অনলাইন ডেস্কঃবকুল তলার মোড় বা পুকুর পাড়ে সিগারেটের ধোঁয়া আর চোখে মিলছে না। বিকট শব্দে কলেজ চত্বরে গ্র“পে গ্র“পে ঘুরছে না মোটরসাইকেল। ক্যাম্পাসের গাছগুলোতে বা বিদ্যুতের পিলারে নেই কোন রাজনৈতিক প্যানা পোস্টার। ১০/১২ জন শিক্ষকের ভিজিল্যান্স ক্যাম্পাসে টহল দিচ্ছি। কোন শিক্ষার্থী ক্লাস ফাঁকি দিলেই নেওয়া হচ্ছে ব্যবস্থা। ইভটিজিং মুক্ত ক্যাম্পাস, দাবি কর্তৃপক্ষের।
সরকারি বিএল কলেজ (সরকারি ব্রজলাল কলেজ) ক্যাম্পাসে গিয়ে সম্প্রতি এমন চিত্র চোখে পড়েছে। কলেজটিতে উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক এবং স্নাতকোত্তরে প্রায় ৩৩ হাজার শিক্ষার্থী এখানে লেখাপড়া করছে। কলেজ সূত্র জানায়, ১৯০২ সালে নগরীর দৌলতপুরের ভৈরব নদীর তীরবর্তী ৪১ একর ৫ শতাংশ জমির ওপর কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। কলেজটিতে ২টি ছাত্রীনিবাস, ৫টি ছাত্রাবাস, মসজিদ, মন্দির, মুক্তিযুদ্ধ কর্তার, ফ্লোরাল গার্ডেনসহ রয়েছে প্রায় তিন ডজন সিসি ক্যামেরা। কলেজের নিরাপত্তা আরও বাড়ানোর জন্য খুব দ্রুত উচ্চ মাধ্যমিকের সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর বায়ো মেট্রিক পদ্ধতি চালু করা হচ্ছে।
কলেজের একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে আলাপকালে জানা যায়, বিএল কলেজের ক্যাম্পাসের চিত্রটাই পরিবর্তন হয়ে গেছে। ছাত্রীরা নিশ্চিন্তে এখানে লেখাপড়া করতে আসে। ইভটিজিংয়ের কোন ভয় নেই। কারণ সমগ্র ক্যাম্পাসটি ৩২টি অত্যাধুনিক সিসি ক্যামেরা দিয়ে নিয়ন্ত্রিত। এছাড়া শিক্ষকদের ১২টি ভিজিল্যান্স টিম কলেজ চলাকালীন সময়ে ক্যাম্পাসে টহল দেয়। সন্ধ্যার পর কর্মচারীদের ভিজিল্যান্স টিম কাজ করছে। প্রকাশ্যে ধূমপান এবং ক্লাস ফাঁকি দেওয়া অনেকটাই কমে গেছে। ক্যাম্পাসের মধ্যে কেউ মোটরসাইকেল নিয়ে টহল দিতে পারে না। এটাতে কলেজের ৬০ ভাগ শিক্ষার্থী খুবই খুশী হয়েছে। প্রধান ফটকের পকেট গেট দিয়ে শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করেন। পাশাপাশি ২নং গেটের পাশের গ্যারেজে সকলকেই বাধ্যতামূলক গাড়ি রাখতে হয়। যা কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রিত।
শিক্ষার্থীরা আরও জানায়, কলেজে নেতা-কর্মীদের প্যানা-পোস্টারে অস্থির পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। যা এখন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত। তবে ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে আভ্যন্তরীণ মত বিরোধের কারণে অনেক সময় বিশৃঙ্খলা ঘটনা ঘটে। ক্যাম্পাসে শৃঙ্খলা ফেরাতে কলেজ কর্তৃপক্ষ, রাজনৈতিক দল এবং প্রশাসন সার্বিকভাবে কাজ করলেও দুইটি বড় সমস্যা এখনও নিরসন হয়নি। একটা হল বহিরাগত প্রবেশ এবং অপরটি হল ছাত্রবাসে আধিপত্য এবং মাদক সমস্যা। তবুও বর্তমান ক্যাম্পাসের অবস্থা নিয়ে সকল শিক্ষার্থীরাই খুশি। কারণ কলেজ প্রতিষ্ঠার পর থেকে এমন শৃঙ্খলতায় ক্যাম্পাস আনার প্রচেষ্টা আগে করা হলেও সেটি ব্যর্থ হয়েছিল।
বিএল কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বাচ্চু মোড়ল জানান, অতীতে যে কোন সময়ের চেয়ে বর্তমানে ক্যাম্পাসের পরিবেশ অনেক ভাল। বিশেষ করে নিরাপত্তা আগেরকার তুলনায় অনেক বেড়েছে। অভিভাবকরা সন্তানদের নিশ্চিন্তে ক্যাম্পাসে পাঠাতে পারে।
কলেজ ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি রাকিব মোড়ল বলেন, ছাত্রাবাসে শিক্ষার্থীরা মাদক সেবন করে না। কলেজের পার্শ্ববর্তী বহিরাগতরা ছাত্রবাসে প্রভাব বিস্তার করে এগুলো করে। বহিরাগতদের প্রবেশ প্রতিরোধ করতে কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং রাজনৈতিক দলগুলো সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। তিনি আরও বলেন, কলেজে যে সকল অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে তা কোনটাই কলেজের সাথে সম্পৃক্ত না। বাইরের ঘটনার জের ধরে ক্যাম্পাসে এসে ছেলেরা বিশৃঙ্খলতার চেষ্টা করে।
বিএল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর কে এম আলমগীর হোসেন বলেন, ক্যাম্পাসটি ইভটিজিং মুক্ত হিসেবে আমরা দাবি করি। এছাড়া ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা আগের তুলনায় অনেক ভাল। দিন-রাত ২৪ ঘন্টা সিসি ক্যামেরা দিয়ে সেটা মনিটরিং করা হয়। বাইক বা গাড়ি নিয়ে কেউই ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে না। এতে করে ক্যাম্পাসের মধ্যে শিক্ষার্থীরা এবং শিক্ষকরা অবাধে চলাচল করতে পারছে। কলেজের পরিবেশ ভাল রাখতে ছাত্রনেতাদের সাথে আলাপ করে সকল প্যানা-পোষ্টার নামিয়ে ফেলা হয়েছে। প্রকাশ্যে ধূমপান এবং ক্লাস ফাঁকি দিলেই ভিজিল্যান্স টিম ব্যবস্থা নিচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের জন্য লাইব্রেরীতেই মুক্তিযুদ্ধ কর্নার করা হয়ে