চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃআমাদের বাড়ি থেকে এখনো জল নামেনি, উঠানে জল। এ বছর আমাদের বিলে ধান হবে না। আমরা কি খেয়ে বেঁচে থাকবো। এ অঞ্চলে এবছর দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে। এমন দুশ্চিন্তায় রাতে আমার ঘুম হয়না। পানি কমছে না এসব কথাগুলো বললেন, মণিরামপুর উপজেলার হাটগাছা গ্রামের মানিক মল্লিকের ছেলে মিলন মল্লিক। যশোরের মণিরামপুর, কেশবপুর ও অভয়নগর উপজেলার মুক্তেশ্বরী-টেকা-হরি ও আপারভদ্রা-হরিহর, বুড়িভদ্রা ও খুলনার ডুমুরিয়া, ফুলতলা বেষ্টিত অঞ্চলকে বলা হয় ভবদহ। গতকাল বুধবার সরেজমিনে অভয়নগরের বেদভিটা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তায় এখনো কাঁদা পানি। পূর্বপাড়ার লোকজন রাস্তার উপর দিয়ে সাঁকো তৈরি করে যাতায়াত করছে। ডহর মশিয়াহাটী, ডুমুরতলা ও মণিরামপুর উপজেলার হাটগাছা, সুজাতপুর গিয়ে দেখা যায়, এখনো কয়েকজনের বাড়ির উঠানে পানি জমে আছে। অধিকাংশ মানুষের বাড়ির চারিপাশে পানি থৈ থৈ করছে। এসব গ্রামের কোথাও কৃষকরা বোরো ধানের বীজতলা তৈরি করতে পারেনি। এ বছর ভবদহ অঞ্চলে জলাবদ্ধতা স্থায়ী রূপ নিয়েছে। দূর্বিসহ জীবন তাদের জন্য অপেক্ষা করছে বলে জানালেন এলাকাবাসি। বীর মুক্তিযোদ্ধা নারায়ন চন্দ্র মল্লিক বলেন, নদী কেটে নদী বাঁচানো যায় না, নদীর প্রবাহ নিশ্চিত করেই কেবল নদী বাঁচানো সম্ভব। কাজেই টিআরএম প্রকল্পের বিকল্প নেই। জানা যায়, জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে এলাকার মানুষ ১৯৯৭ সালে নদীর বেড়িবাঁধ কেটে জোয়ারের পানি পাশের ভায়না বিলে ঢুকিয়ে দেয়। এরপর সরকার ভবদহে টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) প্রকল্প গ্রহণ করে। ফলে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ভবদহে জলাবদ্ধতা হয়নি। কয়েক বছর আগে সেনাবাহিনীর তত্ত্ববধানে কাজ করার পর এলাকার ভুক্তভোগী মানুষ সামান্য আশার আলো দেখতে পেলেও কোনো সমাধান হয়নি। ভবদহ পানি নিষ্কাষণ কমিটির যুগ্ম আহবায়ক ইউপি চেয়ারম্যান শেখর চন্দ্র রায় বলেন, দিন যতই যাচ্ছে ততই ভবদহ অঞ্চলের ১০ লক্ষাধিক মানুষের জন্য দুঃসংবাদ আসছে। এবছর এ অঞ্চলে ধান হবে না। শুধু শুধু সরকারের শত শত কোটি টাকা জলে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ভবদহ সমস্যা সমাধানে টিআরএমের কোনো বিকল্প নেই। ভবদহ জলাবদ্ধতা নিরসন আন্দোলন কমিটির আহবায়ক ও অভয়নগর উপজেলা আ’লীগের সভাপতি আলহাজ্ব এনামুল হক বাবুল বলেন, ভবদহের জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানের লক্ষে ইতোমধ্যে ভবদহ এলাকাবাসীর সাথে মতবিনিময় সভা, যশোর-খুলনা মহাসড়কে মানববন্ধন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘট সহ জেলা প্রশাসক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ও ইউএনও বরাবর স্মারকলিপি পেশ করা সহ বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আমাদের ঘোষিত টিআরএম কার্যক্রম বাস্তবায়ন, আমডাঙ্গা খাল খনন সহ ৬ দফা দাবিগুলো পূরণ করা হলে ভবদহ এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসে স্থায়ী সমাধান হবে বলে তিনি দাবি করেন।
এব্যাপারে মণিরামপুর উপজেলা সহকারি কৃষি অফিসার রেখা রানী বিশ্বাস বলেন, এ অঞ্চলে কেউ এখনো বোরো ধানের বীজতলা তৈরি করতে পারিনি। এবছর ধান হবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এ অঞ্চলে ধান হবে কি না, তা এখন বলতে পারবো না। যদি পানি কমে তাহলে কৃষকরা অন্য অঞ্চল থেকে পাতো কিনে ধান চাষ করতে পারবে।