইন সংশোধনের দাবি জানিয়েছিলেন তারা। এরপর রোববার থেকে যশোরের ১৮ রুটের শ্রমিকরা কর্মবিরতি শুরু করেন। পরে সোমবার সকালে অন্যান্য জেলাতেও কর্মবিরতি শুরু হয়।
তবে যশোর-বেনাপোল ও যশোর-সাতক্ষীরার অভ্যন্তরীণ রুটে কোনো যাত্রীবাহী বাস চলাচল না করলেও ঢাকা-কলকাতা ও বেনাপোল থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও দেশের অন্যান্য স্থানে দূরপাল্লার বাস চলাচল করছে।
এছাড়া প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, ইজিবাইক, মাহেন্দ্র, নসিমন-করিমন জাতীয় ছোট যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে বলে আমাদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।
তারা জানান, ইজিবাইক ও তিন চাকার যানবাহন মহাসড়কে চলাচলে নিষিদ্ধ হলেও বাস বন্ধ থাকায় এ যানবাহনগুলো মহাসড়কে চলাচল করছে।
উল্লেখ্য, গত বছর ঢাকায় বাসচাপায় দুই ছাত্রছাত্রীর মৃত্যুর পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের নজিরবিহীন আন্দোলনের মুখে নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংসদে পাস হয়। তবে তা এ বছর ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর করার কথা বলা হয়।
বেপরোয়া মোটরযানের কবলে পড়ে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড, সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে এ আইনে, যা আগের তুলনায় বেশি।
এ কারণে আইনটি প্রণয়নের পর থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছে পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো।