চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ দেশে মুসল্লিদের ঘরে নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। শুধু মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেমরা মসজিদে নামাজ আদায় করবেন। অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের নিজ নিজ উপসনালয়ে না গিয়ে ঘরে প্রার্থণা করতে হবে। এমন নির্দেশনা জারি করেছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। একই সাথে সারাদেশে ওয়াজ মাহফিলও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
মসজিদের জামাত ও জুমার উপস্থিতি সীমিত রাখার আদেশ ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে সঠিক ও যথার্থ বলে মন্তব্য করেছেন হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক ও হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী। সেই সঙ্গে তিনি সরকার কর্তৃক জারিকৃত নির্দেশনাকে মূল্যায়নপূর্বক তা গ্রহণ করা মানবতার কল্যাণে অপরিহার্য কর্তব্য বলেও জানিয়েছেন।
সোমবার (৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা জানান।
বিবৃতিতে আল্লামা শফী কোরআনে কারিমের কয়েকটি আয়াত উল্লেখ করে বলেন, ইসলাম নিজের বা অন্যের ক্ষতির কারণ হওয়াকে সমর্থন করে না; বরং নিষেধ করে। সর্তকতা ও সচেতনতা ইসলামের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। যেকোনো আশু ক্ষতি থেকে সতর্ক থাকা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান।
মসজিদে না যেয়ে ঘরেই ইবাদত পালনের নির্দেশ
আল্লামা শফী বলেন, বিশ্ব আজ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। আমাদের দেশও বেশ ঝুকিপূর্ণ এবং ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বৈশ্বিক এ মহামারি ইতোমধ্যে দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে। আক্রান্তদের অনেকেই মৃত্যুবরণ করছেন। এ মুহূর্তে আল্লাহর কাছে দোয়া এবং শরিয়তের আলোকে সতর্কতা অবলম্বন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
সতর্কতার জন্য সরকার উলামায়ে কেরামের সঙ্গে পরামর্শ করে, যেকোনো ধরনের বড় জমায়েতকে নিষেধ করেছেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার আদেশ দেওয়ার পাশাপাশি মসজিদে জামাত ও জুমার উপস্থিতিকে সীমিত রাখার আদেশ জারি করেছেন। ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে এসব সতর্কতামূলক নির্দেশনা সঠিক ও যথার্থ। সরকার কর্তৃক জারিকৃত নির্দেশনাকে মূল্যায়ন করা এবং তা উত্তমরূপে গ্রহণ ও পালন করা মানবতার কল্যাণে আমাদের অপরিহার্য কর্তব্য।
তবে সতর্কতা ও ব্যবস্থা গ্রহণই আমাদের একমাত্র কাজ নয়। বরং আমাদের কৃত পাপ ও সমূহ অন্যায় থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। ভবিষ্যতে সকল অপরাধ থেকে দূরে থাকার প্রতিজ্ঞা করে একনিষ্ঠ মনে তওবা করতে হবে। ঘরে বসে দোয়া-ইস্তেগফার ও নফল ইবাদত-বন্দেগিতে মাশগুল থাকতে হবে। যেন আল্লাহতায়ালা অনতিবিলম্বে আমাদের থেকে এ মহামারি তুলে নেন। নিরাপদে জীবন-যাপন করার তওফিক দান করেন। আমাদেরকে ও সারাবিশ্বকে এ মহামারি থেকে প্ররিত্রাণ দেন।
প্রসঙ্গত, ২৯ মার্চ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আহ্বানে এ বিষয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমরা মিলিত হয়ে মসজিদে মুসল্লিদের উপস্থিতি সীমিত রাখার ব্যাপারে সর্বসম্মতভাবে আহ্বান জানিয়েছিলেন। এর পর পরিস্থিতি দ্রুত ভয়ঙ্কর অবনতির দিকে যাচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সর্বোচ্চ পর্যায়ের সকলের সঙ্গে পরামর্শক্রমে নিম্নোক্ত নির্দেশনা প্রদান করা হলো।
এ সময় দেশের কোথাও ওয়াজ মাহফিল, তাফসির মাহফিল, তাবলিগি তালিম বা মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা যাবে না। সবাই ব্যক্তিগতভাবে কোরআন তেলাওয়াত, জিকির ও দোয়ার মাধ্যমে মহান আল্লাহর রহমত ও বিপদ মুক্তির প্রার্থনা করবেন।
অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরাও এ সময়ে কোনো ধর্মীয় বা সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানের জন্য সমবেত হতে পারবেন না।
সকল ধর্মের মূলনীতির আলোকে এবং জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার স্বার্থে এই নির্দেশনা জারি করা হলো। উল্লিখিত নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের পরিচালনা কমিটিকে অনুরোধ জানানা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে।
কোনো প্রতিষ্ঠানে সরকারি এই নির্দেশ লংঘিত হলে প্রশাসন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলেও প্রজ্ঞাপনে বলা হয়।