সব কিছু
facebook channelkhulna.tv
খুলনা শুক্রবার , ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
বীর মুক্তিযোদ্ধা মির্জা আফজাল হোসেন এর মৃত্যুবার্ষিকীতে বিনম্র শ্রদ্ধা | চ্যানেল খুলনা

বীর মুক্তিযোদ্ধা মির্জা আফজাল হোসেন এর মৃত্যুবার্ষিকীতে বিনম্র শ্রদ্ধা

২২ শে ফেব্রুয়ারি ২০২২, খুলনার বড় বয়রার কৃতি সন্তান, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামীলীগ নেতা মির্জা আফজাল হোসেন এর ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৫ সালের এদিনে ৮১ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন রণাঙ্গনের এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ছিলেন খুলনা জেলার বয়রা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। মুক্তিযুদ্ধকালীন তিনি ছিলেন বয়রা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধান। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর, খুলনাঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম শীর্ষ সংগঠক মির্জা খয়বার হোসেন  তার আপন ছোট ভাই। ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধে খুলনার প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধের অন্যতম পরিকল্পনাকারী, সংগঠক এবং সম্মুখযোদ্ধা ছিলেন মির্জা আফজাল হোসেন। প্রতিরোধ যুদ্ধের প্রধান সংগঠক ও নেতা ছিলেন তার ছোট ভাই মির্জা খয়বার হোসেন। ইতিহাসে এই যুদ্ধ ‘বৈকালীর যুদ্ধ’ নামে পরিচিত।

বয়রা স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর উদ্যোগে প্রতিরোধ যুদ্ধে আগ্রহী স্থানীয় যুবকদের মার্চ মাসের প্রথমদিকেই সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বয়রার স্কুল মাঠে এই ট্রেনিং দেওয়া হয়। ট্রেনিংয়ে নেতৃত্ব দেন বয়রা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধান মির্জা আফজাল হোসেন এবং তৎকালীন বয়রা আর আর এফ পুলিশ ক্যাম্পের প্রধান সুবেদার হাবিলদার শামসুর রহমান, পুলিশ ক্যাম্পের সদস্য হাবিলদার সাঈদুর রহমান সহ আরও একজন। ২৬ শে মার্চ বৈকালী এলাকাস্থ যশোর রোড সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২৬ শে মার্চ মির্জা আফজাল হোসেনের নেতৃত্বে আর আর এফ ক্যাম্পের অস্ত্রাগার ভেঙে রাইফেল, গোলাবারুদ লুট করা হয়। এর পূর্বেই মির্জা খয়বার হোসেনের উদ্যোগে তার বটিয়াঘাটাস্থ পরিত্যক্ত বাড়িতে বানানো বিপুল পরিমাণ বোমা প্রতিরোধ যুদ্ধে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে নিয়ে আসা হয়। এসব গোলাবারুদ ও বোমা ২৭ মার্চ প্রতিরোধ যুদ্ধে ব্যবহৃত হয়। বৈকালীর প্রতিরোধ যুদ্ধ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।

এই যুদ্ধের পর হানাদার বাহিনী মির্জা খয়বার- মির্জা আফজাল ভ্রাতৃদ্বয় সহ নেতৃবৃন্দকে হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকে। ফলে তারা বটিয়াঘাটাস্থ পরিত্যক্ত বাড়িতে সদলবলে আআত্মগোপন করে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকেন।
মির্জা খয়বার হোসেনকে ধরার জন্য খুলনা বেতার কেন্দ্র থেকে পুরস্কার ও ঘোষণা করা হয়। পরে হানাদার বাহিনী তার সদলবলে বটিয়াঘাটায় অবস্থানের কথা জানতে পারার পর তার বটিয়াঘাটার চকরাখালিস্থ বাড়ি আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয় এবং বাড়ি লক্ষ্য করে অসংখ্য শেল নিক্ষেপ করে। এতে অনেক বাড়ি ভস্মীভূত হয়। তবে মির্জা খয়বার হোসেন সহ তার সাথে থাকা স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর সদস্য এবং আওয়ামীলীগের নেতৃস্থানীয়রা অক্ষত থাকেন। অতপর মুক্তিযুদ্ধকে এগিয়ে নিতে সীমান্ত পার হয়ে ভারত চলে যান মির্জা খয়বার হোসেন ভ্রাতৃদ্বয়। মির্জা আফজাল হোসেন মে মাসের প্রথমদিকে ভারতে গমন করে ৯ নং সেক্টরের হেডকোয়ার্টারে যোগদান করেন। জাতীয় পরিষদ সদস্য এম এ গফুরের নির্দেশে এবং সেক্টর কমান্ডার মেজর এম এ জলিলের তত্ত্বাবধানে টাকি যুব প্রশিক্ষণ ক্যাম্প গড়ে তোলেন।

টাকী ক্যাম্প প্রতিষ্ঠার শুরুতে ক্যাম্প কমান্ডার এবং পরবর্তীতে ক্যাম্প ইন-চার্জ ছিলেন মির্জা আফজাল হোসেন। দেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত ক্যাম্প প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ৭৫’র ১৫ ই আগস্টের পর ছোট ভাই বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর মির্জা খয়বার হোসেন রাজবন্দী হিসেবে গ্রেফতার হলে তিনি নৌবাহিনীর চাকুরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন পরিবারের স্বার্থে। পরবর্তীতে আওয়ামীলীগের হাল ধরেন তিনি। তিনি ছিলেন আওয়ামীলীগের একজন নিবেদিতপ্রাণ দক্ষ সংগঠক। সামরিক শাসক এরশাদের শাসনামলে ফ্রিডম পার্টির উত্থানকালীন সময়ে ১৯৮৬-‘৯২ সাল পর্যন্ত ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের আহবায়ক এবং ৯২-৯৬ মেয়াদে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। আওয়ামীলীগকে দুঃসময়ে সংগঠিত করেছেন মুজিব অন্তঃপ্রাণ এই সংগঠক। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে একাধিকবার তাদের বড় বয়রার ঐতিহ্যবাহী ‘মির্জা বাড়ি’ তে এসেছেন এবং আতিথেয়তা গ্রহন করেছেন। স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে এই পরিবারের অবদান অপরিসীম।

বঙ্গবন্ধু ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে বন্দি হওয়ার পূর্বে বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে টেলিফোন মারফত মির্জা খয়বার হোসেনের কাছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা প্রেরণ করা হয়েছিল। মির্জা আফজাল হোসেনের আরেক ছোট ভাই মির্জা তসলিম হোসেন ও ছিলেন একজন সাহসী যোদ্ধা। তিনি ছিলেন টাকি ক্যাম্পের একজন ইনস্ট্রাক্টর। তার আরেক ভাই মির্জা এমদাদ হোসেন ছিলেন ডাক বিভাগের সরকারি কর্মকর্তা।মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর দোসরদের দ্বারা নির্যাতনের স্বীকার হন তিনি। তার তিন ভাই মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করায় তাকে ধরে নিয়ে যায় পাক হানাদার বাহিনীর দোসররা। কিন্তু সাথে আইডি কার্ড থাকায় তিনি প্রাণে রক্ষা পান।

মির্জা আফজাল হোসেনের বড় পুত্র মির্জা আহসান হাবীব (হাসান) ৮০ ও ৯০’র দশকে খুলনায় ছাত্রলীগের রাজনীতির অন্যতম সাহসী সংগঠক ছিলেন। ছিলেন সিটি কলেজ ছাত্রসংসদের নির্বাচিত জনপ্রিয় প্রতিনিধি। ছাত্রলীগের রাজনীতি করা মির্জা হাসান ৮০’র দশকে দীর্ঘদিন জেল খেটেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করার জন্য। তাদের বাড়িতে বোমা হামলা করা হয়েছে সরকারি মদদে। মির্জা হাসান দীর্ঘদিন ধরে ৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্টিত আছেন। মেজোপুত্র মির্জা আপ্পান হাবীব ৮০’র দশকের মধ্যভাগ থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে খালেদা-নিজামী জোট সরকার এবং ওয়ান ইলেভেনের অনির্বাচিত সরকারের সময়ে খুলনা মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারন সম্পাদকের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। ছিলেন খুলনা মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে খুলনার রাজপথে তার রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০২ সালের নভেম্বর মাসে অপারেশন ক্লিনহার্টের সময় যৌথবাহিনীর নির্মম নির্যাতনের শিকার হন মির্জা আপ্পান হাবীব এবং মির্জা আশফাক জামান (মির্জা আফজাল হোসেন এর সেজোপুত্র)।তাদের বিরুদ্ধে মামলা বা কোন ধরনের অভিযোগ না থাকলেও শুধুমাত্র আওয়ামী পরিবারের সন্তান হওয়ার কারনে তাদের উপর সেদিন টর্চার করা হয়েছিল। মির্জা আফজাল হোসেন এর মেজকন্যা মির্জা নাজু খুলনা সরকারি মহিলা কলেজের জনপ্রিয় ছাত্রলীগ নেত্রী ছিলেন। ছিলেন মহিলা কলেজ ছাত্রীসংসদের ছাত্রলীগ প্যানেল থেকে নির্বাচিত সমাজকল্যাণ সম্পাদিকা। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ঢাকার সবুজবাগ থানা যুব মহিলা লীগের সাধারন সম্পাদিকা ছিলেন মির্জা নাজু। ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলন করতে গিয়ে কারাবরণ করেন তিনি। বর্তমানে যুব মহিলা লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আইন বিষয়ক সম্পাদক মির্জা নাজু রাজনীতির পাশাপাশি সাংবাদিকতা পেশায় জড়িত।

আজ দলের সুসময়ে দল থেকে যোজন যোজন দূরে ৭৫ পরবর্তী দুঃসময়ের কান্ডারী এই পরিবারের সদস্যরা! টানা এক যুগেরও বেশি সময় ক্ষমতার মসনদে থাকা আওয়ামীলীগ আজ ভুলে গেছে মির্জা আফজাল হোসেনদের মত দূর্দিনের নিবেদিতপ্রাণ, আদর্শিক, সাহসি সংগঠকদের। দূর্দিনের পরীক্ষিত ত্যাগী কর্মিদের দূরে ঠেলে দলে  প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মুজিববিদ্বেষী,  আদর্শচ্যুত, সুবিধাভোগী নব্য আর হাইব্রীডদের নেতৃত্ব। এই অবস্থার অবসান হোক! ত্যাগীরা ফিরে আসুক রাজনীতির মঞ্চে। উচ্চারিত হোক মির্জা আফজালদের নাম, স্মরণ করুক বিনম্র শ্রদ্ধায়। মৃত্যুবার্ষিকীতে এই প্রত্যাশা।

লেখক :: মোঃ নজরুল ইসলাম, কলামিস্ট ও তরুণ আওয়ামীলীগ নেতা

https://channelkhulna.tv/

খোলামত আরও সংবাদ

‘ছাত্ররা আমার কথা শুনলো না, শুনলো ভুট্টো সাহেবের কথা’

প্রিয় মানুষকে অনুকরণ এবং অনুসরণের মাধ্যমে ভালোবাসার প্রকাশ ঘটে

সহনীয় মূল্যে ইলিশ : মডেল উদ্ভাবন

গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী ভিন্ন বাংলাদেশ, ক্রীড়াঙ্গনেও সফলতা

আরেক অর্জন: নিয়ন্ত্রিত হতে যাচ্ছে দ্রব্য মূল্য

পিতার অপমানের দায় কন্যাকেই নিতে হবে

চ্যানেল খুলনা মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
DMCA.com Protection Status
সম্পাদক: মো. হাসানুর রহমান তানজির
It’s An Sister Concern of Channel Khulna Media
© ২০১৮ - ২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | চ্যানেল খুলনা.বাংলা, channelkhulna.com.bd
যোগাযোগঃ কেডিএ এপ্রোচ রোড (টেক্সটাইল মিল মোড়), নিউ মার্কেট, খুলনা।
প্রধান কার্যালয়ঃ ৫২/১, রোড- ২১৭, খালিশপুর, খুলনা।
ফোন- 09696-408030, 01704-408030, ই-মেইল: channelkhulnatv@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য অধিদফতরে অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিবন্ধনের জন্য আবেদিত।